খাতায় কলমে মন্দার কবলে পড়ল ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি জার্মানি। দেশের পরিসংখ্যান দপ্তরের ব্যাখ্যা, জ্বালানির দাম চড়া হওয়ায় ক্রেতাদের খরচ কমেছে ভোগ্যপণ্যে। মন্দা সেই কারণেই।
খাতায় কলমে মন্দা ধরা হয় পরপর দু’টি ত্রৈমাসিক বা তিন মাসের হিসেবে মোট জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হার কমলে। পরিসংখ্যান দপ্তরের অনুমান ছিল বৃদ্ধির হার আগের তুলনায় একই থাকবে। কিন্তু দেখা গিয়েছে মোট জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হার পরপর দু’টি ত্রৈমাসিকে কমেই গিয়েছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সংঘাত বেঁধেছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞা জারি করে রাশিয়ার ওপর। রাশিয়াও বন্ধ করে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ। শেষ শীতে জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়েছিল জার্মানিকে।
জ্বালানির দামকে দায়ী করলেও অর্থনীতিবিদদের বড় অংশ বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের আগে, এমনকি ২০২০’র বিশ্ব মহামারীর আগেও ইউরোপের অর্থনীতি খুঁড়িয়েই চলছিল। মজুরি বিশ্ব জুড়েই দামের তুলনায় বাড়ছে না। চাহিদার সঙ্কটের কারণ ডেকে আনছে মজুরি এবং মুনাফার এই বৈষম্য।
পরিসংখ্যান দপ্তরের রিপোর্ট বলছে, আচমকা জ্বালানির দাম বাড়তে থাকায় ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনিশ্চয়তা বেড়েছে ক্রেতাদের। ফলে তাঁরা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের বাইরে কিনছেন খুব কম। এপ্রিলেই ১.২ শতাংশ কমেছে ভোগব্যয়। সেই আঘাত সামলাতে পারেনি অর্থনীতি। নেমে গিয়েছে মন্দার স্তরে, যখন পণ্য ও পরিষেবা উৎপাদন আগের স্তরের তুলনায় কমে গিয়েছে।
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ যদিও দাবি করেছেন যে এই মন্দা পরিস্থিতি সাময়িক। আশার আলো দেখাচ্ছে মে মাসের লেনদেন। জাহাজ শিল্পে নতুন বিনিয়োগ এসেছে। ফলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।
অর্থনীতিবিদদের একাংশ যদিও এমন যুক্তিতে সম্মত নন। তাঁরা বলছেন, জার্মানির মোট উৎপাদন নির্ভর করে রপ্তানি দ্রব্য এবং পরিষেবার চাহিদার ওপরেও। জার্মানির এক নম্বর বাণিজ্য সহযোগী চীন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও চীনের সঙ্গে বেশি অঙ্কের লেনদেন করে জার্মানি। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য মোটরগাড়ির রপ্তানি। কিন্তু চীনে এক বছরের মধ্যে জার্মানির তৈরি মোটগাড়ির চাহিদা ২৪ শতাংশ কমেছে। এমন প্রবণতা চলতে থাকলে অতি দ্রুত মন্দা কাটানো মুশকিল হবে।
Comments :0