Manipur Violence

মানববন্ধন গড়েই মেইতেইদের আগলে রাখলেন কুকি মহিলারা

জাতীয়

Manipur violence

সাম্প্রদায়িক হিংসার মুখে মানবন্ধন গড়েই মেইতেই সম্প্রদায়ের লোকেদের আগলে রাখলেন কুকি জনজাতির মহিলারা। অগ্নিগর্ভ মণিপুরে মানবতার এমনই উজ্জ্বল দৃষ্টান্তে আলোড়ন নেট দুনিয়ায়। 
শুধু তাই নয়, পরে কিছু দূরে থাকা সেনাবাহিনীর ট্রাকে মেইতেইদের নিরাপদ স্থানে পাঠানোরও ব্যবস্থা করেন সাহসী কুকি মহিলারাই।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অনুসারে, সংঘর্ষকবলিতে অঞ্চলে আটকে পড়েছিলেন রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই গোষ্ঠীর কিছু লোক। মারমুখি ভিড়ের হাত থেকে তাঁদের রক্ষা করেন কুকি মহিলারাই। 


‘‘রাস্তায় কুকি মহিলারা মানববন্ধন করে দাঁড়িয়ে পড়েন। সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মহিলারা সাহসের সঙ্গে প্রতিরোধ করেন। সেনাবাহিনী মেইতেইদের উদ্ধার না করা পর্যন্ত কুকি মহিলারা রাস্তা ছেড়ে একচুল নড়েননি,’’ শনিবার চূড়াচাঁন্দপুরে সাংবাদিকদের এই কথা জানান স্থানীয়রা।
সোশাল মিডিয়াতে এই ঘটনার ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ম্যাসেজিং অ্যাপ টুইটার ব্যবহারকারী লিনথোই চানু লিখেছেন,‘‘সাম্প্রদায়িক হিংসা এবং জাতি ও জনজাতি সংঘর্ষের আবহের ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। চূড়াচাঁন্দপুরে মেইতেইরা সংখ্যালঘু। একটি অঞ্চলে তাঁরা হিংসার মুখে আটকে পড়েন। কিন্তু সেখানে কুকি জনজাতির মানুষই তাঁদের রক্ষা করেন।’’
পাশাপাশি ইম্ফলে মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কুকি ছাত্রদের মেইতেই ছাত্রীরাই হামলা থেকে বাঁচান বলেও টুইট করেন তিনি।
উত্তর-পূর্বের পাহাড়ি রাজ্য মণিপুরে অতীতে এমন ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক ও জাতি-জনজাতি হিংসা ছড়ায়নি। তবু তারই মাঝে উঠে আসছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অপূর্ব দৃশ্য। কোথাও কুকি, তো আবার কোনখানে মেইতেইরা আক্রান্তের পাশে ঢাল হয়ে রয়েছেন। রক্ষা করছেন দুষ্কৃতীদের হামলা থেকে, সাহায্য করছেন বিপন্নদের সুরক্ষিত স্থানে পৌঁছে দিতে।
শনিবার প্রতিরক্ষামন্ত্রক থেকে এক বিবৃতিতে চূড়াচাঁন্দপুর, ইম্ফল এবং মোরেহ থেকে সেনা এবং আসাম রাইফেলসের জওয়ানরা ১১,৪০০ জনের বেশি মানুষকে উদ্ধারের কথা জানিয়েছে।


সংখ্যাগুরু মেইতেইদের উপজাতি হিসাবে স্বীকৃতি দানের তোড়জোড়কে ঘিরে গত বুধবার থেকেই মণিপুরে ব্যাপক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে ঘর ছাড়া হয়ে পড়েছেন জাতি এবং জনজাতির হাজার হাজার মানুষ। রাজ্যে মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মেইতেইরা। অন্যদিকে ৪০ শতাংশ কুকি এবং নাগা জনজাতিভুক্ত। এছাড়াও আছে অন্য জনজাতি গোষ্ঠীও। কেন্দ্র এবং রাজ্যে বিজেপি’র ডবল ইঞ্জিন সরকারের বেচালে ভেঙেচুরে খানখান মণিপুরের জাতি ও জনজাতি সমাজের মধ্যের সংহতির আবহ।


‘‘মণিপুর জ্বলছে এবং আমি আমার রাজ্যের মানুষের কষ্টে গভীরভাবে মর্মাহত। আমি সবার কাছে আবেদন করছি, মেইতেই ও জনজাতির সব গোষ্ঠীর কাছেই। আপনারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই হিংসার প্রতিহত করুন। মহিলাদের নিতে হবে অনেকটা প্রকৃতি মায়ের মতোই ভূমিকা,’’ জানান লৌহ নারী শর্মিলা চানু।
মণিপুরে সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (আস্ফা) প্রত্যহারের দাবিতে দীর্ঘ ১৬ বছর অনশন করেন শর্মিলা। পাশাপাশি তিনি রাজ্যে শান্তি ফেরাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে মণিপুরে এসে অবস্থা সামলাতে বলেন।     

Comments :0

Login to leave a comment