Karnataka election

বিধি শিকেয়, ভোটের আগের দিনেও কাতর আর্তি মোদীর!

জাতীয়

 নির্বাচনের আগের দিনই কর্ণাটকবাসীর উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সাত দিনে ১৯টি সমাবেশ এবং ৬টি রোড শো করার পরেও ‘কন্নড় অস্মিতা’ জাগিয়ে তোলার কৌশলে শেষ মুহূর্তে খোলা চিঠি লিখতে হলো প্রধানমন্ত্রীকে! আবার প্রচারপর্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও প্রধানমন্ত্রী কর্ণাটকবাসীকে খোলা চিঠির আড়ালে কীভাবে নিজের বক্তব্য তুলে ধরলেন, তার জবাব চাইতে মঙ্গলবারই নির্বাচন কমিশনে পিটিশন দাখিল করেছে কংগ্রেস। গোটা বিষয়টি ‘গুরুতর নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন’ উল্লেখ করে কংগ্রেস মোদীর বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের আরজিও জানিয়েছে। এমন আবহের মধ্যেই বুধবার বিধানসভা ভোট হতে চলেছে কর্ণাটকে। সাম্প্রদায়িক, দুর্নীতিগ্রস্ত বিজেপি সরকারের হাত থেকে রাজ্যবাসী মুক্তি চায় কীনা, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে এই ভোটে। ফল জানা যাবে শনিবার।
এবার প্রবল প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা হাওয়া রয়েছে কর্ণাটকে। পরিস্থিতি যে অনুকূল নয়, তা মোদীর চিঠির বয়ানেই স্পষ্ট। তিনি লিখেছেন, ‘আপনারা সবসময় আমাকে স্নেহ, ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। একে আমি সবসময় পবিত্র আশীর্বাদ হিসাবেই অনুভব করেছি।’ কর্ণাটক, ওই রাজ্যের মানুষজনের মন জয় করতে প্রধানমন্ত্রীর মরিয়া ভাব প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আজাদির এই অমৃতকালে আমরা আমাদের প্রাণের ভারতকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এক উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে এগচ্ছি। এটা অনুভব করেই কর্ণাটক সেই আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিতে ভীষণভাবে ইচ্ছুক।’ গোটা প্রচারপর্বে কোণঠাসা বিজেপি ভরসা করেছেন মোদীর ওপরেই। প্রাক ভোট সমীক্ষার ইঙ্গিতের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিজেপি সম্পর্কে অনীহা—শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় দলের নেতাদের। মোদী ছাড়াও অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা, রাজনাথ সিং-য়ের মতো কেন্দ্রীয় নেতারা প্রচার করেছেন কর্ণাটকে। দুর্নীতি, বেকারত্বের পাশাপাশি ভাতের জোগানের বদলে ধর্মের উসকানির হাত থেকে যে রেহাই চাইছে কর্ণাটকের মানুষ, সেটা বুঝে গিয়েই মোদীর ওপরেই ভরসা করে এবারের ভোট বৈতরণী পেরোতে চাইছে বিজেপি। এত সমাবেশ, এত দীর্ঘ পথ রোড শো করেও মোদী সম্ভবত নিজের ওপর ভরসা করতে না পেরে খোলা চিঠি লিখতে বাধ্য হলেন, এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সেকারণেই ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের মাহাত্ম্য বোঝাতে কর্ণাটকের মানুষের মন জয়ে তাঁর আপ্রাণ চেষ্টা, ‘কোভিড সময়কালে বিজেপি সরকারের তত্ত্বাবধানে ৯০ হাজার কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ কর্ণাটকে এসেছে ফি-বছর। আমরা বিনিয়োগ, শিল্প এবং উদ্ভাবনায় কর্ণাটককে একনম্বরে নিয়ে যেতে চাই। এরই সঙ্গে শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং উদ্যোগ ক্ষেত্রেও এক নম্বর হয়ে উঠবে কর্ণাটক।’ কর্ণাটকবাসীর সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে দিতে চেয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘প্রতিটি কর্ণাটকবাসীর স্বপ্নই আমার স্বপ্ন।’
