Md Salim Coochbihar

বিরোধীশূন্য ভারত গড়াই লক্ষ্য মোদীর: সেলিম

রাজ্য

ছবি সংগ্রহ থেকে।

জয়ন্ত সাহা ও অমিতকুমার দেব: কোচবিহার,

যখন থেকে কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে তখন থেকেই তাদের একটাই লক্ষ্য বিরোধীশূন্য ভারত গড়তে হবে। গণতন্ত্রের সর্বনাশ করতে হলে প্রথমে সংসদকে লোপাট করতে হয়, সংসদীয় গণতন্ত্রকে শেষ করতে হয়। সেটাই এখন করা হচ্ছে, আর এটা হলো বিজেপি’র ঘোষিত কার্যক্রম। সাধারণ মানুষের হাতে মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার বা সাংবিধানিক অধিকার যা আছে সেগুলি ওরা কেড়ে নিতে চায়, এজন্যই বিজেপি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভাঙছে। এজন্যই ওদের বিরুদ্ধে বামপন্থীদের বিরামহীন লড়াই চলছে। বিরোধী সাংসদদের সাসপেন্ড করার ঘটনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মঙ্গলবার একথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এদিন কোচবিহারের সুকান্ত মঞ্চে সিপিআই(এম) কোচবিহার জেলা কমিটির বর্ধিত অধিবেশনে যোগ দিতে এসে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পার্টির রাজ্য কমিটির অলকেশ দাস ও পার্টির কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়।
মমতা ব্যানার্জির দিল্লিযাত্রা প্রসঙ্গে মহম্মদ সেলিম এদিন বলেন, মমতা ব্যানার্জি এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে সেটিং করতে গেছেন। আগে আরএসএস-কে দিয়ে সেটিং করেছিলেন, এখন মোদীর কাছে সেটিং করতে গিয়েছেন ভাইপোকে বাঁচানোর জন্য। কয়েকদিন আগেই এই ইডি এবং সিবিআই ভাইপোর পরিবারের বিভিন্ন সদস্যকে ডাকার কথা বলছিলেন। এখন সব চুপচাপ হয়ে গেছে।  এনিয়ে মিডিয়াতেও কোনও খবর হয় না। এখন তৃণমূল বললে মিডিয়া শুধুই কুণাল ঘোষকে দেখায়। এমনকি মমতা এবং অভিষেকও হাপিশ হয়ে গেছে। তৃণমূলের সমর্থকদের বোঝা উচিত, আসলে চোর জোচ্চোররা দখল করে রেখেছে তৃণমূল দলটাকে। 
সম্প্রতি আলিপুরদুয়ার ও বানারহাটে এসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, আর চা সুন্দরী প্রকল্প নয়, এবারে  চা শ্রমিকদের ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে এবং এর পাশাপাশি তাদের জমির পাট্টা দেওয়া হবে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে চা শ্রমিকরা যে পরিমাণ জমিতে বসবাস করছেন, পাট্টা দেওয়ার ক্ষেত্রে তা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এদিন মহম্মদ সেলিম বলেন, পাহাড়ে এসে মুখ্যমন্ত্রী চা পাতা তুলতে আসেননি, আসলে এত দূরে তিনি চা বাগান তুলে দিতে এসেছিলেন। তাই লড়াইটা হচ্ছে চা বাগানকে টিকিয়ে রাখা, চা বাগানের জমিকে টিকিয়ে রাখার। কারণ মমতা ব্যানার্জি হাট, বাজার, চা বাগান, মাঠ, জঙ্গল নদীর বাঁধ, নদীর চর সবটাই দখল করে বিক্রি করে দিচ্ছেন। প্রথমে বেআইনিভাবে জমি উৎখাত করার চেষ্টা করেছেন। আর এখন বিজেপি যেমন আসাম থেকে দিল্লি পর্যন্ত বুলডোজার নিয়ে বস্তি উচ্ছেদ করেছে এবং সব জমিগুলিকে দখল করার চেষ্টা করছে, একই কাজ করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দক্ষিণপন্থার উত্থান একারণেই হয়েছে যে প্রাকৃতিক যা কিছু সম্পদ আছে এগুলি কর্পোরেটদের হাতে তুলে দিতে হবে।
