sujan chakraborty

জনতার জন্যই রাজনীতি করে বামপন্থীরা: চক্রবর্তী

রাজ্য

ছবি - অভিজিত বসু।

দেশকে, বাংলাকে রক্ষা করতে লড়াই দরকার। পরের প্রজন্মকে গড়ে তুলতে এই কাজ আমাদের করতে হবে। সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী রবিবার বেলঘরিয়াতে একথা বলেন। সিআইটিইউ অন্তর্গত  বেলঘরিয়ার শ্রমিক ইউনিয়ন সমূহ আহুত আলোচনা সভাতে তিনি বক্তব্য রাখেন রবিবার। বিষয় ছিলো, "শ্রমজীবী জনগণ ও আজকের ভারত’। প্রয়াত কমরেড বীরু বসু স্মরণে বেলঘরিয়ার ডালিয়া সুইটস মোড়ে আলোচনা সভাটি হয়।
তিনি বলেছেন, বামপন্থীদের রাজনীতি মানে মানুষের জন্য রাজনীতি। বিজেপি বা তৃণমূলের মতো ধনী এবং কর্পোরেট তোষণের রাজনীতি বামপন্থীরা করে না। জনতার জীবনের স্বার্থেই বামপন্থী বিকল্প গড়ার আহ্বান জানান তিনি। 
স্বাধীনতা আন্দোলনে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ধারা, বিপ্লববাদী বা বিদ্রোহী ধারা এবং সংগঠিত গণ আন্দোলনের ধারার কথা উল্লেখ করে সুজন চক্রবর্তী বলেন,  বিপ্লববাদী ধারার অনুগামীরা পরে মার্কসবাদী চিন্তায় উন্নীত হয়েছিলেন এবং বামপন্থী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।
জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে কি ভাবে শ্রমিক কৃষকদের সপক্ষে কথা উঠে আসে, কিভাবে প্রথম পরাধীন ভারতে পরিকল্পনা কমিটি এবং ধর্ম নিরপেক্ষ স্বাধীন সার্বভৌম সরকার গঠনের কর্মসূচি নেওয়া হয় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে তিনি বলেন, জন্মের পর থেকে আরএসএস’র উপর কখনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। জেলে যেতে হয়নি আরএসএস’র কর্মী-নেতাদের। আরএসএস অপেক্ষায় থেকেছে কিভাবে বাংলাকে ভাগ করা যায়।
জোট নিরপেক্ষতা, ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকে দেশ গড়ার নীতিতে কিভাবে প্রভাব ফেলেছে তার উল্লেখ করেছেন চক্রবর্তী। আরএসএস নিয়ন্ত্রিত নরেন্দ্র মোদী সরকার কিভাবে সেই নীতিকে লঙ্ঘন করছে সেকথাও তুলে ধরেন সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, বর্তমান ভারতবর্ষে স্বচ্ছতা , সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার মান নিচের দিকে, দারিদ্র্য গ্রাস করছে দেশকে।
মোদী সরকারের বদন্যতায় কিভাবে আদানী গোষ্ঠীকে স্ফীত করে পৃথিবীর দু নম্বর ধনীতে পরিণত করা হয়েছে সেকথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ভারতবর্ষে করদাতাদের প্রথমে কিন্তু তারা নেই। দেশকে লুন্ঠন করছে তারা। ২৯ জন ভারতীয় ধনীকে ব্যাঙ্ক লুট করে বিদেশে পালিয়ে যেতে দেওয়া হলো, বিপরীত দিকে দেশে বাড়ছে বুভুক্ষা,  দুর্দশা,  আত্মহত্যা।
দেশের নীতি নিয়ম বরবাদ করে কিভাবে নরেন্দ্র মোদী ইজরায়েলের মর্যাদা রক্ষা করতে আগ্রহী সেকথা উল্লেখ করে সুজন চক্রবর্তী বলেন , শ্রমজীবী মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে শ্রম কোড চালু করছে মোদী সরকার।  জাতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রাত্তশিল্প গড়ে তোলা  হয়নি। হয়েছে রাম মন্দির। যা করার জন্য কোনো সরকারের প্রয়োজন হয় না। তার উদ্বোধনে আমন্ত্রিত মানুষের মধ্যে আছেন আদানি, আম্বানিরা। আপরদিকে রাজ্যের তৃণমূল সরকার জগন্নাথ মন্দির তৈরি করছে অথচ শিল্পের জন্য জমি দিতে পারছে না। সুজন চক্রবর্তী কটাক্ষ করে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, তাঁর সাথে পাহাড়ের নাকি রক্তের সম্পর্ক হয়ে গেছে। তাই সেখানে তিনি ঢালাও ভাবে নানান কাজ করবেন। তাহলে বাকি যেখানে তাঁর সাথে রক্তের সম্পর্ক হয়নি সেখানে কোনো কাজ হবে না! 
কাজের খোঁজে রাজ্য ছেড়ে ভিন রাজ্যে চলে যেতে বাধ্য হওয়ার কথা, ওয়ার্ক ফ্রম হোমের নামে এবং সংস্থাতেও এমনকি  তথ্য প্রযুক্তি কর্মচারীদেরও শ্রম আইন বহির্ভূত ভাবে খাটানোর কথা উল্লেখ করে সুজন চক্রবর্তী বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিক্ষা প্রসার পরিকাঠামো থেকে হলদিয়া পেট্রো কমপ্লেক্স, আইটি হাব,  লেদার কমপ্লেক্স তৈরি করেছিলো বামফ্রন্ট সরকার। কারণ, বামপন্থীরা মনে করে রাজনীতি মানে মানুষ।
আলোচনাসভাটি এদিন বিরাট জনসভার রূপ নেয়। সুজন চক্রবর্তী ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) নেতা তড়িৎ বরণ তোপদার, সুভাষ মুখার্জি, মানস মুখার্জি। সভাপতি ছিলেন ঝন্টু মজুমদার।

 

Comments :0

Login to leave a comment