Subhrajit Chatterjee

৩ বছর পর বিচার পেল মৃত শুভ্রজিতের পরিবার

রাজ্য

Subhrajit Chatterjee


রাজ্যের বেহাল সাস্থ্যব্যাবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করে আদালতে তিনবছর পর বিচার পেল ইছাপুর আনন্দমঠের বাসিন্দা শ্রাবনী চ্যাটার্জী ও বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জী। তাদের একমাত্র সন্তান ১৮ বছরের মেধাবী ছাত্র শুভ্রজিত চ্যাটার্জীর মৃত্যুর জন্য রাজ্য সরকারের হাসপাতাল ও বেলঘরিয়ার মিডল্যান্ড নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের চুড়ান্ত গাফিলতিকে দায়ী করেন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। এই পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দেওয়ার জন্য তিনটি সরকারী হাসপাতাল ও মিডল্যান্ড নার্সিংহোমকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কলকাতা হাইকোর্টের মহামান্য বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য রায় দিতে গিয়ে এই কথা উল্লেখ করেন। 


২০২০ সালের ১০ জুলাই ইছাপুরের আনন্দমঠের বাসিন্দা বারো ক্লাসের মেধাবী ছাত্র শুভ্রজিত চ্যাটার্জী ভোরবেলা অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেই সময় তার বাবা বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জী ও মা শ্রাবনী চ্যাটার্জী ছেলেকে নিয়ে প্রথমে কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেড নেই বলে ভর্তি করে নি। এরপর অসুস্থ সন্তানকে কামারহাটি সাগরদত্ত হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেও বেড নেই বলে ফিরিয়ে দেয়। এরপর বেলঘরিয়ার মিডল্যান্ড নার্সিংহোমে ভর্তির জন্য নিয়ে যায়। সেখানে শুভ্রজিতের শরীর থেকে রক্ত পরীক্ষার জন্য নিয়ে যায়। এক মিনিট বাদে একটি সাদা কাগজে লিখে পরিবারকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে শুভ্রজিতের কোভিড হয়েছে। এখানে ভর্তি হবে না। এরপর সেখান থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে একটি আম্বুলেন্স করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চার ঘণ্টা আম্বুলেন্সেই অসুস্থ অবস্থায় শুভ্রজিত পড়ে থাকে।

 হাসপাতাল থেকে বলা হয় বেড নেই। তার অবস্থা ক্রমশ সঙ্কটজনক হয়ে যায়। বারো ঘন্টা পার হয়ে গেলেও কোনো হাসপাতালে সন্তানকে ভর্তি করতে পারে নি। আম্বুলেন্সের মধ্যে পড়ে থেকে ছেলে ক্রমশ নিস্তেজ হতে থাকে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার সময় মা শ্রাবনী চ্যাটার্জী ছেলেকে ভর্তি না করলে সুপারের ঘরের সামনে গায়ে আগুন দিয়ে আত্বাহত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। রাত সাতটার পরে অবশেষে তাকে ভর্তি করা হয়। কিন্ত দেড় ঘণ্টা বাদেই শুভ্রজিত মারা যায়। হাসপাতালে শুভ্রজীতের কোনো কোভিড পরীক্ষা ছাড়াই কোভিডে মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়। শ্রাবনী চ্যাটার্জী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কোভিড রিপোর্ট দেখতে চাইলে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারে নি। তিনি বলেন আমার ছেলের কোভিড হয় নি। তিনটি সরকারি হাসপাতাল ঘুরেও সঠিক সময়ে হাসপাতালে ভর্তি না করতে পারার জন্য বিনা চিকিৎসায় এই ছাত্রটি মারা যায়। এই বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সাস্থ্য কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়। সাস্থ্যকমিশনের পক্ষ থেকে শুভ্রজিতের মৃত্যুর জন্য বেলঘরিয়ার মিডল্যান্ড নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করে। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মিডল্যান্ড নার্সিংহোম হাইকোর্টের দ্বারস্ত হয়। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশে শুভ্রজিতের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্ত সহ ভিসেরা রিপোর্টে তার শরীরে কোভিড হয় নি বলে পরিবারকে জানিয়ে দেয়। এরপর শুভ্রজিতের পরিবারের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের হাসপাতাল ও মিডল্যান্ড নার্সিংহোম এর বিরুদ্ধে সাস্থ্যকমিশনে অভিযোগ করেন। সাস্থ্যকমিশন মিডল্যান্ড নার্সিংহোম কে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করে। সেই টাকা শুভ্রজিতের পরিবারকে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে মিডল্যান্ড নার্সিংহোম হাইকোর্টের দ্বারস্ত হয়। মঙ্গলবার বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। শুনানিতে দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর কমিশনের নির্দেশই বহাল রাখল হাইকোর্ট।


শুভ্রজিতের মা শ্রাবনী চ্যাটার্জী বলেন , রাজ্যের বেহাল সাস্থ্যব্যাবস্থার শিকার আমার একমাত্র সন্তান। তিন বছর পর বিচার পেলাম। আইন আদালতের ওপর আস্থা ছিল। আমার সন্তানের কোভিড হয় নি। অথচ তার কোভিড হয়েছে বলে দেওয়া হয়েছে। আমার সন্তানকে আর কোনদিন ফিরে পাবো না। এই ঘটনায় দোষীদের কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি চাই। তিনি বলেন, আমি রাস্তায় যেভাবে লড়াই করছি, এইভাবেই আর কোনো মা কে যাহাতে সন্তানহারা না হতে হয় সেই লড়াই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত করে যাব।

Comments :0

Login to leave a comment