New Education Policy

জাতীয় শিক্ষা নীতির বিরুদ্ধে অধ্যাপক, শিক্ষকরা

জাতীয়

প্রতীম দে

 

পদ ৭৯৩। আছেন ৩৯৫ জন অধ্যাপক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর বিভাগের ৫৫টি বিভাগের এই হাল।
তৃণমূলের সরকার গুরুত্ব দেয়নি নিয়োগে। তাই এই দুর্দশা নিয়ে পঠনপাঠন চলছে ঐতিহাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্প্রতি রাজ্য সরকার জাতীয় শিক্ষা নীতি অনুসারে স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনা শুরুর পরিকল্পনা করতে নির্দেশ দিয়েছে কলেজগুলিতে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের জাতীয় শিক্ষা নীতির প্রতিবাদ হচ্ছে দেশের অনেক জায়গাতেই। এসএফআই সহ বিভিন্ন সংগঠন তার বিরোধিতা করছে। প্রধানত রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)’র পরামর্শে তৈরি এই শিক্ষা নীতি তৃণমূল সরকার মেনে নিয়েছে। আগামী জুলাই থেকে এই নীতি অনুসারে স্নাতক পর্যায়ের পঠনপাঠন শুরু করার নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির রেজিস্ট্রারের কাছে। কলকাতা বিশ্বিদ্যালয়ও সেই চিঠি পেয়েছে। 
এই নতুন পাঠক্রম শুরু করতে গেলে প্রয়োজন পর্যাপ্ত অধ্যাপক। রাজ্যে সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত কলেজের সংখ্যা ৪৫২। রাজ্যের কলেজগুলিতে অনেক শিক্ষক, অধ্যাপক পদ শূন্য আছে। কিছু ক্ষেত্রে অতিথি শিক্ষকদের দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। কিন্তু তাতে সমস্যা মেটেনি। জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে ৪ বছরের স্নাতক পর্যায়ের পঠনপাঠন শুরু হলে কলেজগুলি আরও সঙ্কটে পড়বে বলেই আশঙ্কা শিক্ষক, অধ্যাপকদের। শুধু কলেজে নয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়তেও ৫৫টা বিভাগে পর্যাপ্ত অধ্যাপক নেই। মানে যতজন থাকার কথা ততজন নেই। ফিজিক্স, স্ট্যাটিসটিক্সের মতো একাধিক বিষয় যা অধ্যাপক সংখ্যা থাকার কথা তা নেই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫টা বিভাগে অধ্যাপক পদের সংখ্যা ৭৯৩। শূন্য পদ ৩৯৮। অর্থাৎ ৫০%-র বেশি পদ শূন্য। 


উদাহরণ হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনি সায়েন্স বিভাগ। এই বিভাগে অধ্যাপক পদ ১০। বর্তমানে পড়াচ্ছেন ৪ জন। বিভাগীয় প্রধান এবং কলকাতা ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের(কুটা) সাধারণ সম্পাদক সনাতন চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘‘শুধু একটা বিভাগ নয়। প্রায় সব বিভাগেই এই সমস্যা রয়েছে। নতুন যেই পাট্যক্রম চালু করার কথা বলা হচ্ছে। তার জন্য আমরা তৈরি নই। তার অন্যতম কারণ পর্যাপ্ত অধ্যাপক না থাকা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কোনও আলোচনা ছাড়াই এই পাঠক্রম চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই পরিকাঠামো কোথায় যে তিন মাসের মধ্যে নতুন একটা জিনিস চালু করা যাবে।’’
একই মত ইতিহাসের অধ্যাপক সৌভিক মুখার্জির। অধ্যাপক মুখার্জির বিভাগে মোট অধ্যাপক পদ ২৫। বর্তমানে রয়েছেন ১০ জন। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর পর থেকে এক বছর স্নাতকোত্তর পড়ানো হবে। কিন্তু তার আগে জুলাই থেকেই কলেজে চার বছরের জন্য স্নাতক শুরু হবে। এই তিন মাসের মধ্যে দ্রুত সিলেবাস তৈরি করা সমস্যার। পরিকাঠামো দরকার। শিক্ষক দরকার। কিন্তু কোথায় সেই সব? টাকা কোথা থেকে আসবে?’’
কলকাতা বিশবিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক পার্থিব বসু জাতীয় শিক্ষা নীতির বিরুদ্ধে সরব। তিনি বলেন, ‘‘নয়া শিক্ষা নীতি মানি না। তাছাড়া আমাদের কোথায় সেই পরিকাঠামো যে এই নতুন পাঠ্যক্রম চালু করা হবে। পর্যাপ্ত লাইব্রেরি কেথায়? সিলেবাস কি হবে?’’ অধ্যাপক বসুর মতে সরকার চাপে পড়ে এই নয়া শিক্ষা নীতি চাপিয়ে দিতে চাইছে। 
উদাহরণ হতে পারে ক্যানিংয়ের বঙ্কিম সরদার কলেজ। ১৯৫৫ সালে তৈরি হয় কলেজ। ইংরেজি, ভূগোল, এডুকেশনের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনও স্থায়ী অধ্যাপক নেই। 
এত পদ খালি, বিভাগীয় প্রধানরা জানাননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে?


কুটার সাধারণ সম্পাদকের কথায়, যে ৫৫টি বিভাগের তালিকা তাঁরা তৈরি করেছেন, তা সম্পূর্ণভাবে অধ্যাপকরা নিজেদের উদ্যোগে তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা নিজেরা এই তালিকা তৈরি করেছি। বিভিন্ন বিভাগের, ক্যাম্পাসের অধ্যাপকরা এই কাজ করেছেন। এই তালিকা কর্তৃপক্ষের কাছে জমাও দিয়েছি। বার বার আবেদন করা হয়েছে খালি থাকা পদ গুলি পুরণ করার জন্য। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও কাজ হয়নি।’’
উল্লেখ্য, এত দিন এসএফআই ড্রপ আউটের কথা বলে এসেছে। এবার সেই আশঙ্কা শোনা গেল অধ্যাপকদের গলাতেও। পার্থিব বসু বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে সিবিসিএস ব্যবস্থা আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেমিস্টার পদ্ধতিতে নিজেদের তৈরি করতে ছাত্র-ছাত্রীদের একটা সমস্যা হয়েছে। অনেকে একটা দুটি সেমিস্টার দেওয়ার পর পড়া ছেড়ে দিয়েছে। উচ্চ শিক্ষায় ড্রপ আউট হয়েছে। কিন্তু এই নতুন নিয়ম ড্রপ আউটকে মান্যতা দিচ্ছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা কমে গেলে কলেজগুলি বন্ধ হয়ে যাবে। আর ঠিক তখন বেসরকারি মালিকদের হাতে কলেজ গুলো তুলে দেওয়া হবে।’’
অধ্যাপক মুখার্জিও ড্রপ আউটের আশঙ্কা উড়িয়ে দেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কখনও বলতে পারিনা যে ড্রপ আউট হবে না। এখনও হচ্ছে। স্নাতকোত্তরে প্রথম দিকে যতজন ভর্তি হচ্ছে ততজন শেষের দিকে আর থাকছে না। ছেড়ে দিচ্ছে। এই নয়া শিক্ষা নীতি ড্রপ আউট আরও বাড়িয়ে দেবে। স্পষ্টভাবে বলা রয়েছে দুই বা তিন বছর পড়ে যে কেউ ছেড়ে দিতে পারে। সেই ক্ষেত্রে শংসাপত্র দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।’’ 
 

Comments :0

Login to leave a comment