Land selling

সরকারি জমি খোলা বাজারে বেচতে নির্দেশিকা রাজ্যের

রাজ্য

 জমি বিক্রি করে নগদে কত টাকা আয় হবে তার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে গাইডলাইন তৈরি করল নবান্ন! 
রাজ্য সরকারের প্রতিটি দপ্তরের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে অর্থ দপ্তরের তৈরি করা গাইডলাইন। অর্থ দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ সরকারের প্রতিটি দপ্তরের প্রধান সচিবদের কাছে একটি নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন। সেই নির্দেশিকাতেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজ্য সরকারের প্রতিটি দপ্তর, সরকার অধিগৃহীত সংস্থা ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে যে জমি আছে তা বিক্রি করে নগদ আয় কত হতে পারে তার জন্য একটি গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। সরকারি জমিকে মসৃণভাবে বিক্রি করার জন্য এই গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যেই সরকার অধিগৃহীত সংস্থার জমি বিক্রি করা শুরু হয়ে গেছে। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ, কেএমডিএ, শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদ সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমি বিক্রি করেও আশ মিটছে না নবান্নের। এবার তাই সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের হাতে থাকা বিপুল জমি যাতে বিক্রি করে কোষাগারে ঢোকানো যায় তার জন্য জমি বিক্রির গাইডলাইন তৈরি করতে হচ্ছে। রাজ্যের সমস্ত সরকারি জমিকে বিক্রি করার সিদ্ধান্তে গত জানুয়ারি মাসেই সিলমোহর দিয়েছিল রাজ্য মন্ত্রীসভা। মমতা ব্যানার্জির সরকার মন্ত্রীসভার বৈঠক থেকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সরকার এখন থেকে আর কোনও জমি লিজ দেবে না। বরং লিজ হোল্ড জমিকে বিক্রি করার জন্য ফ্রি হোল্ড করে দেওয়া হবে। সরকারি সম্পদ বিক্রির নীতিগত সিদ্ধান্ত মন্ত্রীসভা থেকে অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার আর সময় নষ্ট করতে চায়নি মমতা ব্যানার্জির সরকার। দপ্তরের হাতে পড়ে থাকা জমি বিক্রি করে নগদ কত টাকা আয় হবে নিশ্চিত করতে গাইডলাইন বানাচ্ছে তথাকথিত মা মাটি মানুষের সরকার। 
নবান্ন সূত্রের খবর, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের হাতে এই মুহূর্তে প্রায় ২০ হাজার একর জমি আছে। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরের হাতে পড়ে থাকা জমির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছিল। মূলত এরাজ্যে শিল্পায়নের স্বার্থে জমি চিহ্নিত করার জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। শিল্পায়ন তো দূর। এখন সেই চিহ্নিত হয়ে থাকা জমিকেই খোলা বাজারে বিক্রি করতে উঠে পড়ে লেগেছে মমতা ব্যানার্জির সরকার। রাজ্যের ভূমি সংস্কার দপ্তরের এক আধিকারিকের বক্তব্য,‘‘সরকার গাইডলাইন দিয়ে জমি বিক্রি করে নগদ আয় করার ফল মারাত্মক। এরপর সব দপ্তরের জমি বিক্রি করার জন্য ঝাঁপানো ছাড়া আর কোনও কাজ থাকবে না।’’ 
জমি বিক্রি করে নগদ টাকা সরকারি কোষাগারে আনার জন্য ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর নেতৃত্বে বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষকর্তাদের নিয়ে ‘কমিটি অব সেক্রেটারিজ’ গঠন করা হয়েছে। জমি বিক্রির গাইডলাইনে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হাতে থাকা জমির নগদ মূল্য কত তা ঠিক করতে হবে। একইসঙ্গে পড়ে থাকা জমির ওপর কোনও দখলদার আছে কি না তা দেখার কথা বলা হয়েছে। মূলত দখলদার মুক্ত জমিকেই প্রথম চিহ্নিত করে নগদ মূল্য নির্ধারণ করে দপ্তরগুলি পাঠাবে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে তৈরি হওয়া সচিবদের কমিটির কাছে। জমি বিক্রির এই সরকারি কমিটি দপ্তরের পাঠানো বিক্রির প্রস্তাব বিচার বিবেচনা করবে। কমিটির বিবেচনায় দপ্তরের পাঠানো দাম সঠিক মনে হলে তা বিক্রির চূড়ান্ত সিলমোহরের জন্য পাঠানো হবে মন্ত্রীসভায়। এরপরই মন্ত্রীসভার বৈঠক থেকে রাজ্যের সরকারি সম্পদকে বিক্রি করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মন্ত্রীসভার বৈঠকে যাওয়ার আগে যে জমি বিক্রি হবে তার তথ্য পাঠানো হবে ভূমি সংস্কার দপ্তরের কাছে। 
মন্ত্রীসভা থেকে জমি বিক্রির অনুমোদন আসার পর সংশ্লিষ্ট দপ্তর জমির বর্তমান বাজারদর কত যাচ্ছে, সেই সংক্রান্ত সংগ্রহ করবে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব রেজিস্ট্রেশন (আইজিআর) দপ্তরের কাছ থেকে। জমি বিক্রির বাজারদর ঠিক রাখার জন্য দপ্তরগুলির কাছে জমির সঠিক এলাকা, জমির লাগোয়া রাস্তা সহ অন্যান্য পরিকাঠামো জানাতে বলা হয়েছে। এমনকি ওই জমি কোন উদ্দেশ্যে দপ্তর বিক্রি করতে চাইছে সেটাও উল্লেখ করার কথা গাইডলাইনে জানানো হয়েছে। জমির বাজারদর জানার পর সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সাত দিনের মধ্যে বিক্রির টেন্ডার দিতে বলা হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয় চালু হওয়ার পর দু’তিনবার কোনও ক্রেতা না পাওয়া গেলে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় বিক্রির শর্ত পরিবর্তন করার কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থ দপ্তরের অনুমোদন নিয়েই এই কাজ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 
রাজ্যের এক শীর্ষ আধিকারিকের বক্তব্য,‘‘সরকারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়, এই প্রশ্নকে সাজিয়ে এরাজ্যের সরকারি সম্পদকে বিক্রি করে দেওয়া হবে। স্বাধীনতার পর থেকে দেশ গঠনের জন্য সরকার এই জমি অধিগ্রহণ করেছিল। এখন সেই বিপুল জমিকেও বিক্রি করে দেওয়া হবে।’’

 

Comments :0

Login to leave a comment