STORY — SOURAV DUTTA — MUKTADHARA | 3 JUNE 2024

গল্প — সৌরভ দত্ত | তোমার পতাকা যারে দাও — মুক্তধারা | ৩ জুন ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

STORY  SOURAV DUTTA  MUKTADHARA  3 JUNE 2024

গল্প

তোমার পতাকা যারে দাও

সৌরভ দত্ত

মুক্তধারা

 

গাছে আজ‌কাল আর একটাও শকুন বসে না।আগে বিকেল হলেই পাড়ের মাঠে ইউক্যালিপটাস গাছটায় থিকথিক করত শকুনের ঝাঁক।ভাগাড়ে গরু‌ মরলে তো আর কথাই নেই সোনায় সোহাগা। সেবার টেঁপির মায়ের অতবড় গরু মরল গণেশ মোড়লরা চার পায়ে দড়ি বেঁধে বাঁশের চৌদলায় ফেলে এল অকুস্থলে।গরুর নাড়ি ভুঁড়ি পেট থেকে টেনে বার‌ করে‌ কাড়াকাড়ি খেয়েছিল শকুন দল।তারপর অদ্ভুত এক দৃশ্য দেখা গেল শকুন গুলো কেমন নেতিয়ে পড়েছে। কয়েকটা ডানা ডাপটাচ্ছে মাটিতে পড়ে।ইয়া বড় বড় জাবদা ট্যাবলেটে‌ কাজ‌ না হওয়ায় গরুটাকে‌ একটা ইঞ্জেকশন মেরেছিল দিলু ডাক্তার। ডাইক্লোফেনাক মিশে যায় গরুর শরীরে। গরুর মাংস শকুনেরা তৃপ্তি করে খায়।এখন গ্রাম বাংলায় গরুর জাবর কাটার দৃশ্য বিরল। গরুর প্রসঙ্গ এলেই গো-রক্ষক ,রাম অবতাররা রে রে করে ওঠে।ডা.ডি.ডি মুখার্জি যাকে চোখ বন্ধকরে ভরসা করা যায়। অ্যালোপ্যাথি আর.এম পি ডাক্তার হলে কি হবে এই‌ তোতলা ডাক্তার রোগি‌ না হওয়ায় হাঁস,মুরগি,গবাদি‌ পশুর চিকিৎসা করে।আর মাঝেমধ্যে নীল-সাদা রঙ তাকে টানে। সরকারদের বৈঠক খানায় বসে রাতে ভোটে জেতার ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করে।মাছাল গ্রামে মানুষের নয় পশু চিকিৎসক হিসেবে দিলু ডাক্তারের বেশ হাঁকডাক। অ্যালোপ্যাথি বোর্ডে কেউ মস্করা করে লিখে গেছে এখানে দায়িত্ব সহকারে গবাদিপশুর চিকিৎসা করা হয়।দিলু ডাক্তার ঘাসফুল পার্টির মাদার কমিটির প্রেসিডেন্ট।শকুনের কথা হচ্ছিল শ্মশান ধারের শুকনো খটখটে ডালে শকুনেরা বসে থাকত। নিজেদের মধ্যে খুনশুটি করত শকুন ছানারা।নন্দর‌ মা‌ কুড়িয়ে‌ আনত শকুনের ডিম।আমরা সেই ডিম নিয়ে খেলতাম। আহ্লাদে আটখানা‌ হয়ে ছুঁড়ে দিতাম আকাশে। ডিম ফেটে ছত্রখান হত।আমার মেয়েটা‌ পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ক ড্রয়িং কম্পিটিশনে একটা বড় শকুনের কোলাজ বানিয়েছিল।ধূ ধূ ‌মরুভূমির মাঝখানে শকুনটা  দাঁড়িয়ে একা।বাগানটাও স্বার্থপর দৈত্য দের দখলে‌।এখন গ্রামে ঝাড়ুদার, চৌকিদার নেই। শকুন ও বিপন্ন প্রজাতির।স্কুলের মাঠটা দখল হয়ে গেছে ট্রাস্ট ফান্ড কমিটির বদান্যতায়।বেচারামের দলবল বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্কুলের পাশে থাকা মধুসূদন দাতব্য চিকিৎসালয়টা। ওখানে ছয়তলা বিল্ডিং হয়েছে নীল-সাদা।হারাধন‌‌ সেবার জোর ধরেছিল শুয়ে পড়েছিল বুলডোজার এর সামনে ।খুব মার খেয়েছিল লুম্পেন দের হাতে। বাঁদিকে চোখের কাটা দাগটা এখনো আছে। ক্ষমতায় আসার সব জায়গার শহিদ বেদি গুলো ভেঙে চুরচুর করে দিলেও স্কুল মাঠে নদীর ধারে থাকা শহিদ বেদি টায় হাত লাগাতে পারেনি কেষ্টা ও জগন্নাথদের দলবল। এখনো ওখানে শ্রমমুক্তির ডাকে পতপত করে মে দিবসের পতাকা‌ ওঠে। নিজের হাতে লাল কাস্তে হাতুড়ি আঁকে‌ তপাই‌ মুখুজ্জে।বেদিতে‌ সাদা রঙ‌ করে হারাধন ।যাকে‌ এলাকায় সবাই চাঁদু‌ বলে‌ চেনে।মুখুজ্জ্যের একটা নাটকের দল আছে ছন্নছাড়া নাট্যগোষ্ঠী।নাটক হয়–রথের রশি, বিসর্জন।শেষবার মঞ্চস্থ হয়েছিল স্বপ্নময় চক্রবর্তীর গল্প অবলম্বনে ‘পতাকার কাপড়’।

ছোট্ট নদীটা‌ ছুটে চলে বকুলতলার শ্মশানের পাশ দিয়ে‌। নদীর বেড় দখল হয়ে গেছে সর্বত্র। কৌশিকী বেলাভূমিতে কুশল সরকারের প্রাসাদোপম অট্টালিকা গড়ে উঠেছে। ঘাসফুল শোভিত পার্টি অফিস হাঙরের মত‌ দাঁড়িয়ে‌ নদীটার বুকের উপর। মাঝে ভাঙাচোরা সাঁকো।এপারে হিন্দুপল্লী‌ ওপারে সংখ্যালঘুদের বাস।তার মধ্যেই কারা যেন ঢুকিয়ে দেয় কলকারখানার দূষিত পচাজল।সংগ্রামী মঞ্চের তরফে ইরিগ্রেশন মিনিস্টারকে ও পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডে চিঠি দিয়েও কোনো কাজের কাজ হয়নি।নদীর ধারে শিরিষ গাছের শিকড়টা‌র মাটি ক্ষয়ে‌‌ ক্ষয়ে‌ নেমে‌ গেছে‌ মাটিতে।ইলেকশনের আগে গার্ডওয়াল হওয়ার কথা ছিল‌ তাও হয়নি।কাটমানি খেয়ে নিয়েছে আগের পঞ্চায়েত প্রধান। এলাকার নদী‌ দূষণ নিয়ে‌ স্কুলের সামনে‌‌ ব্যানার-পোস্টার নিয়ে পিকেটিং আন্দোলন করেছিল– হারাধন,ভংগাই,তারক,জয়দেব,হাবুদারা। পুলিশ ডেকে নিজেদের দলের গুন্ডাদের দিয়ে বামপন্থীদের উপর লাঠিচার্জ করাল। রক্ত ঝরল–মুখুজ্জের মনে পড়ে যাচ্ছিল ‘বিসর্জন’ নাটকের সংলাপ–“এত রক্ত কেন!”জয়দেব হাজরার মাথায় আটটা সেলাই হল।মহারানী সাঁতরার শাড়ী ধরে টান মারল দুঃশাসনের দল। ঝান্ডার ডান্ডাটা তুলে সেবার একা রুখে দাঁড়িয়েছিল হারাধন। এলোপাতাড়ি লাথি চালাতে‌ থাকল–ভয়ে ওরা পিছু‌ হঠেছিল।

এর মাঝে কৌশিকী দিয়ে গড়িয়ে গেছে অনেক জল। দক্ষিণ বাঁধ বরাবর বামফ্রন্টের লালদুর্গ ছিল। দিদির দল ক্ষমতায় আসার পর আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে‌ কিনতে চাইল। মানুষকে‌ কেনা অত সোজা।একটা‌ মানুষ মেরুদন্ড সোজা করে‌ দাঁড়িয়ে থাকা‌ একটা গাছ।অনেক‌ গাছ‌ আমফান ঝড়ে পড়ে‌ গেছে।সে সব গাছ রাতারাতি লোপাট হয়ে গেছে‌ জামিল সেখের দৌলতে।হারাধন গোলুই , জয়দেব হাজারার মতো শাসকের মুখে সপাট উত্তর দেওয়া গাছগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। গত‌ পঞ্চায়েত ভোটে একশোর বিরুদ্ধে একা‌ লড়েছে এই কমরেডরা। কদিন আগে লোকসভা ভোট গেল ।লোকের বাড়ির দেওয়ালে ইলেকট্রিক পোস্টে চারিদিকে উন্নয়নের ছড়াছড়ি। নারকেল গাছ, সুপুরি গাছ ,কলা গাছ এমনি হতচ্ছাড়ারা প্রস্রাবাগারকে‌ বাদ দেয়নি‌ নিজের দলের বিজ্ঞাপিত ব্যানার-পোস্টার-ফ্লেক্স সাঁটতে।মোড়ে মোড়ে হাত জোড় করে রাক্ষসের মতো দেঁতো হাসিতে বোতল বাঁড়ুজ্জে দাঁড়িয়ে আছে।দুহাত মিলিয়ে দশ আঙুলে দশটা‌ আঙটি।সি.পি এম পার্টি দিনমজুরের পার্টি ওদের বাপু অত‌ পয়সাকড়ি নেই। তোলাবাজি নেই। মাথায় কনট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশন এর সেক্রেটারির হাত নেই।লোকের থেকে‌ চেয়ে চিন্তে নির্বাচনর‌ ফান্ড তৈরি হয়।দিনে দুপুরে বোস পুকুরে গাছে গাছে ঝোলে ঘাসফুল।পাশে মন কি বাত এর বুলি সহ দেশটাকে দেউলিয়া করে‌ দেওয়ার কারিগর এর ছবি।এখন আবার তার থ্রিডি ভার্সন এসেছে।এই‌ হল গিয়ে হরিনাথ পুর গ্রামের চালচিত্র।

( আগামীী সপ্তাহে সমাপ্ত )

Comments :0

Login to leave a comment