EDITORIAL

চমকের আড়া‍‌লে ধোকা

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ

২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে বলেছিলেন ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হলে বছরে দু’কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন। তখন দেশে যত বেকার ছিল মোদী হিসাব কষে দেখেছিলেন বছরে ২ কোটি করে চাকরি পেলে পাঁচ বছরের মধ্যে মোটামুটি সব বেকারের কাজ হয়ে যাবে। বাস্তবে দেখা গেল পাঁচ বছর কাটিয়ে তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। সব মিলিয়ে ৯ বছর ক্ষমতায় আছেন। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে বছরে ২ লক্ষ বেকারকেও তিনি চাকরি দিতে পারেননি। ফলে দেশে মোট বেকারের সংখ্যা বা বেকারির হার তো কমেইনি উল্টে বেড়েছে। তিনি ক্ষমতায় আসার আগে দেশে যত বেকার ছিল এখন তার থেকে অনেক বেশি। গত ৯ বছরে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তিনি শুধু চরম ব্যর্থতা দেখাননি কর্মরত বা যারা নতুন করে কাজ পেয়েছেন তাদের আয় বা বেতন বাড়েনি বরং অনেক ক্ষেত্রে কমেছে। অর্থাৎ মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে নরেন্দ্র মোদীর জমানায়। পাশাপাশি তাঁর আমলেই মূল্যবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা স্থায়ী রূপ পেয়েছে। অতীতে কোন কালে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের প্রায় প্রতিটি জিনিস, বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের দাম এত উচ্চ হারে বাড়েনি। একদিকে প্রকৃত আয় কমেছে অন্যদিকে জীবনযাপনের ব্যয় বেড়েছে। এই যাঁতাকলে পড়ে দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মানের অবনমন ঘটেছে। লক্ষণীয় সাধারণ মানুষের হাল খারাপ হলে বিত্তবানদের কিন্তু পোয়াবারো। তাদের আয় ও সম্পদ এই সময়কালে বেড়েছে রকেট গতিতে। তাই বিশ্বের কোটিপতি, শতকোটিপতির তালিকায় ভারতের ধনকুবেরদের সংখ্যা বেড়েছে এবং তারা চোখ ধাঁধানো উচ্চতায় নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে মোদী জমানায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন যতটুকু হয়েছে তার সবটাই প্রায় শুষে নিয়েছেন শিল্পপতি ধনীরা।
এমন এক বাস্তবতার মধ্যে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি ভারতকে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করবেন। লক্ষণীয় তিনি কিন্তু বলেননি তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হলে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি হতে দেবেন না। বলেননি দে‍‌শের একজন মানুষকেও বেকার-কর্মহীন হয়ে বসে থাকতে দেবেন না। সকলের জন্য কাজের ব্যবস্থা করবেন। সত্যি যদি এটা হয় যে অর্থনীতির বৃদ্ধি মানে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, আয় বৃদ্ধি তাহলে প্রধানমন্ত্রী অনায়াসে গর্ব করে প্রতিশ্রুতি দিতে পারতেন সব বেকারদের কাজ দেবেন। কিন্তু না, সচেতনভাবেই বলেননি। কারণ তাঁর কল্পিত তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে যথারীতি বেকারদের তথা সাধারণ মানুষের জন্য কিছু থাকবে না। তারা যথারীতি অতি মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারি-নিম্ন আয়ের জাঁতাকলে পিষ্ট হবেন। আদানিদের মত বিত্তবানরা ফুলে ফেঁপে উঠবে। অবশ্য অর্থনীতির বর্তমান স্তরে তৃতীয় বৃহত্তম হবার জন্য মোদীর দরকার হবে না। যে কেউ প্রধানমন্ত্রী হলেও সেটা সম্ভব। ইউপিএ আমলে যে গতিতে অর্থনীতি বাড়ছিল সেই গতি বজায় থাকলে ইতিমধ্যেই ভারত তৃতীয় বৃহত্তম হয়ে যেত। বরং মোদী ক্ষমতায় এসে সেই সাফল্যকে কয়েক বছর পিছিয়ে দিয়েছেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment