MONDA MITHAI – KRISHANU BHATTACHARJEE | DADATHAKUR – NATUNPATA | 27 APRIL 2024

মণ্ডা মিঠাই – কৃশানু ভট্টাচার্য | হকার এডিটর – নতুনপাতা | ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

MONDA MITHAI  KRISHANU BHATTACHARJEE  DADATHAKUR  NATUNPATA  27 APRIL 2024

মণ্ডা মিঠাই

হকার এডিটর 
কৃশানু ভট্টাচার্য্য

নতুনপাতা

বাংলা সংবাদপত্র জগতের শরৎচন্দ্র পণ্ডিত ওরফে দাদাঠাকুর নানা কারণে অন্য অনেকের থেকে আলাদা।‌ নিজের কাগজের নিজেই ছিলেন লেখক,  সম্পাদক,  মুদ্রাকর , প্রকাশক এবং হকার। মজা করে বলতেন কাগজ আমাকে পথে নামিয়েছে। তবে জঙ্গিপুর সংবাদ পত্রিকা নিয়ে তিনি রাস্তায় রাস্তায় ফেরি করতেন কিনা তা জানা‌ নেই। কিন্তু বিদূষক কাগজ হাতে কলকাতার বিভিন্ন জনবহুল রাস্তায় প্রতিদিন তাকে ফেরি করতে দেখা যেত।  কখনো কখনো পুলিশের ডান্ডার বাড়িও তাকে সহ্য করতে হয়েছে। এ নিয়ে তার কোন যন্ত্রণা ছিল না ,বরং একটা গৌরব ছিল। সে সময় কলকাতা শহরে হকারি করতে গেলে লাইসেন্স চালু করা হয়।‌ আর লাইসেন্স থাকলে
বেলাইসেন্স লোকদেরকে ধরবার জন্য হকার হান্টিং ছিল পুলিশের সে সময়কার একটা অন্যতম কাজ। নিজের পকেট থেকে চার টাকা ছয় আনা দিয়ে দাদা ঠাকুরকে হকার এই লাইসেন্স করে দিয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু।‌ দাদা ঠাকুর তা সত্ত্বেও হপার হান্টিং এর সময় রীতিমতো দৌড়াদৌড়ি করতেন। এ প্রসঙ্গে নন্দিকান্ত সরকার একবার তাকে প্রশ্ন করেছিলেন যে লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও তিনি কেন পুলিশ দেখলে দৌড় দেন? জবাবে দাদা ঠাকুর বলেছিলেন পুলিশের কাছে প্রথম হচ্ছে ডান্ডা বিধি পরে দন্ড বিধি।‌ কাজেই পলায়ন ছাড়া বুদ্ধিমান মানুষের সামনে আর কোন বিকল্প থাকে না।
নিজের কাগজ নিজে বিক্রি করা জন্য দাদা ঠাকুরের মনে কোন রকম কোনো খেত বা অশ্রদ্ধা ভাব না থাকলেও এটা নিয়ে তার সমসাময়িক বেশ কিছু মানুষের মধ্যে নানা ধরনের কৌতুক এবং ব্যাঙ্গের চল ছিল। যেমন দৈনিক বসুমতি পত্রিকার সম্পাদক হেমেন্দ্র প্রসাদ ঘোষ একদিন তার বাড়িতে দাদা ঠাকুর কে আমন্ত্রণ জানিয়ে সকলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন হকার এডিটার বলে। জবাবে যা শুনেছিলেন তা বিশেষ সম্মানজনক ছিল না। দাদা ঠাকুর পাল্টা বলেছিলেন আপনি তো একজন কেপ্ট এডিটর। মুখার্জি পরিবার আপনাকে কাগজ চালাবার জন্য রেখেছেন তাই আপনি ওই কাগজের এডিটার। সে কালের অন্যতম জনপ্রিয়  মাসিক পত্রিকা ভারতবর্ষ এর প্রকাশক হরিদাস চট্টোপাধ্যায় এর সঙ্গে দাদাঠাকুরকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন ঐ পত্রিকার সম্পাদক জলধর সেন।‌ জবাবে হরিদাস চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, '  ও উনি ? কাগজ ফিরি করেন!' জবাব পেয়েছিলেন, ' আমি এই রাস্তা দিয়ে কাগজ বিক্রি করতে করতে দেখি একজন লোক বসে পত্রিকা বিক্রি করছে কেউ হরিদাস , আর কে গুরুদাস এ আমার আর চেনার সময় থাকে না।' প্রসঙ্গত উল্লেখ্য হরিদাস চট্টোপাধ্যায়ের বাবার নাম ছিল গুরুদাস।
আবার এই কাগজ ফ্রি করা সূত্রেই কিছু কিছু মানুষের সঙ্গে দাদা ঠাকুরের দীর্ঘদিনের আত্মীয়তা তৈরি হয়ে যায়। এদের মধ্যে যেমন রয়েছেন হেমেন্দ্রকুমার রায় প্রেমাঙ্কর আতর্থী নির্মল চন্দ্র চন্দ্র তেমনি রয়েছেন ৪৩ নম্বর কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের বাসিন্দা গজেন্দ্রকুমার ঘোষ।  এই বাড়িটির অবস্থান বিবেকানন্দ রোড এবং বিধান সরণীর সংযোগস্থলে। কর্নওয়াল স্ট্রিট বা বিধান স্মরণে দিয়ে কাগজ বিক্রি করতে করতে একদিন দাদাঠাকুর এই জায়গায় এসে পৌঁছানোর পর গজেন্দ্রকুমার তাকে বাড়িতে ডাকেন। কাগজ কেনার নাম করে কিছুটা সময় কাটানোর চেষ্টা করেন।‌ ইতিমধ্যে গজেন্দ্রকুমারের স্ত্রী 
পুরসুন্দরী দেবী দাদা ঠাকুরের জন্য জলখাবার তৈরি করে নিয়ে এসে হাজির হন। ওই বাড়িটি এক সময় বাংলা সাহিত্য জগতের বহু দিকপাল মানুষদের একটি জনপ্রিয় আড্ডাখানা ছিল। সেই আড্ডারি কারো কাছ থেকে দাদা ঠাকুর সম্পর্কে নানা কথা জানতে পেরেছিলেন গজেন্দ্রকুমার। তারপর থেকে ওই পরিবারের সঙ্গে দাদা ঠাকুরের এক গভীর আত্মীয়তা তৈরি হয়। অনেকদিনই দাদাঠাকুর ওই বাড়িতে প্রবেশ করবার সময় 'আহ্লাদে আটখানা' বলে চিৎকার করতে করতে ঢুকতেন। শব্দ নিয়ে খেলা করা ছিল তার সহজাত।‌সেই জায়গা থেকেই তিনি 'আল্লা দে  আটখানা ' মানে আটখানা লুচির প্রত্যাশী এই ধরনের একটি ঘোষনা করতে করতে ওই বাড়িতে প্রবেশ করতেন।

দাদা ঠাকুর বিশ্বাস করতেন ব্যক্তি সমাজ বদলে দিতে পারে। অনেক সময় তিনি বলতেন , 'আই - সিঙ্গুলার নাম্বার নেভার টেকস্  দ্য হেল্প অফ আদার্স।' এই বোধ এতটাই তীব্র ছিল বলেই হয়তো বাঙালি পেয়েছে তার একমাত্র হকার সম্পাদক শরৎচন্দ্র পণ্ডিত ওরফে দাদা ঠাকুর কে।

Comments :0

Login to leave a comment