প্রচার শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও এই ‘নীরব সময়কালে’ প্রধানমন্ত্রী কীভাবে কর্ণাটকবাসী উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখলেন, তা জবাব চাইতে নির্বাচন কমিশনের কাছে দীর্ঘ অভিযোগ জানিয়েছে কংগ্রেস। এই অভিযোগের পরে মোদীর বিরুদ্ধে কমিশন আদৌ ব্যবস্থ নেওয়ার ‘সাহস’ দেখাতে পারবে কীনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক রণদীপ সূরজেওয়ালা। তিনি মনে করেন, মোদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা প্রয়োগ এবং সদিচ্ছা দেখানোর বড় ধরনের পরীক্ষা। নাকি ‘নীরব ও অসহায় দর্শকের ভূমিকা’ পালন করেই সাংবিধানিক দায় এড়াবে কমিশন, প্রশ্ন করেন সূরজেওয়ালা। এরপরেই তাঁর খোঁচা, ‘অলিখিত এবং সেটাই এখন গ্রহণযোগ্য বিধি হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কমিশনের যাবতীয় ফতোয়া বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে, মোটেই প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর সহকর্মীদের বিরুদ্ধে নয়।’ উল্লেখ্য, দু’দিন আগেই কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী ‘কর্ণাটকের সার্বভৌমত্ব’ নিয়ে মন্তব্য করেছেন বলে দাবি করে কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কংগ্রেস নেত্রীর বিরুদ্ধে নোটিস পাঠায় কমিশন। অথচ মোদীর বিরুদ্ধে এযাবৎকালে হাজারও অভিযোগ করা হলেও কোনও ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার ‘হিম্মত’ দেখাতে পারেনি কমিশন।
প্রচারের শেষ পর্বে এসে মোদী কিছুটা মরিয়া হয়েই তীব্র সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করেন। রাজ্যবাসীকে ‘জয় বজরঙবলী’ ধ্বনি তুলে ভোট দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি। ভাষণে কংগ্রেসকে শূলে চড়াতে গিয়ে অভিযোগ করেন, ‘ওরা আগে রামকে জেলে পুরেছিল। এখন ভগবান হনুমানকেও লক আপে বন্দি করতে চাইছে।’ নিজের রোড শোয়ে বিশালাকৃতির হনুমানের মূর্তি নিয়েও ঘুরেছেন মোদী। আর তাতেও কাজে দেয়নি আশঙ্কা থেকেই শেষদিনে ‘ডবল ইঞ্জিন’ বজায় রাখার স্বার্থে কর্ণাটকবাসীর কাছে কাতর ভোট-আরজি করলেন মোদী।
তবে এবারের ভোটে কর্ণাটকবাসীর মন জয় করে নিয়েছে কংগ্রেসের ’৪০ শতাংশ কমিশনের সরকার’ প্রচার। রাজ্য সরকারের দুর্নীতির গভীরতা এতেই প্রকাশ পেয়েছে আরও প্রকটভাবে—মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দলের হয়ে রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ছাড়াও শেষ মুহূর্তে একটি সভা করেন সোনিয়া গান্ধীও। জনসভাগুলিতে ভালো ভিড় হয়েছে। এছাড়া প্রাক ভোটে বেশ কয়েকটি সমীক্ষা হয় কংগ্রেসকে এগিয়ে রেখেছে, নাহলেও ত্রিশঙ্কু বিধানসভার সম্ভাবনার কথা বলেছে। কেউই তখনও পর্যন্ত এগিয়ে রাখেনি বিজেপি-কে। এতেই আশায় বুক বাঁধছেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। এছাড়াও জগদীশ শেট্টার কিংবা লক্ষ্মণ সেবাদির মতো প্রথম সারির বিজেপি নেতাদের কংগ্রেসে যোগদান, বাড়তি মনোবল যুগিয়েছে দলকে বলে মনে করা হচ্ছে।
মোট ৫,৩১,৩৩,৫৪ জন ভোটার বুধবার ভোট দেবেন রাজ্যের ৫৮,৫৪৫টি বুথে। এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২ হাজার ৬১৫ জন প্রার্থী। মূল লড়াই বজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে। তবে শেষ পর্যন্ত সরকার গঠনে বড় ভূমিকা নিতে পারে রাজ্যে তৃতীয় শক্তিশালী হিসাবে পরিচিত এইচ ডি দেবেগৌড়ার জনতা দল (এস)।
এদিকে, প্রচারে মোদীর জন্য যে বিপুল সরকারি অর্থ ব্যয় হয়েছে তাকে কটাক্ষ করেছেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। কয়েকশো কোটি টাকা খরচ সম্পর্কে ইয়েচুরি টুইট করে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর সরকারি সফর বা তাঁর প্রকল্প উদ্বোধনে দেশের কোষাগার থেকে বিপুল অর্থ ব্যয় দেখে সন্দেহ হয়, ভারতে নির্বাচনের জন্য কতটা স্বচ্ছ জমি পড়ে থাকে।’

 

Comments :0

Login to leave a comment