Haryana clash

পুলিশ, গোরক্ষক নিয়ে প্রশ্ন উপমুখ্যমন্ত্রীর, মুখ্যমন্ত্রী খাট্টার দেখছেন বৃহত্তর ষড়যন্ত্র

জাতীয়

সোমবার হরিয়ানায় হিন্দুত্ববাদীদের শোভাযাত্রাকে ঘিরে হিংসার ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতার কথা সরাসরি মেনে নিলেন রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী দুষ্যন্ত চৌতালা। মঙ্গলবার তিনি এক সাক্ষাৎকারে তথাকথিত গোরক্ষকদের নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। ভিএইচপি’র শোভাযাত্রা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। শোভাযাত্রা থেকে ফেরার সময়ে হিন্দুত্বের বাহিনীই যে গুরগাঁওয়ের মসজিদে আগুন লাগিয়েছে এবং অল্পবয়সি এক ইমামকে খুন করেছে সে কথাও জানিয়েছেন। কিন্তু উলটো সুর শোনা গেছে মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টারের কথায়। তিনি এদিন বলেছেন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের শোভাযাত্রায় হামলার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত, বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অনিল বিজ উসকানিমূলক প্ররোচনা দিয়ে বলেছিলেন, নলহার মহাদেব মন্দিরে মুসলিম দাঙ্গাবাজরা ৩-৪ হাজার হিন্দু নারী-পুরুষকে বন্দি করে রেখেছিল। মঙ্গলবার সেই দাবি খারিজ করে দিয়েছেন মন্দিরের প্রধান পুরোহিত দীপক শর্মা। 
এদিকে সোমবার থেকে শুরু হওয়া হিংসা মঙ্গলবার রাতেও বন্ধ হয়নি। মূলত গুরগাঁওয়ের বিভিন্ন জায়গায় হিংসা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে হিন্দুত্বের বাহিনী। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অনিল বিজ সোমবার বিকালেই বলেছিলেন নূহতে আধা সামারিক বাহিনী নামানো হচ্ছে। সেই বাহিনী কার্যত নামানো হয়েছে রাত তিনটের পরে। গভীর রাতে শোভাযাত্রা থেকে ফেরার পথে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরঙ দলের দুষ্কৃতীরা গুরগাঁওয়ের একটি মসজিদে হামলা চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং এক ইমামকে গুলি করে খুন করে। সব মিলিয়ে এদিন পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে হিংসায়। মঙ্গলবার বিকালে গুরগাঁওয়ের ৬৬ নম্বর সেক্টরে হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা হয়। হরিয়ানা সীমান্তের রাজস্থানের বিভিন্ন জায়গাতেও হিংসার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এদিন দুপুরে ৭০ নম্বর সেক্টরে হিন্দুত্ববাদীরা আবাসিক এলাকায় সংখ্যালঘু মুসলিমদের দোকান, রেস্তোরাঁয় ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়।  মণিপুরের জাতি দাঙ্গা এবং পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সরকারকে যেদিন তুলোধোনা করছে সুপ্রিম কোর্ট, সেদিনই কার্যত সুপ্রিম কোর্টের নাকের ডগায় সাম্প্রদায়িক হিংসা অবাধে চালাচ্ছে ভিএইচপি, বজরঙ দলের মতো আরএসএসের শাখা সংগঠনগুলি। গুরগাঁওয়ে পুলিশের ডেপুটি কমিশনার নীতীশ আগরওয়াল জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ভোর রাতে গুরগাঁওয়ের ৫৭ সেক্টরে অঞ্জুমান জামা মসজিদে হামলা চালায় ৫০-৬০ জন দুষ্কৃতী। তারা মসজিদে আগুন লাগিয়ে দেয়, গুলি চালায়। গুলিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তা। 
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার নাম না করলেও মূলত এই হিংসার দায় সংখ্যালঘুদের উপরে দিতে চেয়েছেন এবং বজরঙ দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে বাঁচাতে চেয়েছেন। শুধু তাই নয়, তারা আক্রান্ত হয়েছে এমনই কথা জানিয়েছেন। তিনি ঘটনা জানার পরেই পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। কেন্দ্রীয় সরকার আধা সামরিক বাহিনী পাঠিয়েছে। ৪৪টি এফআইআর হয়েছে এবং ৭০জনকে আটক করা হয়েছে, বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এদিনই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজ্যের উপ মুখ্যমন্ত্রী দুষ্যন্ত চৌতালা পরিষ্কার বলেছেন, শুধুমাত্র একটি গুজবকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থাপনা সঠিক ছিল না। পুলিশ সুপার পারিবারিক অনুষ্ঠানের জন্য ছুটিতে ছিলেন। পাশের জেলার পুলিশ সুপার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি পরিস্থিতির পর্যালোচনা করতে পারেননি। সকলের প্রতি শান্তি ফেরানোর আবেদন জানিয়ে উপমুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেছেন, অতীতে কখনও এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি হরিয়ানায়। মেওয়াতে হিন্দু-মুসলিম বহুকাল ধরে একসঙ্গে আছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। গোরক্ষা দলের হাতে ভিওয়ানিতে দুই জনের হত্যার ঘটনার কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। মূল অভিযুক্ত মনু মানেসরের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থার কথা বলেছেন। নূহ থেকে ফেরার পথে শোভাযাত্রার বাহিনীই যে গুরগাঁওয়ের মসজিদে গুলি চালিয়েছে। আগুন লাগিয়েছে। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা গুলি চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। গোরক্ষক দল নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে চৌতলা বলেছেন, যারা নিজেদের গোরক্ষক বলে দাবি করে, তাদের অধিকাংশের বাড়িতে কোনও গোরু নেই। এটা অতি উদ্বেগের বিষয়। 
এদিকে হরিয়ানায় এই হিংসার ঘটনায় হিন্দুত্ববাদীদের উপরে মুসলিমরা হামলা চালিয়েছে এমনই প্রচার শুরু করে দেওয়া হয় বিজেপি এবং অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে। হিংসা হরিয়ানায় হলেও রাজস্থানের ভোটের দিকে নজর আছে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিজেপি এই হিংসাকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণ করতে চাইছে, তা স্পষ্ট। খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অনিল বিজ বলেন, মুসলিম দাঙ্গাবাজরা নূহের নলহার মহাদেব মন্দির ঘিরে তার ভিতরে তিন-চার হাজার নারী-পুরুষকে বন্দি করে রাখে। এদিন ‘দ্য ওয়ার’- এর পক্ষ থেকে ওই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত দীপক শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শ্রাবণ মাসের সোমবারে এমনিতেই প্রচুর ভিড় থাকে দর্শনার্থীদের। তাঁরা যাওয়া আসা করছিলেন। ওই যাত্রা থাকায় ভিড় আরও বেশি ছিল। এরপর বাইরে গন্ডগোলের খবর পাওয়ায় তাঁরা ভেতরেই থেকে গিয়েছিলেন। কেউ তাদের বন্দি বানায়নি। রাজ্যের বিরোধী দল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের কথা জানা থাকলে পুলিশ কী করছিল?
 

Comments :0

Login to leave a comment