Manipur violence

প্রধানমন্ত্রীর মণিপুর যাওয়া উচিত, রাষ্ট্রপতিকে জানিয়ে এল ‘ইন্ডিয়া’

জাতীয়

মণিপুরের ভয়াবহ পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখে আসা উচিত প্রধানমন্ত্রীর বলে মনে করে বিরোধীদের মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’। বুধবার ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধিরা একথা জানিয়েও এসেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে। এরই পাশাপাশি মণিপুর নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি এবং ওই রাজ্যে শান্তি ও সম্প্রীতির পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে সেকথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপিও দিয়েছেন তাঁরা।
এদিন বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের নেতৃত্বে ‘ইন্ডিয়া’র ৩১ জন সাংসদ দেখা করেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে। তাঁরা যে স্মারকলিপি দিয়েছেন তাতে মণিপুরের পাশাপাশি হরিয়ানার নূহতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হিংসার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ১০০ কিমি’র মধ্যে হিংসা ছড়ালেও কোনওরকম গুরুত্ব দিতে রাজি নয় কেন্দ্রীয় সরকার বলে অভিযোগও করা হয়েছে। এদিন যাঁরা রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে সদ্য মণিপুর ঘুরে আসা সাংসদরাও ছিলেন। তাঁরা ওখানে যে দুর্বিষহ পরিস্থিতি দেখে এসেছেন তা বিশদে জানান রাষ্ট্রপতিকে। এমনকি মণিপুর থেকে দু’জন মহিলাকে রাজ্যসভায় মনোনীত সদস্য করা উচিত বলেও তাঁরা অনুরোধ জানান। তাঁদের অভিমত, সাম্প্রতিক হিংসায় মণিপুরের মহিলাদের ওপর যে বর্বরোচিত অত্যাচার হয়েছে তার জন্যই ওই রাজ্যের দুই মহিলাকে রাজ্যসভায় আনা উচিত।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের খাড়গে জানান যে, ‘‘যাঁরা মণিপুরে গিয়েছিলেন তাঁরা ওখানকার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতির কাছে। যে স্মারকলিপি দাখিল করা হয়েছে তাঁকে তাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে ওই রাজ্যে মহিলাদের ওপর যে নিদারুণ অত্যাচার হয়েছে, সেকথাও। এর মধ্যে প্রকাশ্য রাস্তায় নগ্ন করে দুই মহিলাকে হাঁটিয়ে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, ‘‘ওই রাজ্যে ৫ হাজারেরও বেশি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ২০০ জনেরও বেশি প্রাণ হারিয়েছেন, জখমের সংখ্যা ৫০০-র বেশি। এই জাতি সংঘর্ষে ঘরছাড়া হয়েছেন ৬০ হাজারেও বেশি মানুষ। তাঁদের সিংহভাগই রয়েছেন আশ্রয় শিবিরে। আবার সেই শিবিরগুলিতে জীবনযাত্রার ন্যূনতম সুবিধা নেই। শিশুদের খাবার নেই, ওষুধপত্রও মিলছে না। যথাযোগ্য শৌচাগারও নেই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা মণিপুর নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেছি, তাঁকে মণিপুর থেকে হরিয়ানার হিংসা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছি।’’
তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে মণিপুরে জাতি সংঘর্ষ চললেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘নিজে ব্যথিত’ ছাড়া আর কিছু বলেননি। আবার সেকথাও সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন। কিন্তু বিরোধীদের দাবিমতো সংসদের ভেতরে এখনও মণিপুর নিয়ে মুখ খোলেননি। এমনকি তাঁর নীরবতা ভাঙতে ‘ইন্ডিয়া’র পক্ষ থেকে লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। এনিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ৮-১০ আগস্ট, বাদল অধিবেশনের একেবারে শেষ পর্যায়ে। তাও জবাবি ভাষণ প্রধানমন্ত্রী দেবেন কীনা, তাও খোলসা করা হয়নি শাসকগোষ্ঠীর তরফে। প্রধানমন্ত্রী দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ালেও মণিপুরে যাওয়ার প্রয়োজনবোধ করেননি। অথচ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি বামপন্থী সাংসদরা পৃথকভাবে ওই রাজ্যে গিয়ে দুর্গত মানুষের দুঃখের কাহিনী শুনে এসেছেন এরই মাঝে। সম্প্রতি ‘ইন্ডিয়া’র ২১ জন সাংসদ-প্রতিনিধি দু’দিন ধরে মণিপুরে থেকে ওখানকার হালহকিকত জেনে এসেছেন। একারণেই এদিন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে প্রধানমন্ত্রীকে ওই রাজ্যে পাঠানোর আরজি জানিয়ে এসেছেন বিরোধী সাংসদরা।
খাড়গে বলেন, ‘‘আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে দ্রুত বিবৃতি দিন সংসদে। সেই বিবৃতির ওপর বিস্তৃত এবং সুসংহত আলোচনা-বিতর্ক করুক সাংসদরা। এমনকি মণিপুরে শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দ্রুত রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ দাবিও করা হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’র পক্ষ থেকে। আমরা চাই, কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয় সরকারই ওই রাজ্যের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করুক। এই সহায়তা এখন ভীষণ জরুরি মণিপুরে সঙ্কটে থাকা মানুষের জন্য।’’ খাড়গে জানান রাষ্ট্রপতি তাঁদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং স্মারকলপি ও দাবিদাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই মনঃপূত হয়নি বিজেপি’র। তারা সেই ‘ফাটা রেকর্ড’র মতোই বিরোধীদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বলেছে, ‘ওরা মোটেই সংসদে আলোচনা চাইছে না মণিপুর নিয়ে। ওই কারণেই বিষয়টি এড়াতে অন্যত্র প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছে। অথচ সরকারপক্ষ আলোচনা হলে যথাযোগ্য জবাব দিতে প্রস্তুত।’ তবে বিজেপি’র তরফে সংসদে মণিপুর নিয়ে আলোচনার কথা বলা হলেও প্রধানমন্ত্রী মুখ খুলবেন কীনা, সেবিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। দলের অন্যতম নেতা সুনীল মোদী বলেছেন, ‘‘বিরোধীরা মণিপুর চলে গেলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে পারেন, কিন্তু সংসদে আলোচনায় অংশ নিতে পারছেন না।’’
এদিকে, মণিপুর নিয়ে হইচই হট্টগোলের জেরে এদিনও মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভার অধিবেশন। মধ্যাহ্নভোজের পর লোকসভা বসলে বিরোধী সদস্যরা মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির দাবিতে অধ্যক্ষের আসনের কাছে চলে যান। তাঁদের সঙ্গে বাদানুবাদ শুরু হয়ে যায় শাসকগোষ্ঠীর সাংসদদের। ফলে মুলতুবি ঘোষণা করে দেন অধ্যক্ষ।
একইভাবে মণিপুরের জাতি সংঘর্ষ নিয়ে আলোচনার দাবিতে সভাকক্ষ ছেড়ে চলে যান বিরোধীরা। তাঁরা অভিযোগ করেন, তাঁদেরকে বলতেই দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি খানিকক্ষণ মুলতুবির পর রাজ্যসভা আবার বসলে বিরোধীরা প্রতিবাদের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment