HS RESULT

ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার নয়, কেউ গবেষক, অধ্যাপক কিংবা আইএএস অফিসার হতে চায়

রাজ্য

 

বাঁধাধরা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার নয়, বরং প্রধানত গবেষণা এবং অধ্যাপনাকেই জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে এবারের উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থানাধিকারীরা। তাদের বক্তব্য, একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে ধারাবাহিক অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে। পড়াশোনা করতে হবে আনন্দ করে, তাহলে সাফল্য আসতে বাধ্য। অনেকের ক্ষেত্রেই আর্থিক প্রতিকূলতা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু দারিদ্রকে হার মানিয়েই তারা আজ কৃতীদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। 
ভবিষ্যতে অর্থনীতি নিয়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা করতে চায় উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম শুভ্রাংশু সরদার। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন আবাসিক বিদ্যালয়ের ছাত্র শুভ্রাংশু সরদার ৪৯৬ নম্বর পেয়ে রাজ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। মহেশতলা পৌরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের সারেঙ্গাবাদ এলাকায় তার বাড়ি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে আত্মবিশ্বাসী শুভ্রাংশু সরদার দৃঢ়তার সঙ্গে বলে, ‘‘পড়াশোনাকে প্যাশন করেছি। অর্থনীতি নিয়ে কাজ করতে চাই। গবেষণা করতে চাই।’’ পরীক্ষার এই ফলাফলের কৃতিত্ব সে শিক্ষকদের দিয়েছে। 
পড়াশোনার পাশাপাশি শুভ্রাংশু সরদার বই পড়তে ভালবাসে। বই সারাক্ষণের সাথি তার। ভালবাসে গান গাইতে। সতীর্থদের নিয়ে তার ‘জোনাকি’ নামে একটি ব্যান্ড রয়েছে। তার কথায়, পড়াশোনার বাইরে শখ, আবেগ না থাকলে এগনো মুশকিল। পড়াশোনা সাফল্যর পিছনে বাবা-মা’র অবদানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাবা-মা আমার উপর বিশ্বাস, ভরসা করেছেন। স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে পড়াশোনায় প্রতিযোগিতার প্রশ্নে তার বক্তব্য, সুস্থ প্রতিযোগিতা না থাকলে পরীক্ষায় ভাল ফল করা যায় না। কতক্ষণ পড়াশোনা করতে? এই প্রশ্নে তার সুস্পষ্ট জবাব, দিনে ৪ ঘণ্টা সময়ই যথেষ্ট।  
মহেশতলার সারেঙ্গাবাদে যৌথ পরিবারের তিনতলা বাড়ির একটি ঘরে তিন জনের সংসার। বাবা তাপস সরদার ও মা শম্পা সরদারের পারিবারিক আয় বলতে নিজেদের একটি পণ্যবাহী ৩ চাকার টেম্পো গাড়ি। বাবা তাপস সরদার নিজেই সেই পিক-আপ ভ্যানের চালক। শুভ্রাংশুর মা ঘর-সংসার সামলে সেলাইয়ের কাজ করেন। বাড়িতে টিভি নেই। পুত্রের এই সাফল্যে তাঁরা বলেন, পরীক্ষার ফলাফল ওর ভাল হবে সে বিষয়ে আমরা আশাবাদী ছিলাম। ছোটবেলা থেকে বাবার পরিশ্রম লড়াই দেখেছে। নিজেকে দাঁড়াতে হবে, প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, এই দৃঢ়চেতা মনোভাব নিয়ে চলায় আজকে ওর এই সাফল্য। 
এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধা তালিকায় যুগ্মভাবে দ্বিতীয় আবু সামা। আইএএস হওয়ার স্বপ্নপূরণে এবার এগতে চায় উত্তর দিনাজপুর জেলার চাকুলিয়া ব্লকের রামকৃষ্ণপুর প্রমোদ দাশগুপ্ত মেমোরিয়াল হাই স্কুলের আবু সামা। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৫। বাড়ি নিশিনধারা গ্রামে, সংসারে তেমন কোনও স্বচ্ছলতা নেই। পরিবারের জমি জায়গা নেই। শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু আছে। প্রাইভেট শিক্ষক নেই, স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রেরণা ছিল— তাতেই সাফল্যের শীর্ষে আবু সামা। বাবা মহম্মদ জাহিরুদ্দিন অন্যের জমিতে চাষ করেন। মা গৃহবধূ,  দুই দিদি এবং ভাই—এই নিয়ে পরিবার। ইংরেজিতে অর্নাস নিয়ে পড়াশোনা করবে সে এখন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ৪-৫ মাস আগে থেকে দিনে ১০-১২ ঘণ্টা পড়াশোনা, আর তাতেই কিস্তিমাত।
ভূগোল নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করতে চায় এবছর উচ্চমাধ্যমিকে যুগ্মভাবে দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী সুষমা খাঁ। বাঁকুড়া বঙ্গবিদ্যালয় স্কুলের কলা বিভাগের ছাত্রী সে। বাড়ি বাঁকুড়া শহরের চাঁদমারিডাঙায়। বাবা লবকুমার খাঁ রাজ্য সরকারের পরিসংখ্যান বিভাগে চাকরি করেন। মা উমা খাঁ গৃহবধূ। সুষমার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৫। এদিন সুষমা জানায়, ভূগোল ও অঙ্ক তার প্রিয় বিষয়। এবার সে ভূগোলে অনার্স নিয়েই পড়তে চায়। তার এই সাফল্যে তার বাবা, মা, দিদি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা ও গৃহশিক্ষকরা প্রভূত সাহায্য করেছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তার রবীন্দ্র সঙ্গীতের চর্চাও অব্যাহত। সুষমারও আইএএস অফিসার হওয়ার ইচ্ছা।
পলিটিক্যাল সায়েন্স বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়টিকে নিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত পড়াশোনা করতে চায় আলিপুরদুয়ার জেলার কামাক্ষাগুড়ির বাসিন্দা পিয়ালী দাস। উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। বাবা সোনার দোকানের  একজন সাধারণ কর্মচারী। প্রতিকূলতার মধ্যেও মেয়েকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সবরকম উদ্যোগ নিয়েছেন বাবা। পিয়ালী ৯৮.৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। রোজ ৬-৭ ঘণ্টা পড়শোনা করেছে। তার বক্তব্য, মা বাবার সঙ্গে শিক্ষকরাও সবসময় সহায়তা করেছেন, তারই ফল পেলাম। টেস্টের পর থেকেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে কঠিন পরিশ্রম শুরু করে পিয়ালী। ফাইনাল পরীক্ষা পর্যন্ত লক্ষ্য থেকে এতটুকু বিচ্যুত হয়নি।
পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করতে চায় উচ্চমাধ্যমিকে তৃতীয় চন্দ্রবিন্দু মাইতি। তমলুক হ্যামিল্টন হাইস্কুলের এই ছাত্রের প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৪। তমলুক শঙ্করআড়াতে বাড়ি চন্দ্রবিন্দুর। বাবা তপন মাইতি একটি পানের দোকান চালান। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে এই সাফল্য অর্জন করেছে চন্দ্রবিন্দু মাইতি। তার প্রাপ্ত নম্বরের মধ্যে বাংলাতে ৯৭, ইংরেজিতে ৯৯, রসায়নে ৯৯, গণিতে ১০০, পদার্থবিদ্যায় ৯১, কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনে ৯৯। উচ্চমাধ্যমিক তো হলো, এবার ভবিষ্যতে পড়াশোনার খরচ চালানো নিয়ে যথেষ্টই উদ্বেগে চন্দ্রবিন্দু।
এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় তৃতীয় একই স্কুলের দুই ছাত্রী অনুসূয়া সাহা ও শ্রেয়া মল্লিক। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট ললিতমোহন আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের এই দুই ছাত্রীরই ভবিষ্যতের ইচ্ছে অধ্যাপনা করা। দু’জনেই  উচ্চমাধ্যমিকে ৪৯৪ পেয়ে  রাজ্যের মধ্যে তৃতীয়। অনুসূয়া সাহার বাড়ি  হিলিতে, বাবা পোস্ট অফিসের এজেন্সির কাজ করেন। অন্যদিকে, শ্রেয়া মল্লিকের বাড়ি বালুরঘাটের চকভবানিতে। বাবা বালুরঘাট আদালতের মহুরী।

 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment