Shaan trolled by right wing

কেন নমাজ পড়ার ভঙ্গিতে ছবি? এবার হিন্দুত্ববাদীদের রোষানলে শান

জাতীয়

ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে এবার সাম্প্রদায়িক রোষানলে পড়লেন সঙ্গীতশিল্পী শান। ত্রিপুরার ছোট্ট জনপদের এক ব্লগার ঈদের শুভেচ্ছার ভিডিওতে মুসলিম যুবক সাজার জন্য শনিবার রাতেই বিজেপি নেতা-কর্মীরা তাঁকে মারধর করে। সোমবার জানা গেল তুলনায় অপরিচিত ব্লগার বাপন নন্দীই নন, হিন্দুত্ববাদীদের কট্টরতার শিকার শানের মত প্রখ্যাত শিল্পীও। 
মুসলিমদের মতো সেজে কেন তিনি সামাজিক মাধ্যমে ছবি দিয়েছেন? কেনই বা নমাজের ভঙ্গিতে বসেছেন? এমনই হাজারো প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে শানকে। দেশের সংস্কৃতি নিয়েও জ্ঞান শোনানো হয়েছে। ঠিক কী কী বাক্যবাণে বিদ্ধ হয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী, তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়নি। কারণ, ইনস্টাগ্রামে তাঁর ওই পোস্টের কোনও কমেন্টই দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু তাঁর একটি লাইভ ভিডিও’য় বলা কথা থেকে সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে, কতটা বিরূপ আচরণের শিকার তিনি। 
যে ছবিটি শান তাঁর ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে শেয়ার করেন, সেখানে তাঁকে নমাজ পড়ার ভঙ্গিতেই দেখা গিয়েছে। শান স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিন বছর আগে ‘করম কর দেই’ নামে একটি মিউজিক ভিডিও বানিয়েছিলেন তিনি। সেই ভিডিও’র প্রয়োজনে এমন সেজেছিলেন। তার স্ক্রিনশট নিয়েই পোস্ট করেন ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে। তাতেই তাঁকে আক্রমণ করা হয়।
এই ঘটনার প্ররিপ্রেক্ষিতেই ইনস্টাগ্রামে লাইভ করেন শান। বলেন, ‘‘আমি কোনও সাফাই দিতে এই লাইভ করছি না। প্রথমে ভেবেছিলাম উপেক্ষা করবো, তারপর মনে হল বিষয়টা আরও একটু এগিয়ে বলা উচিৎ। তিনি বলেন, এ নিয়ে আরও কিছু কথা বলতে চাই, তাই এই নিয়ে লাইভ করছি। যদি কোনও অনুষ্ঠান বা কোনও মুহূর্তকে তার মতো করে শ্রদ্ধা জানানো হয়, তাহলে এতে সমস্যা কোথায়? কিছুদিন আগে স্বর্ণমন্দিরে গেছিলাম। সেখানে ঢুকতে গেলে তো মাথা কাপড় দিয়ে ঢেকে যেতে হয়। সেভাবেই গেছিলাম। সেখানেও শ্রদ্ধা জানানোর ভঙ্গিমায় ছবি দিয়েছিলাম। কই কেউ তো আপত্তি করেননি। বলেননি কেন হিন্দু হয়ে শিখদের ধর্মস্থানে গেছি। তাহলে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোয় এই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে কেন? তিনি বলেন, ভারত বিকাশের দিকে এগচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে আমরা রয়েছি। ভারত তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিচ্ছে। এই সময়েও এখনও এইরকম পিছিয়ে পড়া ধারনা নিয়ে আমরা চলবো? এই প্রশ্নের পাশাপাশি আরও এককদম এগিয়ে এই ধর্মান্ধদের উদ্দেশ্যে তাঁর পরামর্শ, যারা এই ধরনের মনোভাব রাখেন, তাদের বিবেচনা করা উচিৎ যে আমাদের কি হয়েছে, কেন আমরা এইরকম করে ভাবছি! 
শান বলেছেন, কিছু পোস্ট করলে যেমন আমার বিশ্বাস বদলে যাবে না, তেমনই আপনাদেরটাও বদলে যাবে না। তাহলে কেন এত শোরগোল করা হচ্ছে? আমরা একটা প্রগতিশীল রাষ্ট্রে বাস করি। যদি অন্য ধর্মবিশ্বাসের প্রতি আমরা এতটুকুও সহিষ্ণু না হতে পারি, তাহলে আমরা এগবো কী করে? এগুলো নিয়ে মানুষ ভাবুক, আমি চাই। আমি একজন হিন্দু ব্রাহ্মণ ঠিকই, কিন্তু আমি একজন মানুষ। আমি একজন ভারতীয়। আমি জানি কীভাবে সমস্ত সংস্কৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে হয়। কিভাবে সমস্ত উৎসব সম্মিলিতভাবে উদ্‌যাপন করতে হয়।’’ 
শান বলেন, ‘‘আমি মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় বড় হয়েছি। সেখানে তো খ্রিস্টান এবং মুসলিমদের মধ্যেই বেড়ে উঠেছি। আমার বেশিরভাগ বন্ধু মুসলিম। তাদের সঙ্গে মেলামেশায় কখনও এইরকম মনেই হয়নি যে আমরা আলাদা কিছু। এখন এত বছর পরে এইধরনের ঘটনা দেখে খারাপ লাগছে যে এইধরনের বিভেদমূলক মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরকম বিভেদমূলক কথা বলে আপনারা একে অপরকে আঘাত করছেন। এ দেশে গণতন্ত্র আছে। আমাদের আরও বেশি করে সবাইকে নিয়ে চলা উচিত। শুধু একটা সুন্দর দেশ নয়, সুন্দর পৃথিবী তৈরি হবে তাহলে।’’ ম্যাঙ্গালোরে একটি অনুষ্ঠানের ফাঁকে ওই কমেন্টগুলি দেখে খানিকটা হতাশই হন সঙ্গীতশিল্পী। তারপরই এই লাইভ করেন তিনি। শান বলেন, যারা এইধরনের চিন্তা নিয়ে থাকেন তাদের মনোভাব তো আমি বদল করতে পারবো না। একইসঙ্গে দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়ে দেন, কিন্তু আমিও নিজের মনোভাব বদলাবো না। কারণ আমি জানি আমার মনোভাব সঠিক। শিল্পী বার্তা দেন, একে অপরকে শ্রদ্ধা করুন, ভালো বাসুন। তাহলেই প্রকৃত জীবন যাপন করতে পারবেন। উল্টে বিভেদের, মেরুকরণের চিন্তায় শুধু লোকসানই হতে পারে। যে দেশ ধর্মের ভিত্তিতে চলতে চেয়েছে তাদের কিছু অগ্রগতি হয়নি। গণতান্ত্রিক কাঠামোই তা সম্ভব হয়েছে। আমাদের নিজেদের চিন্তায় বদল আনা প্রয়োজন। তিনি বার্তায় ফের ঈদের শুভেচ্ছা জানান। অক্ষয় তৃতীয়া এবং পরশুরাম জয়ন্তীর কথাও বলেন। 
শিল্পীর এই ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাভাবনায় খুশি হয়েছেন তাঁর ভক্তদের অনেকেই। একজন লেখেন, ‘‘প্রকৃত ভারতীয়ের মতো কথা বললেন আপনি।’’ আরেকজন বলেন, ‘‘এসব নিয়ে ভাববেন না। ঈদ মুবারক।’’ 
 

Comments :0

Login to leave a comment