Manipur violence

মণিপুর: সংসদের ভেতরে-বাইরে আজ ফের সরব হবেন বিরোধীরা

জাতীয়

মণিপুর নিয়ে বাইরের বিক্ষোভের আঁচ এবার সংসদের ভেতরেও পড়তে শুরু করে দিয়েছে। বাদল অধিবেশনের প্রথম দু’দিন মণিপুরকে ঘিরেই ভেস্তে গিয়েছে। ‘মণিপুরের জাতি সংঘর্ষ নিয়ে সংসদে বিবৃতি দিতে হবে প্রধানমন্ত্রীকেই’— এই দাবিতে অনড় বিরোধীরা। তারা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, অন্য কেউ নয়, প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দেওয়ার পরেই মণিপুর নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। এই দাবিতে সোমবার সংসদ চত্বরে গান্ধী মূর্তির সামনে বিক্ষোভ দেখাবেন ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের বেশিরভাগ দল। প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি না দিলে আগামী দিনে সংসদের উভয় কক্ষের অধিবেশন অচল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। 
‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিষ্পৃহতা না দেখিয়ে এখনই কথা বলুন’ বলে দাবি জানিয়ে রবিবার টুইট করেছেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। ‘কোনোভাবেই যেন বিষয়টি থেকে বিচ্যুৎ হয়ে, বিকৃত করে এবং অন্যের মানহানি করে উত্তর-পূর্ব ভারতের তথাকথিত ডবল ইঞ্জিন সরকারের ব্যর্থতা আড়লের চেষ্টা করবেন না,’ বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা। তিনি স্পষ্টই মনে করেন, ‘যতদিন ওই রাজ্যে বীরেন সিং মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে থাকবেন ততদিন পর্যন্ত ন্যায় এবং শান্তি ফিরে আসবে।’ এমনকি ওই রাজ্যের প্রশাসন হিংসা শুধু বন্ধ করতে তো পারেনি, উলটে বিদ্বেষ উসকে দিতে মদত যুগিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন জয়রাম রমেশ। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আগেই টুইট করে বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে কথা বলতেই হবে।’
সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির দাবিতে এদিন সরব হয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স’র সভাপতি ফারুক আবদুল্লাও। তিনি বলেছেন, ‘‘গোটা বিশ্বের কাছে আজ আলোচনার বিষয় মণিপুর। প্রধানমন্ত্রী মুখ খুলেছেন, কিন্তু তাঁকে সংসদে দাঁড়িয়ে বলতে হবে মণিপুর নিয়ে। শুধু বললেই হবে না, বলার পর বিরোধীদেরও কথা শুনতে হবে তাঁকে।’’ ফারুক আবদুল্লা অবশ্য মনে করেন যে, বিরোধীদের মণিপুর নিয়ে বলার সুযোগ দেবে সরকারপক্ষ। ওখানকার পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের অনুভূতির কথাই তাঁরা সংসদে তুলে ধরতে চান বলে এদিন জানিয়েছেন ফারুক আবদুল্লা।
একটা রাজ্যে দীর্ঘ দিন ধরে হিংসা চললেও প্রধানমন্ত্রী নীরবই ছিলেন। শেষে দুই মহিলাকে প্রকাশ্যে নগ্ন করে রাস্তায় ঘুরিয়ে দলবেঁধে ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই ঘটনার প্রায় ৭৮ দিন পর মণিপুর নিয়ে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এতদিন পর তাঁর মণিপুরের কথা মনে পড়ল, তবে ওখানকার হিংসা নয়, স্রেফ ওই ঘটনায় ‘ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ’ বলে মন্তব্য করেন। স্বভাবসিদ্ধ নাটকীয় ঢ‌ঙে প্রধানমন্ত্রী এও বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের এই মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে বলছি ওখানে যা ঘটেছে তা যে কোনও সভ্য সমাজকে লজ্জায় ফেলে দেবে। গোটা দেশকে অপমানিত করেছে। ১৪০ কোটি দেশবাসী এরজন্য লজ্জিত।’’ এরপরেই দাবি করেন, ‘‘আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি যে, কোনও অপরাধীকেই রেয়াত করা হবে না। আইন প্রয়োগ করা হবে কড়াভাবেই।’’ অবশ্য অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর ওই ‘বিবেক-জাগ্রত’ বিবৃতিকে ‘কুমিরের কান্না’ বলে কটাক্ষ করতে রেয়াত করেননি। আবার প্রধানমন্ত্রী মণিপুর নিয়ে একথা সংসদের বাদল অধিবেশন শুরুর আগে চত্বরে দাঁড়িয়ে প্রথামাফিক সাংবাদিক সম্মেলনে বললেও ভেতরে নীরবই ছিলেন, মুখ খোলেননি।
এখন আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা রীতিমতো হুমকির সুরেই কথা বলছেন বিরোধীদের উদ্দেশ্যে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং এদিন বলেছেন যে, ‘‘মণিপুরের সেদিনের ‘লজ্জাজনক’ ঘটনা নিয়ে আর কোনও রাজনীতি করাই উচিত নয় বিরোধীদের। সরকারের অবস্থানের কথা সেদিন প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন।’’ সিং এমনও বলেছেন যে, ‘‘একটি বিজেপি শাসিত রাজ্যের ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করা বন্ধ করা উচিত বিরোধীদের।’’ এরই সঙ্গে মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরও মণিপুর নিয়ে রাজনীতি করতে নিষেধ করেন বিরোধীদের। তিনি প্রধানমন্ত্রীর মতো করেই এদিন বলেছেন, ‘মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা সত্যিই বেদনাদায়ক। কোন রাজ্যে হয়েছে এটা বড় কথা নয়। সেই অত্যাচার দমনের দায়িত্ব বর্তায় রাজ্য প্রশাসনের ওপরেই।’’ ঠাকুর এরপরেও খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘‘মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত কেন্দ্র। রাজস্থান, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ কিংবা মণিপুরে যা ঘটছে তা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে।’’ মোদীর মতোই ঠাকুর মণিপুর ছাড়া বাকি অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের অত্যাচার নিয়ে আলোচনা চাইলেও উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গুজরাট কিংবা মধ্য প্রদেশের মতো রাজ্যে মহিলাদের ওপর প্রতিনিয়ত যে ধরনের অত্যাচার চলছে, সেবিষয়টি সুকৌশলে এড়িয়ে গেলেন।
তবে সরকার এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও বিরোধীরা নিজেদের অবস্থানে অনড়। তারা সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে এনিয়ে আলোচনা চাইছে। অধিবেশনের প্রথম দিনেই সিপিআই(এম)’র সাংসদ এলামারাম করিম, ভি শিবদাসন, জন ব্রিটাস এবং এ এ রহিম ২৬৭ ধারায় যাবতীয় আলোচনা বাতিল করে মণিপুর নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়ে রাজ্যসভার সচিবের কাছে নোটিস দিয়েছেন। নোটিস দিয়েছিলেন আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা-ও। বাদল অধিবেশনের অন্য সমস্ত কাজ আপাতত স্থগিত রেখে মণিপুর নিয়েই দীর্ঘ আলোচনার দাবি জানিয়েছেন বিরোধীরা। কিন্তু সরকার সংক্ষিপ্ত আলোচনার পক্ষে। প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি নিয়েও কেন্দ্রের তরফে কোনও আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। উলটে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে দিয়ে দায়সারা বিবৃতি দিয়ে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় আছে কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে চাপ বাড়াতে একযোগে বিক্ষোভের পথে হাঁটছেন বিরোধীরা।
 

Comments :0

Login to leave a comment