JADAVPUR STUDENT'S DEATH

‘কাশ্মীরে বেড়াতে গেছিলাম’ জানালো ‘আলু’, অসত্য কথা বলছে, দাবি একাংশের

কলকাতা রাজ্য

যাদবপুরের র‌্যাগিং কান্ডে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় নাম জড়িয়েছে বারাসতের বাসিন্দা অরিত্র মজুমদার ওরফে আলুর। ঘটনার পর থেকেই 'নিখোঁজ' যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠন ফেটসুর এই দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতার। ৯ অগাস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হস্টেলে মৃত্যুর ঘটনার পর ১০ অগাস্ট বৃহস্পতিবার শেষবার দেখা গিয়েছিল অরিত্রকে। হস্টেলের প্রত্যক্ষদর্শীরা এমনটাই জানিয়েছেন। তারপর থেকেই বেপাত্তা 'আলু'। ছাত্র মৃত্যুকাণ্ডে ঘটনার ১২ দিন পর প্রকাশ্যে এলেন অরিত্র মজুমদার ওরফে আলু। এই অরিত্রকে নিয়ে 'নিখোঁজ' পোস্টার পড়েছিল যাদবপুরে। অনেকে দাবি করেছিলেন, অরিত্র ঘটনার পর পালিয়েছে। আবার এও শোনা গিয়েছিল, শাসকদলের কোনও এক নেতার সাহায্যে ভিন রাজ্যে পালিয়েছে অরিত্র। তবে অবশেষে খোঁজ মিলল যাদবপুরের ‘আলুর’, সোশাল মিডিয়ায় নিজের অবস্থান জানালেন অরিত্র। সোশাল মিডিয়ায় তিনি দাবি করেছেন যে এই ঘটনার কথা তিনি জানতেন না। এখন তিনি কাশ্মীরে। তবে যেকোনও তদন্তের জন্য প্রস্তুত বলে তিনি জানিয়েছেন। কলকাতায় ফিরে  বাঁশদ্রোণীতে তার ফ্ল‍্যাটেই তাকে পাওয়া যাবে বলে জানায় সে। 

যদিও, তার কাশ্মীরে ট্রেক করতে যাওয়ার যে দাবি, তা নিয়ে তার বিরুদ্ধেই অসত্য কথা বলে তদন্ত বিভ্রান্ত করার অভিযো আনা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলু যেই ফ্লাইটে কাশ্মীর বেড়াতে যাওয়ার দাবি করেছে, তার পাল্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরের লিংক সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে পড়ুয়াদের একাংশ দাবি করেছে, আলু অসত্য কথা বলছে, সংশ্লিষ্ট ফ্লাইট গত ৩ মে থেকেই পরিষেবা বন্ধ করেছে। শুধু পরিষেবা বন্ধ নয়, সংস্থাটি নিজেকে দেউলিয়া পর্যন্ত ঘোষণা করেছে। এই পরিস্থিতিতে আলুকে হেপাজতে নিয়ে জেরা না করা পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে নারাজ পুলিশ। অন্যদিকে, আরেকটি আশ্চর্যজনক তথ্যও উঠে এসেছে আলুর ক্লাস এটেন্ডেন্সে হাজিরা খাতায় সই নিয়েও। যে সময় কাশ্মীর যাওয়ার দাবী করেছে সে, সেই সময়ে বেশ কয়েকদিন হাজিরা খাতায় সইও পড়েছে। যদিও সেই খাতার যে ছবি পাওয়া গেছে, তার সত্যতা যাচাই করেনি গণশক্তি ডিজিটাল।

 

‘আলু’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অন্যতম পরিচিত নাম। প্রতাপশালী এক ‘স্বাধীন’ নেতাও বটে। এক সময়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির স্টুডেন্টস ইউনিয়নের এই সদস্য কার্যত শাসন করতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেল। তাঁর বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করারও কোনো জায়গা ছিল না। তার দাপটে সন্ত্রস্ত থাকত হস্টেল। হোস্টেলের একটি পাতা নড়লেও খবর ‘আলু’-র কাছে থাকত। মৃত্যুর দিন রাতে হস্টেলের গেট বন্ধ করে পুলিশ ঢুকতে বাধা দেওয়ার প্রধান কাণ্ডারি ছিল এই ছাত্রনেতা, এমনই অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। হোস্টেল সূত্রে খবর, বহুদিন আগে পড়াশোনার পাঠ শেষ হলেও, গবেষণার সঙ্গে হয়ত তিনি যুক্ত, কিন্তু হস্টেলে এই ভাবে গেড়ে বসার অধিকার তাঁর ছিল না বলেই অনেকে মনে করছেন, যদিও বিষয়টি পুরোটাই এখন তদন্তের বিষয়।

অন্যদিকে, আলুকে কেন্দ্র করে উঠে আছে একটি রহস্যময় অরাজনৈতিক মঞ্চ ‘কালেক্টিভ’-এর নামও।  যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীন সংগঠনগুলির নিয়ন্ত্রক এই ‘কালেক্টিভ’। যার মাথা জনৈক সৌমেন্দ্রনাথ রায়। শোনা যাচ্ছে প্রায় পঞ্চাশোর্ধ্ব এই ব্যক্তি বাইরে থেকে প্রায় তিন দশক ধরে নিয়ন্ত্রণ করছেন যাদবপুরের ‘স্বাধীন’ রাজনীতিকে। বিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টিতে প্রায় তিন দশক ধরে অন্য কোনো ছাত্র সংগঠন তো দূর, একটা মাছি পর্যন্ত গলতে দেয় না এই ‘স্বাধীন’-রা। যেহেতু কালেক্টিভ একটি মঞ্চ তাই এই সমস্ত সংগঠনে ছদ্মবেশে বিজেপি এবং তৃণমূল নিজেদের কাজ চালায় গোপনে। ছাত্র মৃত্যু কান্ডে এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া প্রত্যেক ‘স্বাধীন’ নেতারই হয় বিজেপি নয় তৃণমূল যোগ ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে। এদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো ক্যাম্পাসে বামপন্থী ভেক ধরে সংগঠিত বাম ছাত্র আন্দোলনকে পেছন থেকে ছুরি মারা এবং ক্যাম্পাসের রাজনীতির সাথে বহির্জগতের রাজনীতিকে বিচ্ছিন্ন করা। যদিও বৃহত্তর রাজনীতির ক্ষেত্রে এদের প্রাক্তন, বর্তমান সব নেতার সাথেই বিজেপি অথবা তৃণমূলের যোগসাজশ মিলেছে। এদের কারোর সঙ্গেই কোনোভাবে এসএফআই, সিপিআই(এম)-এর দূরদূরান্তের কোনো সম্পর্ক উঠে আসেনি তদন্তে। 

Comments :0

Login to leave a comment