Visva Bharati Convocation Postponed

পড়ুয়াদের আন্দোলনকে অজুহাত করে স্থগিত রাখা হলো বিশ্বভারতীর সমাবর্তন

রাজ্য

Visva Bharati Convocation Postponed

এবার উপাচার্যর বাংলোর গেটে চড়ে বিক্ষোভ দেখালো এসএফআই। উপাচার্যর সঙ্গে দেখা করার দাবিতেই ছিল সেই বিক্ষোভ। বাধা দিয়েছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। হয়েছে তুমুল বাদানুবাদ, টানাহ্যাঁচড়া। এর কিছু পড়েই বিশ্বভারতী ঘোষণা করেছে, আগামী ১১ ডিসেম্বর হবে না সমাবর্তন। আপাতত তা স্থগিত রাখা হলো। কারণ হিসাবে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনকে অজুহাত করা হয়েছে। ফলে ফের সরগরম বিশ্বভারতী। 
গত ১৬ দিন ধরে উপাচার্যর বাংলোর যাওয়ার পথে অবস্থানে শামিল রয়েছেন আন্দোলনরত পড়ুয়ারা। এসএফআই নেতা সোমনাথ সৌয়ের স্নাতকোত্তরে ভর্তি অন্যায়ভাবে আটকে রাখা সহ অন্য পড়ুয়াদের একইরকম হেনস্তা এবং গত পাঁচ বছর ধরে অধ্যাপক-কর্মীদের সাসপেন্ড, শো-কজ, বদলিকে রোজনামচায় পরিণত করা সহ উপাচার্যর স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। পড়ুয়াদের আন্দোলনের জেরে উপাচার্য ‘গৃহবন্দি’ হয়ে রয়েছেন। পড়ুয়াদের স্পষ্ট দাবি, উপাচার্য তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হোন। কিন্তু উপাচার্যর দিক থেকে কোনওরকম ইতিবাচক সাড়া এখনও মেলেনি বলেই অভিযোগ আন্দোলনরত পড়ুয়াদের। 


আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে এদিন দেখা করেছে এসএফআইয়ের এক প্রতিনিধিদল। তারপর প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উপাচার্যর সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁর বাংলোতে ঢুকতে যেতেই প্রবল বাধার মুখে পড়তে হয়। চরম বাকবিতণ্ডা হয় উভয় পক্ষের মধ্যে। এরপর এসএফআই’র নেতা-কর্মীরা উপাচার্যর বাংলোর গেট টপকে ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। নিরাপত্তারক্ষীরাও মরিয়া হয়ে বাধা দেন। এই নিয়ে ধুন্ধুমার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় উপাচার্যর বাংলো ‘পূর্বিতা’র সামনে। বেশ কিছুক্ষণ বাদানুবাদ, তর্কাতর্কির পরে নিরাপত্তারক্ষীদের তরফে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলবেন। প্রতিনিধিদল যায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। 


পরে এসএফআই বীরভূম জেলা কমিটির সম্পাদক সৌভিক দাস বকশি জানান, ‘‘আমরা রেজিস্ট্রারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁর অন্য কর্মসূচি থাকার জন্য দেখা হয়নি। আমরা শীঘ্রই দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে তাঁর সঙ্গে দেখা করব, এটা জানিয়ে এসেছি।’’ 
এদিন বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন এসএফআই’র রাজ্য সহসভাপতি দেবাঞ্জন দে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়েছেন, ‘‘উপাচার্য আসলে ক্যাম্পাসে বিজেপি-আরএসএস’র হয়ে দালালি করছেন। চরম আক্রমণাত্মক আচরণ করছেন। সোমনাথ সৌ প্রতিবাদ করেছে বলে তাকে ন’মাস সাসপেন্ড করা হয়েছিল। এখন স্নাতকোত্তরে ভর্তি হতে দিচ্ছেন না উপাচার্য। অথচ হাইকোর্টের নির্দেশ আছে সোমনাথের পক্ষে। উপাচার্যর যা খুশি তাই শাসনে শান্তিনিকেতন জুড়ে ভয়-ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তাঁর কাছে যেতে গেলে পাঁচটা গেট, পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয় পেরিয়ে যেতে হয়। এই পরিবেশ, এই অচলাবস্থা বিশ্বভারতীর মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলতে পারে না।’’ 


এদিন দিনভর ফের ছাত্র-বিক্ষোভে বিশ্বভারতী সরগরম থাকার পর বিকেলের দিকে বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া ব্যানার্জি বার্তা দেন, ‘‘পড়ুয়াদের অনড় মনোভাবের জন্য উপাচার্য গত দু’সপ্তাহ ধরে নিজের বাংলো থেকে বের হতে পারছেন না। ফলে আসন্ন সমাবর্তনের প্রস্তুতিতে নজরদারি করতে পারছেন না। সেই কারণে এমন পরিস্থিতিতে পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আগামী ১১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে হতে চলা সমাবর্তন স্থগিত রাখা হচ্ছে।’’ 


এই ঘোষণার পরেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে ক্যাম্পাস জুড়ে। কারণ, আর মাত্র তিন দিন বাদেই ছিল সমাবর্তন। তাতে উপস্থিত থাকার কথা ছিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের। তার জন্য এদিন সকালেই বিশ্বভারতী পরিদর্শন করেছেন জেলা ও দায়রা বিচারক সহ জেলার অন্যান্য বিচারক এবং পুলিশের শীর্ষকর্তারা। তারপরই বিশ্বভারতীর এমন সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে এসেছে। 


বিশ্বভারতীর এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে সোমনাথ সৌ জানিয়েছেন, ‘‘উপাচার্য ছলনা করছেন। আমরা এক দিন আগেই প্রধান বিচারপতিকে ই-মেল মারফত বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সামগ্রিক পরিস্থিতির কথা জানিয়েছি। উপাচার্য সমাবর্তনকে হাতিয়ার করে বেরনোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। পড়ুয়াদের নিয়েই তো সমাবর্তন। সেই পড়ুয়ারা যখন আক্রান্ত খোদ ক্যাম্পাসে, তখন সমাবর্তনের মূল্য কী!’’

Comments :0

Login to leave a comment