সত্যব্রত ভট্টাচার্য
উচ্ছেদ করা চলবে না বস্তির মানুষকে। বসানো চলবে না স্মার্ট মিটার। নয়তো আগামী দিনে আন্দোলনের তীব্রতা আরও অনেকগুণ বাড়বে। এই দাবিতে মঙ্গলবার কলকাতার রানি রাসমণি রোডে সমাবেশ করলেন বস্তিবাসীরা।
পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতির ডাকে এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সারা ভারত কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লা, আইনজীবী ও সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, ডাঃ ফুয়াদ হালিম,, সম্মিলিত বাস্তুহারা পরিষদের রাজ্য সম্পাদক মধু দত্ত, পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক সুখরঞ্জন দে প্রমুখ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি অশোক ভট্টাচার্য।
সংগঠনের প্রধান দাবি, বস্তি উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। বন্ধ করতে হবে স্মার্ট মিটার চালুর প্রক্রিয়া। মাসিক ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ বিনামূল্যে দিতে হবে বস্তিবাসীদের। ব্যবস্থা করতে হবে পূর্ণ নিরাপত্তা ও বিভিন্ন সামাজিক সুযোগ সুবিধার।
হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘একদিকে নির্লজ্জ তৃণমূল সরকার। অন্যদিকে স্বৈরাচারী বিজেপি সরকার। দুই সরকারেরই একই নীতি। বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করে জমি কর্পোরেট ও জমির দালালদের হাতে জমি তুলে দেওয়া। অথচ সরকারের দায়িত্ব বস্তিবাসীদের স্বার্থ রক্ষা করা, শহরাঞ্চলের গরিব মানুষকে সুযোগ সুবিধা দেওয়া।’’
হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘ কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে যেমন পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য করেছিল মোদী সরকারকে, ঠিক একইভাবে এ রাজ্যে তো বটেই গোটা দেশ জুড়ে বস্তিবাসীদের আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে’’
বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ধর্মীয় আসর বসিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করা যায়, অথচ বস্তিবাসী মানুষের জন্য রুটি রুজি, নিরাপত্তা, সামাজিক সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা যায় না।’’ তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালন করছে না। এককাট্টা হয়ে তীব্র লড়াই করতে হবে।’’
ডাঃ ফুয়াদ হালিম বলেন,‘‘ কেন্দ্র বুলডোজার নীতি নিয়ে এসেছে গরিব মানুষের ছাদ কেড়ে নেওয়ার জন্য। বিদ্যুতের লাইন না কাটতে পেরে এখন স্মার্ট মিটার বসাচ্ছে যাতে বিদ্যুতের দাম বাড়ে। বস্তিবাসীরা না থাকলে কিন্তু শহরও বাঁচবে না।’’
সুখরঞ্জন দে বলেন, ‘‘বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে বস্তিবাসীদের অধিকারকে মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। এখন কৌশলে ঢোকানো হচ্ছে প্রোমোটারদের। আক্রমণ নামছে বস্তিবাসীদের ওপর। এর বিরুদ্ধে আমাদের আরও সংঘবদ্ধ হতে হবে।’’ বস্তি আন্দোলনের নেত্রী বাসন্তী মুন্ডা বলেন, ‘‘আমরা কোথাও যাব না, উচ্ছেদ করা যাবে না আমাদের। দরকারে রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ করব আরও বেশি করে।’’
সভাপতির ভাষণে অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বস্তিবাসীদের রেশন কার্ড আছে, ভোটার কার্ড আছে। তারপরেও কেন তাঁদের উচ্ছেদ হতে হবে। বরং এই গরিব মানুষদের গৃহনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা উচিৎ দুই সরকারেরই। যাঁরা ২০ বছর ধরে সরকারি বা আসা সরকারি জমিতে, চা বাগানে, রেল লাইনের ধারে, বনাঞ্চলে বসবাস করছেন তাঁদের ৯৯ বছরের লিজ বা পাট্টা দিতে হবে- এই আমাদের বক্তব্য। ভাষাগত ও জাতিগতভাবে বস্তিবাসীদের মধ্যে বিভাজন করা চলবে না।’’
Comments :0