কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটির সুর বদল এবং অন্তর্নিহিত ভাব বদলে ফেলার অভিযোগ উঠল সুরকার এআর রহমানের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই এই বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘ’র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির তরফেও এর তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
এদিন সংঘ’র তরফে প্রেস বিবৃতি জারি করেন সংগঠনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পবিত্র সরকার ও রজত বন্দোপাধ্যায়। বিবৃতিতে সংঘ বলেছে, ‘‘ সম্প্রতি ‘পিপা’ নামের একটি হিন্দি সিনেমায় কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টি ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটির এআর রহমানকৃত রূপ আমাদের নজরে এসেছে। এই নতুন রূপটি শুনলে বোঝা যায় সুরকার এই গানের অর্থ এবং আবেগ সম্পর্কে সম্যক অবহিত না হয়েই সুরটি করেছেন। এই গান আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের হৃদয়ে অবস্থিত ছিল। এই গান গেয়ে মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ও অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কন্ঠে গীত হত এই গান।’’
পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘ মনে করছে, ‘‘কপিরাইট না থাকার সুযোগে এবং শিল্পীর স্বাধীনতার আড়ালে এই ধরণের গানগুলির ওপর বাণিজ্যিক সিনেমার স্থূল হস্তাবলেপন অত্যন্ত আপত্তিকর।’’
তাঁরা জানিয়েছেন, ‘‘আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করছি, এবং দাবি করছি গানটি যদি সিনেমা ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে তা মূল সুরটিকে অক্ষত রেখেই করা হোক।’’
ইতিমধ্যেই এই সুর বিকৃতি নিয়ে মুখ খুলেছেন কাজী নজরুল ইসলামের নাতি তথা সঙ্গীতশিল্পী কাজী অরিন্দম। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কোন অধিকারে বহুদিন পুরনো এই গান তিনি বদলে দিতে পারেন?’’
এর পাশাপাশি পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, দেবজ্যোতি মিশ্র প্রমুখ বিশিষ্টরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রসঙ্গত, ‘পিপা’ সিনেমার এই গানে রহমানের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন এক ঝাঁক বাঙালি শিল্পীও। প্রশ্ন উঠছে, শুধুমাত্র এআর রহমানের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহে তাঁরা এই বিচ্যুতি কিভাবে মেনে নিতে পারলেন?
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফেসবুক এবং টুইটারে এই গানের সুর নিয়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। একের পর এক ফেসবুক এবং টুইটার ব্যবহারকারী সমালোচনায় সরব হন। কারোর দাবি, শিল্পীদের রাজনৈতিক চেতনা তলানিতে ঠেকার ফলেই যেকোনও গান যেকোনও ভাবে উপস্থাপনা করার সাহস দেখাতে পারছেন তাঁরা। কেউ কেউ সরাসরি দাবি তুলেছেন, রহমানকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং ‘কারার ঐ লৌহ কবাট’ গানটির অন্তর্নিহিত ভাব বজায় রেখে ফের প্রকাশ করতে হবে গানটি।
পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বাংলাদেশেও তোলপাড় পড়ে গিয়েছে এই গানটির বিচ্যুতি নিয়ে। বাংলাদেশের জাতীয় কবি হলেন কাজী নজরুল ইসলাম। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর অন্যতম কালজয়ী সৃষ্টির এমন অমর্যাদা মেনে নিতে পারছেন না ‘ওপার বাংলার’ মানুষ।
Comments :0