ADANI SCAM

শিখণ্ডি সংস্থার বেআইনি লেনদেন, ফের ফাঁসল আদানিরা

জাতীয়

শিখণ্ডি সংস্থাকে দিয়ে নিজেদের শেয়ার কিনিয়ে মূলধনী বাজারের সংস্থার শেয়ারের দাম চড়ানোর আরো এক কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে গেল আদানি গোষ্ঠী। নতুন এই তথ্য ফাঁস করেছে অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশান রিপোর্টিং প্রোজেক্ট’ ( ওসিসিআরপি)। তারা অন্তর্তদন্তকারী সাংবাদিকদের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। গার্ডিয়ান ও ফাইনান্সিয়াল টাইমস পত্রিকায় বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হবার পরে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। কিছুদিন আগেই হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে সমধর্মী একটি অভিযোগ প্রকাশের পরে এই নতুন অভিযোগে আদানিদের শেয়ারের দাম দ্রুত পড়ে গেছে। 

ওসিসিআরপির প্রতিবেদন অনুযায়ী আদানি গোষ্ঠীরই সম্পর্কিত দুই বিনিয়োগকারী চাঙ চুঙ-লিন এবং নাসের আলি শাবান আহলি মরিশাসব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসংযুক্ত আরব আমীরশাহীতে চারটি শিখন্ডি সংস্থা খুলেছিল। এই দুজনের তহবিল নিয়ন্ত্রণ করতেন গৌতম আদানির বড় ভাই এবং আদানি গোষ্ঠীর ডিরেক্টর বিনোদ আদানি। এই ফান্ড থেকে লক্ষ লক্ষ ডলার জমা হয়েছে বারমুডার বিনিয়োগ সংস্থা গ্লোবাল অপর্চুনিটি ফান্ডে। এই সংস্থা থেকে টাকা ফিরে বিনিয়োগ করা হয়েছে ভারতের শেয়ার বাজারে। আদানিদের সংস্থার শেয়ার কেনা হয়েছে সেই টাকায়। আরো একটি জটিল প্রক্রিয়ায় গ্লোবাল অপর্চুনিটি ফান্ড আরো দুটি ফান্ডে বিনিয়োগ করেছে। ইমার্জিং ইন্ডিয়া ফোকাস ফান্ড এবং ইএম রিসার্জেন্ট ফান্ড নামের দুই সংস্থা আবার ভারতে আদানিদের সংস্থায় বিনিয়োগ করেছে। আদানি এন্টারপ্রাইজেসআদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকনমিক জোনআদানি পাওয়ার, আদানি ট্রান্সমিশন-এই চার সংস্থাতেই বিনিয়োগ হয়েছে বেশি। এক কথায়নিজেদেরই অর্থ দেশের বাইরে থেকে বিনিয়োগ করিয়ে শেয়ার বাজারে কূটকৌশল করেছে আদানিরা। এইভাবে বিনিয়োগ শুধু রীতিবিরুদ্ধই নয়বেআইনি। প্রোমোটার গোষ্ঠীর বিনিয়োগ হিসেবে এই বিনিয়োগ বিবেচিত হলে তা আরো অনেক নিয়ম লঙ্ঘন করছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রোমোটারের অংশ থাকতে পারে ৭৫ শতাংশ। বাকি ২৫ শতাংশ শেয়ার মূলধনী বাজারে কেনাবেচার জন্য রাখতে হয়। পরিভাষায় ফ্রি ফ্লোট। বিনোদ আদানি যে প্রোমোটার তা আদানি গোষ্ঠী স্বীকার করেছে। তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন ফান্ডের বিনিয়োগ ২৫ শতাংশের বাধ্যতামূলক নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। এরই সঙ্গে চাঙ চুঙ-লিন এবং নাসের আলি শাবান আহলিও আদানি গোষ্ঠীর কোম্পানিতে ডিরেক্টর। তাঁদের সরাসরি বিনিয়োগও এক্ষেত্রে বেআইনি। এই চার সংস্থার বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি হয়েছে ২০১৩ থেকে ২০১৮র মধ্যে। যখন আদানিদের শেয়ার এবং সম্পত্তি চড়চড় করে বেড়েছে। 

হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট প্রকাশের পরে হই চই হওয়ায় অভিযোগ অস্বীকার করেছিল আদানিরা। এমনকি ভারতের ওপরে পরিকল্পিত আক্রমণ’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল সেই রিপোর্টকে। অথচ নতুন প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে এই চার সংস্থাই গোপনে কাজ করেছে। তারা ঘোষিত অনুমতি নেয়নি। এই কোম্পানিগুলি দুধরনের অ্যাকাউন্ট বানিয়েছে। একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দেওয়ার জন্য অন্যটি নিজেদের হিসাবের জন্য। এটি স্রেফ জালিয়াতি। 

প্রতিবেদনে আরো দেখা যাচ্ছে ২০১৪-র জানুয়ারিতে ভারতের তদানীন্তন রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগের অধিকর্তা এমন সন্দেহজনক লেনদেন নিয়ে সেবি-কে চিঠি দিয়েছিলেন। আদানিরই টাকা বিদেশ ঘুরে আদানির শেয়ার কেনা এবং বেচায় যুক্ত বলে সেই চিঠিতে অভিযোগ ছিল। সেবি খোঁজখবর শুরু করে। কিন্তু সেই বছরেই প্রধানমন্ত্রী হন মোদী। সেবির তদন্তও ধামাচাপা পড়ে। উল্লেখ্যহিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্ত কমিটি হয়। সেই তদন্ত কমিটিকেও অস্পষ্ট রিপোর্ট দিয়ে সেবি বলে১৩টি বিদেশি সংস্থা সম্পর্কে অনুসন্ধান হয়েছে কিন্তু তা একটা জায়গায় গিয়ে থেমে গেছে। সেবি আদানিদের বিরুদ্ধে তদন্তে সক্রিয় নয় বলেই অভিযোগ উঠেছে। 

এদিন আদানি গোষ্ঠী নতুন অভিযোগ যথারীতি অস্বীকার করেছে। তাদের ব্যাখ্যায় এই রিপোর্ট হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টেরই নকল মাত্র। কিন্তু বিরোধীরা এই ঘটনায় ফের আদানি গোষ্ঠী এবং তাদের রাজনৈতিক মদতদাতা নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে।

Comments :0

Login to leave a comment