Israel Palestine War

বোমাবর্ষণে গাজায় নিহত ২৯০০ শিশু

আন্তর্জাতিক

 ২০ দিনের ইজরায়েলী বোমাবর্ষণে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃতদের মধ্যে ২৯১৩ জন শিশু। ইজরায়েল দাবি করছে, তারা শুধু হামাসের ঘাঁটি ও পরিকাঠামো লক্ষ্য করেই বিমানহানা চালাচ্ছে। অথচ এযাবৎ ২ লক্ষের বেশি বাড়ি পুরোপুরি বা আংশিক ভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজার ৪৫ শতাংশ বাড়িঘরই বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ২১৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বোমা ফেলা হয়েছে, এর মধ্যে ২৯টি রাষ্ট্রসঙ্ঘের সংস্থা পরিচালিত। ১০১জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। ২৪টি হাসপাতাল বোমাবর্ষণে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। গাজার মোট ২৩ লক্ষ অধিবাসীর ১৪ লক্ষই গৃহচ্যুত হয়ে রয়েছেন। 
গণহত্যার এই অভিযানের পরবর্তী ধাপ হিসাবে ইজরায়েলী সেনারা বুধবার রাতে ট্যাঙ্ক নিয়ে গাজায় ঢুকে আক্রমণ চালিয়েছে। তারা ট্যাঙ্ক থেকে গোলা ছাড়াও রকেট ছুঁড়েছে। ইজরায়েলের তরফে এই হানাকে ‘নিয়ন্ত্রিত স্থল যুদ্ধ’ এবং পরবর্তী হানার প্রস্তুতি বলে দাবি করা হয়েছে। একই সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫০টি বিমান হানা হয়েছে বলে তাদের তরফেই দাবি করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক হাজার সেনা নিয়ে একই সঙ্গে আকাশ, সমুদ্র ও মাটি থেকে ইজরায়েল গাজার সম্পূর্ণ দখল নেবার অভিযান শুরু করবে। 
ইজরায়েলের এই আগ্রাসনকে একদিকে মদত, অন্যদিকে রক্ষাকবচ জোগাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন ও তাদের পশ্চিমী মিত্ররা। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে সংঘর্ষবিরতির আরেকটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে আমেরিকা। আমেরিকা একটি পালটা প্রস্তাব আনার কথা বললেও তাতে অন্যরা রাজি হয়নি। সেই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ইজরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার স্বীকার করেই মানবিক কারণে কিছুক্ষণের জন্য বিরতি দেওয়া হোক। রাশিয়া ও চীন এই প্রস্তাবে ভোটাভুটির আগেই আপত্তি জানায়। উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৮ অক্টোবর কিছুক্ষণের জন্য বিরতির প্রস্তাবেও ভোটে দিয়েছিল। বস্তুত, ১৯৫৪ থেকে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন প্রশ্নে ৩৪ বার ভেটো দিয়েছে আমেরিকা। প্রতিবারই ইজরায়েলকে রক্ষাকবচ দিতে। এছাড়াও লেবানন, সিরিয়ার গোলান হাইটসের মতো প্রশ্নে আমেরিকার ভেটো গণনা করলে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে ৪৬ বার রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রস্তাব নস্যাৎ করেছে আমেরিকা। 
মার্কিন প্রশাসনের মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের কথাতেই। ওয়াশিংটনে সাংবাদিক সম্মেলনে বাইডেন বলেছেন, ‘আমি জানি নির্দোষ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু ওরা যুদ্ধ শুরু করেছে, তার মূল্য দিতে হচ্ছে।’ শুধু গাজায় নয়, অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ইজরায়েলী সেনা ও ইজরায়েলের বানানো বসতি থেকে লাগাতার হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। সে-কথা খেয়ালে রেখেই বাইডেন এদিন বলেছেন, ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে বসতি থেকে আক্রমণ বন্ধ হওয়া উচিত। উগ্রপন্থীদের আক্রমণে আগুনে গ্যাসোলিন ঢালার শামিল। কিন্তু ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ইজরায়েলী সেনাদের আক্রমণ, শত শত প্যালেস্তিনীয়কে গ্রেপ্তার করার বিষয়ে মুখ খোলেননি বাইডেন। ইজরায়েলের স্থল আক্রমণ বন্ধ করার জন্য তিনি কোনও চেষ্টা করেছেন কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরে বাইডেন বলেন, না, এমন কোনও দাবি আমি করিনি। নেতানিয়াহুকে বলেছি যদি সত্যিই ওইভাবে কাজ হয় তাহলে তা করতে। 
বাইডেন এদিন বলেন, ইজরায়েলের সঙ্গে ওই অঞ্চলের অন্য দেশগুলির সম্পর্ক স্বাভাবিক হচ্ছিল। আমার ধারণা তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতেই হামাস আক্রমণ চালিয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনও প্রমাণ নেই কিন্তু আমার বুদ্ধি তাই বলছে। আবার, বাইডেনের এই মন্তব্যকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একাংশ ফলাও করে প্রচার করে দাবি করেছে, সম্প্রতি জি ২০ বৈঠক থেকে ভারত-সংযুক্ত আরব আমীরশাহী-ইজরায়েল হয়ে ইউরোপে পণ্য পরিবহণের যে করিডরের কথা বলা হয়েছে, হামাসের আক্রমণ সেই করিডরকেই ক্ষতিগ্রস্ত করতে। যদিও এমন কোনও উল্লেখ বাইডেনের কথাতে ছিল না। 
আরব দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীরা বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে গাজায় নাগরিকদের ওপরে আক্রমণ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের নিন্দা করেছেন। বাহরিন, মিশর, জর্ডান, কুয়েত, মরক্কো, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমীরশাহীর বিদেশমন্ত্রীরা বলেছেন, আত্মরক্ষার অধিকারের অর্থ এই নয় যে আইন লঙ্ঘন ও প্যালেস্তিনীয়দের অধিকার লঙ্ঘন করা যাবে। গাজার মানুষকে বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য করা হচ্ছে। 
এদিকে, হামাসের এক শীর্ষপদস্থ প্রতিনিধিদল মস্কোয় গেছে। সংবাদ সংস্থা জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন হামাসের নেতা আবু মারজুক। ইরানের উপবিদেশমন্ত্রী আলি বাঘিরি কানিও মস্কোয় রয়েছেন বলে রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment