Farmers deprived

কৃষি থেকে আয় বৃদ্ধির হার শূন্য

জাতীয়

 প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, ২০২২-এর মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হবে। বাস্তবে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে কৃষি থেকে আয়ের কোনও বৃদ্ধিই হয়নি। বৃদ্ধির হার শূন্য শতাংশ। ২০১৬-১৭’র পরে এই প্রথম এই রকম ঘটনা ঘটলো। কৃষকের আয় যেমন এক শতাংশও বাড়েনি তেমনই কৃষিমজুরের মজুরিও স্থির হয়ে রয়েছে। দুই ঘটনা মিলে একদিকে কৃষির সঙ্কট সূচিত করছে, অন্যদিকে গ্রামীণ চাহিদা দারুণভাবে কমে এসেছে। 
দু’দিন আগেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আর্থিক কমিটির বৈঠকের পরে গভর্নর শক্তিপদ দাস আশার কথা শোনাচ্ছিলেন। ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির হার কত হবে, তা নিয়ে পূর্বাভাস দিচ্ছিলেন। কৃষির কথা বলেছেন একবারই। রবি শস্যের সম্ভাব্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং তার ফলে চাহিদা বাড়বে। কিন্তু তিনি সযত্নে এড়িয়ে গেছেন কৃষিপণ্যের দাম কীভাবে পড়ছে, কৃষকের আয় কীভাবে কমছে। 
২০২২-এ প্রধানত ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য দেশে দানাশস্যের দাম কিছু বেড়েছিল। কৃষকরা অল্প হলেও দাম পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০২৩-এ প্রায় সব কৃষিপণ্যের মাঠের ও মান্ডির দাম কমেছে। অর্থাৎ কৃষকরা যে দামে ফসল বিক্রি করেন তা কমেছে। ডাল এবং তৈলবীজ ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের থেকেও কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এ বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে আলু, পেঁয়াজ, টমেটোর দামে বড় রকমের ধস নামে। উৎপাদন খরচের থেকে অনেক কম দামে এইসব ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন কৃষক। বহু জায়গায় কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে, এক কুইণ্টাল টমেটো কৃষি বাজারে বয়ে নিয়ে এসে ২ টাকা ফেরত নিয়ে গেছেন কৃষক। পশ্চিমবঙ্গের মতো আলু উৎপাদনকারী রাজ্যে মাঠে আলুর দাম কেজি প্রতি ২ টাকাও পাননি কৃষকরা। এর ওপরে শীতের সময়ে চাষ করা ফসল ঘরে তোলার সময়েই দেশের বহু জায়গায় মরশুমের বাইরে বৃষ্টি হয়েছে, বড় রকমের ঝড়ে ক্ষতি হয়েছে। প্রধানত গম, ছোলা, সর্ষে নষ্ট হয়েছে মাঠে। এর ফলেও কৃষকের আয় কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 
মাঠে ফসলের দাম (অর্থনীতির পরিভাষায় ফার্ম গেট প্রাইস) ভয়ঙ্কর হারে কমছে। ফেব্রুয়ারিতে তরিতরকারির পাইকারি মূল্য গত বছরের তুলনায় ২২ শতাংশ কমেছে। পেঁয়াজের দাম কমেছে ৪০ শতাংশ। তৈলবীজের দাম কমেছে ৭ শতাংশ। ডালের দাম বেড়েছে, তবে ২ শতাংশ। দানাশস্যের দামে বৃদ্ধির হার রয়েছে কিন্তু তা কৃষকের লাভ হচ্ছে বলে নয়। দানাশস্যের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সরবরাহে টান পড়েছে বলে। বড় অংশের কৃষকের এ থেকে কোনো আয়ই হচ্ছে না, বৃদ্ধি তো দূরের কথা। 
ক্রাইসিল রিসার্চের ইন্ডিয়া আউটলুক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে মার্চে। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে কৃষকের আয় বৃদ্ধির কোনও লক্ষণ নেই। এখনও ভারতবাসীর দুই-তৃতীয়াংশ গ্রামে থাকেন। এর মধ্যে কৃষিতে যুক্ত পরিবারগুলির ৪৩ শতাংশের আয় হয় কৃষি ফসল থেকে। মজুরির ভিত্তিতে আয় হয় ৩৪ শতাংশের। কৃষির সঙ্গে যুক্ত নয় এমন পরিবারগুলির আয়ের ৫৪ শতাংশ আসে মজুরি থেকে। একটানা কৃষি থেকে আয় এবং মজুরির হার একই জায়গায় থেকে যাওয়ায় পরিবারগুলি কম পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। খাদ্য-বহির্ভূত পণ্য ক্রয় কমে গেছে। গ্রামে ভোগ্যপণ্যের বিক্রির বৃদ্ধিও পরপর ছয় ত্রৈমাসিকে নেতিবাচক হয়েছে। পরিভোগ সঙ্কুচিত হয়েছে। গ্রামের বাজার শুকিয়ে যাচ্ছে। এমনকি জুতো বিক্রিও কমে গেছে। 
গ্রামের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সরকারি বিনিয়োগের যে প্রয়োজন ছিল, তা উলটে কমছে। গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পে ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাঁটাই করা হচ্ছে এবারের বাজেটে। শস্যহানির জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা দুর্বল হতে হতে উঠে যাবার যোগাড় হয়েছে। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের থেকে কম দামে কৃষক শস্য বিক্রি করলেও সরকারের কোনও সাড়াশব্দ নেই। 
অথচ দেশে কর্মসংস্থানের হাল এতটাই খারাপ যে এই কম আয়, কম মজুরি সত্ত্বেও কৃষিকাজেই ফিরে আসছেন অন্য ক্ষেত্রে কর্মরত কাজ হারানে শ্রমিক। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমির সর্বশেষ রিপোর্ট চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, এ বছরের মার্চেই ১.৭ কোটি মানুষ নতুন করে কৃষিতে যুক্ত হয়েছেন। এরা মূলত অন্যত্র কাজ হারানো শ্রমিক। রিপোর্টে দেখা গেছে ফেব্রুয়ারিতে মোট ২৩ লক্ষ কাজ খোয়া গেছে। নির্মাণ এবং খুচরো বাণিজ্যে কাজ খোয়া যাবার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ফলে বাধ্য হয়েই কৃষিতে ভিড় করছেন মানুষ। সিএমআইই’র অধিকর্তা মহেশ ব্যাস জানিয়েছেন, ২০১৬ থেকে যখন এই হিসেব রাখার কাজ শুরু করেছে সংস্থা এমন চিত্র কখনও দেখা যায়নি।
 

Comments :0

Login to leave a comment