মহম্মদ সেলিম এদিন বলেন, আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, চা বাগানের জমিতে বংশ পরম্পরায় যে চা শ্রমিকরা বাস করছেন, তার পুরো জমিতেই তাঁদের অধিকার রয়েছে। তাঁদের অধিকারে থাকা সব জমির অধিকার তাঁদেরই দিতে হবে। কিছু জমির পাট্টা দিয়ে, বাকি জমি থেকে শ্রমিকদের উচ্ছেদ করে সেই জমি কর্পোরেটদের হাতে তুলে দিতে দেওয়া হবে না। 
বন্ধ চা বাগান খোলার বিষয়ে মন্ত্রীসভার প্রথম এবং দ্বিতীয় বৈঠক ব্যর্থ হয়েছে মঙ্গলবার তৃতীয় বৈঠক হচ্ছে। এপ্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এদিন মহম্মদ সেলিম মুখ্যমন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করে বলেন, বন্ধ বাগান অধিগ্রহণ করতে কেন মন্ত্রীগোষ্ঠী গড়তে হয়? চিট ফান্ডের সময় থেকে এটা দেখা যাচ্ছে আজ অবধি চিট ফান্ডের প্রতারিতরা তাদের টাকা ফেরত পাননি। তিনি বলেন, এখনও বন্ধ বাগান খুলতে এই মন্ত্রীগোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে চা বাগানের গুষ্টির ষষ্ঠী করবার জন্য। কখনোই চা বাগানের শ্রমিক, চায়ের দাম, চায়ের বাজার, চায়ের রপ্তানি এবং  চা শিল্পকে বাঁচানোর চেষ্টা কখনো করা হয়নি। গত লোকসভা নির্বাচনে আগেও নির্মলা সীতারামন, নরেন্দ্র মোদি, মমতা ব্যানার্জি অনেক হইচই করেছিলেন চা বাগান নিয়ে। তখন বন্ধ ৫টি বাগান অধিগ্রহণ করার কথা বলেছিল নির্মলা সীতারামন। চা বাগান অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়েছিল। প্রিন্ট মিডিয়া ফলাও করে সেসব লিখেছিল। মোদীজী থেকে নির্মলা সীতারামন অনেক ফুটেজ খেয়েছিলেন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার।  তারপর ভোট হয়ে যাবার পর, খেল খতম, পয়সা হজম। এখন আবার লোকসভার ভোট আসছে, আর তাই চা বাগানের কথা মনে পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর।
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে এদিন মহম্মদ সেলিম বলেন, ইডির কাজ হচ্ছে সমস্ত জাল জালিয়াত চোরদের ধরা, জেলে পোরা এবং সমস্ত লুটের সম্পত্তি উদ্ধার করা। ইডি-কে এই কাজটাই করতে বলেছেন বিচারপতিরা। এই কাজের জন্যই কোচবিহার থেকে কলকাতা পর্যন্ত ইনসাফ যাত্রা করছে যুবরা। এজন্যই  প্রতিনিয়ত লড়াই করছেন বামপন্থীরা। কখনো ইডি-সিবিআই‘র কাছে যাওয়া হচ্ছে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে ‘চোর ধরো, জেল ভরো‘ বলা হচ্ছে, বলা হয়েছে ‘গ্রাম জাগাও, চোর তাড়াও’। এদিন তিনি বলেন, এই ন্যায় ৫৬ ইঞ্চি দেবে না। 
হাওড়া জেলাতেও প্রাথমিক নিয়োগে দুর্নীতি সামনে এসেছে। ২জন আধিকারিককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিবিআই। এই প্রসঙ্গে সেলিম এদিন বলেন, সিবিআই এখন এই ফাইলটি খুলেছে। তবে শুধু হাওড়া নয় রাজ্যে এহেন জেলা নেই, যেখানে প্রাথমিকে দুর্নীতি হয়নি। গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় দুর্নীতি হয়েছে। প্রাথমিক, আপার প্রাইমারি, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, মাদ্রাসা, জুনিয়র সিনিয়র, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি রয়েছে। গোটা শিক্ষা দপ্তরকেই একেবারে সর্বনাশ করে দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। এখানে দাঁড়িয়ে হাওড়া থেকে পুরুলিয়া হোক, বাঁকুড়া হোক, উত্তর হোক বা দক্ষিণ, সর্বত্রই দুর্নীতি হয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment