State recruitment process

শূন্যপদ ফেলে রেখেই কর্মীদের উদ্বৃত্ত ঘোষণায় নেমেছে রাজ্য

রাজ্য

 বিপুল শূন্যপদে নিয়োগ নেই। সরকারি কর্মচারীদের উদ্বৃত্ত ঘোষণা করতে নেমেছে রাজ্য সরকার। 
‘ই গর্ভন্যান্স’-এর ফাঁদে সরকারি দপ্তরে কর্মচারীদের উদ্বৃত্ত ঘোষণা করার পথে হাঁটতে চলেছে নবান্ন। পরীক্ষামূলকভাবে খাদ্য দপ্তরকে দিয়ে শুরু হতে চলেছে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। শুরুতে কর্মচারীদের উদ্বৃত্ত ঘোষণা। পরবর্তী ধাপে উদ্বৃত্ত কর্মচারীদের শূন্যস্থান পূরণ করতে বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যার মধ্য দিয়ে শূন্যপদকে কার্যত চিরতরে অবলুপ্তির পথে নিয়ে যাওয়া হবে। 
কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘভাতার দাবির লড়াইয়ে সামনের সারিতে ছিলেন খাদ্য দপ্তরের কর্মচারীরা। প্রশাসনকে স্তব্ধ করে কর্মবিরতি থেকে ১০ মার্চ ধর্মঘটে নজিরবিহীন সাড়া পড়েছিল ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের খাদ্যশ্রী ভবনে। এমনকি ধর্মঘটে অংশ নেওয়া কর্মচারীদের প্রতিহিংসার বদলির বিরুদ্ধে চলছে আন্দোলন। তাই খাদ্য দপ্তরকেই নিশানা করে কর্মচারীদের উদ্বৃত্ত করার পরিকল্পনা করেছে নবান্ন। খাদ্য দপ্তরে পরিকল্পনার প্রভাব দেখে ধাপে, ধাপে অন্য দপ্তরে প্রসারিত হবে কর্মচারীদের উদ্বৃত্ত ঘোষণার নকশা। 
এমনিতে বর্তমান রাজ্য সরকার কাজ বলতে বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত উপভোক্তাদের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। তারজন্য বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি নির্ভর পরিষেবাতেই কাজ হয়ে যায়। প্রতি তিন মাস ছাড়া ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির আয়োজন। ফলে এই কাজের জন্য কর্মচারীদের উদ্বৃত্ত ঘোষণা করার জন্যই সরকারের হাতে অস্ত্র এখন অনলাইন ব্যবস্থা। 
সোমবার খাদ্য দপ্তরের তরফ থেকে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, খাদ্য দপ্তরে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি কাজে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থা চালু হয়েছে। প্রথাগত কাজের বাইরে গিয়ে প্রযুক্তি মাধ্যমে চালু হয়েছে ই বিলিং, অনলাইন বরাদ্দ, অনলাইন রেশন দোকানের শূন্যস্থান, ওয়েব পোর্টাল ও ই অফিসের মাধ্যমে কাজ পরিচালনা করতে গিয়ে খাদ্য দপ্তরের কলকাতার সদর দপ্তরে কর্মচারীদের কাজের চাহিদা কমছে। ফলে খাদ্য দপ্তরের অধীন ১১টি ডিরক্টরেটের কর্মচারীদের একটা বড় অংশকেই এখন উদ্বৃত্ত ঘোষণার পথে হাঁটছে খাদ্য দপ্তর। 
এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বুধবার থেকেই ফের আন্দোলনে নামছেন খাদ্য দপ্তরের কর্মচারীরা। এই নির্দেশিকা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসনের সঙ্গে পূর্ণ অসহযোগিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্মচারীরা। 
উদ্বৃত্ত কর্মচারীদের খাদ্য দপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলায় পাঠানো হবে। কেন জেলায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত? সরকারি নির্দেশিকাতে জানানো হয়েছে, জেলায় এই মুহূর্তে ধান কেনার জন্য চালু ক্রয় কেন্দ্রে কর্মচারীর প্রয়োজন। একইসঙ্গে জনস্বার্থের কথা উল্লেখ করে জানানো হয়েছে, রেশন ব্যবস্থা মসৃণভাবে চালানোর জন্য জেলাগুলিতে সদর দপ্তর থেকে উদ্বৃত্ত কর্মচারীদের পাঠানো হবে। তাহলে জেলাস্তরে কর্মচারীদের শূন্যপদ পূরণের কী হবে? এখানেই আশঙ্কা। আসলে জেলাস্তরে যে বিপুল সংখ্যায় শূন্যপদ পড়ে আছে তা এখন উদ্বৃত্ত ঘোষিত কর্মচারীদের দিয়ে পূরণ করিয়ে নিয়ে চিরতরে অবলুপ্ত করে দেওয়া হবে সরকারি পদগুলিকে।
সোমবারই খাদ্য দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে এই ভয়াবহ নির্দেশিকা প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন কর্মচারী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। সূত্রের খবর, ওই আলোচনাতেই শীর্ষ আধিকারিকরা জানিয়ে দিয়েছেন, উদ্বৃত্ত কর্মচারীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আপাতত ২৫০জনের তালিকা হাতে নিয়ে বসে আছেন আধিকারিকরা। সেই তালিকা ধরে প্রথম পর্বেই ১৪জন কর্মচারীকে বাছাই করে এক ডায়রেক্টরেট থেকে দপ্তরেরই অন্য ডায়রেক্টরটে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। আগামীদিনে এই তালিকায় আরও অনেক কর্মচারীই আছেন বলে জানা গেছে। কীভাবে বদলি করা হচ্ছে? কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকায় খাদ্য দপ্তরের সচিবালয়ে ১১টি ডায়রেক্টরেট আছে। তারমধ্যে ডায়রেক্টরেট অব ফিনান্স থেকেই উদ্বৃত্ত কর্মচারীদের প্রাথমিক পর্যায়ে বদলি করে পাঠানো হয়েছে খাদ্য সরবরাহ বিভাগে (ডিপিএস)। পরিকল্পনা হচ্ছে এটাই, ডায়রেক্টরেট অব ফিনান্সের জেলায় কোনও শাখা নেই। সচিবালয়েই একমাত্র দপ্তর। তাই ফিনান্স থেকে ডিপিএস’এ বদলি করে ওই কর্মচারীকেই পাঠিয়ে দেওয়া হবে দূরদূরান্তের জেলাতে। যাঁদের বদলি করা হবে তাঁদের বেতন হবে কলকাতা থেকে। সার্ভিস বুক থাকবে সদর দপ্তরে। কিন্তু কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করে দেওয়া হবে। 
প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, করোনার সময় থেকে রাজ্য প্রশাসন কর্মচারীদের নিয়ে জল মাপার কাজ শুরু করেছিল। গত ২০২০ সালের ২৬ মে থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত লকডাউন পর্বে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ চালু করেছিল রাজ্য সরকার। পরবর্তী পর্যায়ে ৫০ শতাংশ উপস্থিতি তারপরে ৭০ শতাংশ উপস্থিতি শেষ পর্বে সমস্ত কর্মচারীকে দপ্তরে এসে কাজ করার নির্দেশিকা জারি হয়েছিল। ওই সময় থেকেই কর্পোরেট স্টাইলে কর্মচারী ছাঁটাই করার পরিকল্পনার সলতে পাকানো শুরু হয়েছিল। জনগণের সঙ্গে সরাসরি পরিষেবা প্রদানের সঙ্গে কাজ প্রযুক্তির মাধ্যমেই করে নেওয়া সম্ভব। তার বাইরে সরকারি যে কাজ পড়ে থাকে তারজন্য এই কর্মচারীর আর প্রয়োজন নেই। এখন সেই পরিকল্পনাই খাদ্য দপ্তরকে দিয়ে শুরু করতে চলেছে রাজ্য সরকার।
 

Comments :0

Login to leave a comment