Pawan Khera arested

বিমান থেকে নামিয়ে গ্রেপ্তার কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাকে

জাতীয়

বেপরোয়া মোদী সরকার বিমান থেকে নামিয়ে এনে গ্রেপ্তার করল কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ নেতা পবন খেরাকে। এরপর দিনভর উত্তেজনার শেষে জামিন পেলেন কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা। প্রথমে সুপ্রিম কোর্ট এবং পরে দিল্লির এক আদালত পবনের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করে। বৃহস্পতিবার সকালে রায়পুর যাওয়ার পথে দিল্লিতে বিমান থেকে নামিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল আসাম পুলিশ। বিজেপি নেতৃত্ব এবং পুলিশের চোখে তাঁর ‘অপরাধ’, তিনি নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রধানমন্ত্রীর নাম বিকৃত করেছিলেন এক সাংবাদিক সম্মেলনে। এমন কোনও ঘটনায় গ্রেপ্তার করা যায় কীনা সেই প্রশ্ন তুলে ‘‘ভারতীয় গণতন্ত্রকে দিনে দিনে ‘হিটলার-শাহী’ এবং ‘একনায়কতন্ত্রে’ পরিণত করেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার’’ বলে তীব্র নিন্দা করেছে কংগ্রেস।
রায়পুরে কংগ্রেসের প্লেনারি অধিবেশনে যোগ দিতে এদিন সকালে দিল্লিতে বিমান ধরতে যান পবন খেরা। সঙ্গে ছিলেন সুপ্রিয়া শ্রীনাতে, রণদীপ সিং সূরযেওয়ালা, কে সি বেণুগোপাল সহ অন্য নেতারা। বোর্ডিং পাস নিয়ে বিমানে বসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে নামিয়ে আনা হয় দিল্লি পুলিশের এক ডিসি কথা বলতে চান একথা জানিয়ে। তখনই তাঁকে আটক করা হয়। পরে আসাম পুলিশ খেরাকে গ্রেপ্তার করে। এনিয়ে প্রথমে আসাম পুলিশের সঙ্গে কংগ্রেস নেতাদের বাগবিতণ্ডা হয়। বিমানের আরেক যাত্রী তথা কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা কে সি বেণুগোপাল অভিযোগ করেন, মোদী সরকার একদল দুষ্কৃতীর মতো আচরণ করছে। খেরাকে গ্রেপ্তারের ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনাথে। এরপরই দেশজুড়ে শোরগোল শুরু হয়। গ্রেপ্তারের পরেই খেরার সঙ্গে থাকা কংগ্রেস নেতারা বিমান থেকে নেমে এসে বিমানবন্দরের টারমাকে বসে পড়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। এই প্রতিবাদ চলে দীর্ঘক্ষণ। দিল্লি পুলিশ দায় এড়াতে দাবি করে, ‘তারা স্রেফ আসাম পুলিশকে সহায়তা করেছে খেরাকে আটকানোর জন্য। গ্রেপ্তার করেছে আসাম পুলিশ।’ এই গ্রেপ্তার করা হয়েছে হাফলঙ থানায় দায়ের করা একটি অভিযোগের ভিত্তিতে। তবে প্রধানমন্ত্রীর নাম ‘বিকৃত’ করার জন্য বিজেপি নেতারা খেরার বিরুদ্ধে আসামের পাশাপাশি উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌ এবং বারাণসীতেও অভিযোগ দায়ের করে রেখেছিল। একারণেই এদিন কংগ্রেসের দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ আসাম এবং উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকারের মতামত জানতে চেয়ে নোটিস পাঠিয়েছে।


এদিন খেরার গ্রেপ্তারের খবর চাউর হতেই পবনের জামিনের আরজি নিয়ে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি তড়িঘড়ি মামলা দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টে। গ্রেপ্তারির বিরোধিতা এবং তাঁর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দায়ের হওয়া অভিযোগকে একসঙ্গে নথিভুক্ত করে জামিনের আবেদন জানান পবন। তাঁর আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বেলা ২টোর মধ্যে মামলা নথিভুক্ত করে আরজি জানান এবং সেই ভিত্তিতে চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়ে যায়। অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আরজি জানিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘পবন মুখ ফস্কে ওই কথা বলে ফেলেছিলেন। এরজন্য ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন।’’ অবশ্য জামিনের বিরোধিতা করে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাতি এজলাসে পবন খেরার সেই ভিডিও ক্লিপিংস দেখিয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান করার জন্যই ওইভাবে সাংবাদিক সম্মেলনে নাম বিকৃত করেন উনি।’ এরপরে বেঞ্চ পবনের মন্তব্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেও আগামী সোমবার পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতেই এরপরে সন্ধ্যায় দিল্লির এক আদালতও পবনের জামিন মঞ্জুর করে।


উল্লেখ্য, আদানির দুর্নীতির তদন্তের জন্য জেপিসি গঠনের দাবিতে গত সপ্তাহে এক সাংবাদিক বৈঠক করেন খেরা। এই বৈঠকে তিনি বলেন, দুর্নীতির তদন্তের জন্য নরসিমা রাওয়ের আমলে জেপিসি গঠন করা হয়েছিল। অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলেও দুর্নীতির তদন্তের জন্য জেপিসি গঠন হয়েছিল। এখন ‘নরেন্দ্র গৌতমদাস’ আমলে... বলে তিনি তৎক্ষণাৎ কথা থামিয়ে বলেন, জেপিসি গঠনে নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর আপত্তি কেন? ‘দামোদরদাস’র জায়গায় ‘গৌতমদাস’ বলায় খেরা নাকি নরেন্দ্র মোদীর বাবাকে অপমান করেছেন, এই অভিযোগ তুলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রথমে আসামের হাফলং থানায় এজাহার দায়ের করেন এক বিজেপি কর্মী। আসাম পুলিশও এজাহারকে গুরুত্ব দিয়ে তৎক্ষণাৎ মামলা নথিভুক্ত করে খেরাকে ধরতে তোড়জোড় শুরু করে দেয় এবং এদিন সকালে দিল্লিতে বিমান থেকে নামিয়ে গ্রেপ্তারও করেছিল।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই খেরাকে গ্রেপ্তার করেছে আসাম পুলিশ বলে অভিযোগ করেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। এক টুইটে খাড়গে বলেন, ‘‘স্বৈরাচারী শাসন চালাচ্ছেন মোদী। আদানি নিয়ে বিরোধীদের মুখ বন্ধ করতে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করতে চাইছেন। দেশের গণতন্ত্রকে ‘হিটলার শাহী’-তে নামিয়ে আনতে চাইছেন।’’ মুক্তি পাওয়ার পর পবন খেরা বলেন, ‘‘দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত আছি। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আরও বড় লড়াই হবে।’’ সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ সিং যাদব অভিযোগ করেন, ‘‘বিজেপি’র আইন, সংবিধান এবং গণতন্ত্রের প্রতি কোনও আস্থাই নেই।’’

 

Comments :0

Login to leave a comment