Teachers movement

হার মানলো প্রশাসন, নবান্নে গিয়ে ডেপুটেশন দিল নেতৃত্ব

রাজ্য

নবান্ন অভিযান করার আগে ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’র অনুমতি আছে কীনা জানতে চেয়েছিল মমতা ব্যানার্জির পুলিশ। আদালতের রায়ের চাপে বৃহস্পতিবার সেই পুলিশই হাওড়া ময়দান থেকে যৌথ মঞ্চের তিন নেতৃত্বকে ‘এসকর্ট’ করে পৌঁছে দিয়েছেন নবান্নে।
সাড়ে চার বছর আগে ২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর নবান্নে পৌঁছে গিয়েছিলেন রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির একঝাঁক নেতা। বেতন কমিশন কার্যকর করার দাবি নিয়ে যাওয়া কর্মচারী নেতৃত্বকে সেদিন পুলিশ নবান্ন চত্বর থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গিয়েছিল শিবপুর থানায়। এদিন নবান্নের সপ্তম তলায় নিয়ে গিয়ে ডেপুটেশন জমা নিয়ে কর্মচারী নেতৃবৃন্দকে সমাবেশস্থলে ফেরত পাঠায় প্রশাসনই।
১০ মার্চের ধর্মঘটে এরাজ্যের সরকারি কোষাগার থেকে বেতন প্রাপক কর্মচারী, শিক্ষক, শ্রমিক আসলে সরকারকে দেখিয়ে দিয়েছে তাঁদের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে। পরিস্থিতির এই গুণগত পরিবর্তনের নেপথ্যে ভূমিকায় কর্মচারীদের নাছোড় জেদ। তাই বকেয়া মহার্ঘভাতার দাবি, শূন্যপদে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ, অনিয়মিত কর্মীদের স্থায়ীকরণের দাবি নিয়ে যৌথ মঞ্চের নবান্ন অভিযান পুলিশ প্রথমে আটকাতে চেয়েছে। আদালতে সরকারকে বেআব্রু করে আন্দোলনের দাবি আদায় করে নিয়ে এসেছেন কর্মচারীরা। এদিন প্রশাসনের সব হুমকি উড়িয়ে দিয়ে হাওড়া স্টেশন থেকে ময়দানের দখল নিয়ে রাখে কর্মচারী শিক্ষকসহ রাজ্য কোষাগারের বেতন প্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীরা।
ধর্মঘটে অংশ নেওয়ার জন্য প্রতিহিংসার বদলির ফরমান রুখে দেওয়ার লড়াই জারি রেখেছেন কর্মচারীরা। আর এদিন হাওড়া স্টেশন লাগোয়া ফেরিঘাট থেকে কর্মচারীর স্রোত শহর হাওড়াকে কার্যত অবরুদ্ধ করে সরকারকে জানিয়ে দিয়ে গেছে, এখানেই শেষ নয়। নবান্ন যদি কর্মচারীদের দাবিকে মান্যতা না দেয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে নবান্ন অবরুদ্ধ করে লড়াই হবে। 
কোচবিহারে, কৃষ্ণনগরে যখন একের পর এক ব্যারিকেড ভেঙে ছাত্র-যুবরা নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করছেন, তখন হাওড়া স্টেশন হয়ে বঙ্কিম সেতু পার হয়ে জেলা শাসকের বাংলোকে পাশে রেখে আদালতের নির্দেশিত পথে এগিয়ে গিয়েছে যৌথ মঞ্চের মিছিল। 
সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, পরিবহণ কর্মচারী, পঞ্চায়েত কর্মচারীদের মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের ব্যা রিকেড, জল কামান, টিয়ার গ্যারস হাতে পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল রাস্তায়। মিছিলের যাত্রাপথ সিসিটিভি ক্যা মেরায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রখর গরমে কর্মসূচিতে যাঁরা আসবেন, তাঁদের জন্য হাওড়া পৌর নিগমের কাছে পানীয় জল সরবরাহ করার জন্য অনুরোধ জানানো হলেও পৌরসভার পক্ষ থেকে সেই অনুরোধ মানা হয়নি। শত বাধা উপেক্ষা করেই মিছিল শেষে যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরি বলেছেন, আদালতের নির্দেশ মেনে আমরা চলব। তবে আমাদের দাবির প্রতি আমরা অনড়। সরকারকে সময় দিলাম। এরপর যদি সরকারের টনক না নড়ে আমাদের পরিবার নিয়ে পথে নামবো।  
এদিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যেির বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মীরা ট্রেনে বাসে করে হাওড়া লঞ্চ ঘাটে আসতে শুরু করেন। মিছিল শুরুর ঘোষিত সময়ের বহু আগেই জনজোয়ারে ভেসে যায় হাওড়া স্টেশনের বাইরের অঞ্চল। সকলেরই গন্তব্যওস্থল লঞ্চ ঘাট। স্তব্ধ হয়ে পড়ে যানচলাচল। পুলিশের পাশাপাশি যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায় যৌথ মঞ্চের স্বেচ্ছাসেবকদের। স্টেশনের বাইরে জায়গা না পেয়ে ট্রেনে করে যাঁরা এই কর্মসূচিতে এসেছিলেন তাঁদের বাধ্য  হয়েই স্টেশনের ভিতরেই অপেক্ষা করতে হয়। হাওড়া লঞ্চঘাট থেকে মিছিল শুরু হয়ে হাওড়া ময়দানে শরৎ সদনের সামনে সমাবেশস্থলে এসে মিছিল আসার পর শুরু হয়ে যায় সভা। বিকাল পৌনে চারটায় শুরু হওয়া সভার আধ ঘণ্টা পরেও বঙ্কিম সেতু পার হয়ে আসতে থাকে মিছিল। সেই মিছিলে পা মিলিয়েছেন সরকারি পরিবহণ নিগমের শ্রমিক কর্মচারীরা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী, ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কর্মচারীরা।
গরমকে উপেক্ষা করেই হাজারে হাজারে সরকারী কর্মচারীরা পথে নেমে মিছিলে হেঁটেছেন। মিছিল থেকে শুধুমাত্র নিজেদের দাবির সর্মথনে যেমন স্লোগান উঠেছে তেমনি স্লোগান উঠেছে অবিলম্বে স্বচ্ছভাবে শূন্যপদে নিয়োগ, নিত্যলপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমানো, ধর্মের নামে রাজনীতি বন্ধ করা সহ বিভিন্ন দাবির সর্মথনে স্লোগান ওঠে। নিজেদের ন্যায্য আর্থিক দাবিতেই আটকে ছিল না এদিনের নবান্ন অভিযান। সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিতে যৌথ মঞ্চের অন্যতম নেতা সন্দীপ রায় বলেছেন, ‘‘বেকারদের এখন চা, চপ আর মুড়ির দোকান দিতে বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। এরজন্যই কী মানুষ আপনাদের ভোট দিয়েছিল। চা-চপ বিক্রি করেই যদি জীবন চলে, তাহলে ওনার ভাইপোকে দিয়ে শুরু করছেন না কেন?’’ মিছিলে সহমর্মিতা জানিয়ে এসেছিলেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতৃত্ব। তাঁদের হয়ে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সন্দীপ ঘোষ। সমাবেশ থেকেই  দেবব্রত রায়, সুকুমার পাইন ও তাপস ত্রিপাঠী তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল নবান্নে গিয়ে ডেপুটেশন জমা দেন। 
 

Comments :0

Login to leave a comment