ration crisis

সঙ্কটের মুখে রাজ্যের নিজস্ব রেশন, কার্ড ছাঁটাই করে বাঁচার চেষ্টা

রাজ্য

ration crisis

 

আর্থিক সঙ্কটের মুখে রাজ্যের নিজস্ব রেশন চালাতে গিয়ে এখন বেসামাল অবস্থা খাদ্য দপ্তরের। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে রেশন কার্ড বাতিল করার পরিকল্পনা নিয়েছে খাদ্য দপ্তর। 
কেন্দ্রের জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনা (এনএফএসএ)’র পাশাপাশি এরাজ্যে খাদ্য দপ্তরের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের নিজস্ব রেশন ব্যবস্থা চালু আছে। তার বাইরে আরকেএসওয়াই ১ ও আরকেএসওয়াই ২-এই দুই নাম দিয়ে রাজ্যের ৩ কোটি মানুষকে রেশন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এখন রাজ্যের রেশন কার্ড গ্রাহকদের চাল দিতে গিয়ে সঙ্কটে পড়েছে খাদ্য দপ্তর।

সঙ্কটের কারণ হিসাবে খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকরা বলছেন, রেশনে গম দেওয়া বন্ধ হওয়ার পর থেকে তার বিকল্প হিসাবে চাল দিতে হচ্ছে। খোলা বাজার থেকে চাল কিনতে গিয়েই বাড়তি টাকার বোঝা চাপছে। এই মুহূর্তে রাজ্যের আর্থিক সঙ্কট এমনই যে বাড়তি বোঝার চাপ নিতে পারছে না অর্থ দপ্তর। 
আরকেএসওয়াই ১ রেশন কার্ডে ৩কেজি গম ও ২কেজি করে চাল দেওয়া হতো। কিন্তু গম কেনা বন্ধ হওয়াতে ৫কেজি করে চাল দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। একইভাবে আরকেএসওয়াই ২ রেশন কার্ডে এক কেজি চাল ও এক কেজি গমের পরিবর্তে গত এক বছর ধরে ২কেজি করে চাল দিতে হচ্ছে। 
নবান্ন সূত্রে জানা গেছে, আরকেএসওয়াই ১ রেশন কার্ডের জন্য এখন মাসে ১ লক্ষ ৫ হাজার টন চাল প্রয়োজন হচ্ছে। এরসঙ্গে আরকেএসওয়াই ২ রেশন কার্ডের জন্য মাসে ১৪ হাজার টন চাল দিতে হচ্ছে। ১ টন চালের জন্য রাজ্যের খরচ হচ্ছে ৩৪ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে রাজ্যের রেশন কার্ডের জন্য সরকারের ৪০৮ কোটি খরচ হয়ে যাচ্ছে। 
খাদ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। গম যখন দেওয়া হতো, তখন খোলা বাজার থেকে গম কেনার জন্য সরকারকে কেজি প্রতি ২২টাকা দাম দিতে হতো। ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকেই রেশনে বন্ধ হয়েছে গম দেওয়া। খোলা বাজার থেকেই গম কেনার উপায় রাখেনি কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে এখন কেজি প্রতি ৩৪টাকা দর দিয়ে কিনতে হচ্ছে চাল। সেই হিসাবে বাড়তি ১২টাকা করে খরচ হয়ে যাচ্ছে রাজ্যের কোষাগার থেকে।



রাজ্যে এখন আরকেএসওয়াই ১ ও আরকেএসওয়াই ২ মিলিয়ে প্রায় ২কোটি ৮৮লক্ষ রেশন কার্ড আছে। খাদ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গমের বিকল্প হিসাবে চাল দিতে গিয়ে রাজ্যকে  আরকএসওয়াই রেশন কার্ডের জন্য বাড়তি ৭ হাজার টন চাল কিনতে হচ্ছে। আরকেএসওয়াই ২ রেশন কার্ডের জন্য খোলা বাজার থেকে ৩৪টাকা কেজি দর দিয়ে প্রায় ৬২ হাজার টন বাড়তি চাল টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিনতে হচ্ছে। খাদ্য দপ্তরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘প্রতি মাসে ৭০ হাজার টন চাল কিনতে গিয়ে বাড়তি মাসে ৮৪ কোটি টাকা গুনতে হচ্ছে রাজ্যকে। বছরে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে।’’ 
রাজ্যের আর্থিক অবস্থাকে এখন এমন সঙ্কটজনক অবস্থায় পৌঁছে গেছে যে রাজ্যের রেশন চালাতে গিয়ে বিপর্যস্ত সরকার। পরিস্থিতি এমনই সঙ্গিন যে বিধানসভাতে খাদ্য দপ্তরের বাজেট আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রীকে পর্যন্ত রাজ্যের নিজস্ব প্রকল্প চালানোর জন্য কেন্দ্রের কাছে হাত পাততে হয়েছে।


বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘প্রায় ৩ কোটি লোককে আমাদের বিনা পয়সায় রেশন দিতে হয়। কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করবো, খাদ্যসাথী প্রকল্পে এই টাকাটা যেন আমাদের দেওয়া হয়।’’ 
রাজ্যের নিজস্ব প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা দেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই, তা খোদ মুখ্যমন্ত্রীরও অজানা নয়। তবু রাজ্যের সঙ্কটের দায় সচেতনভাবে বিধানসভা এড়িয়ে গেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের হাতে এখন আর্থিক বোঝার দায় কমাতে অস্ত্র বলতে ব্যাপক হারে রেশন কার্ড ছাঁটাই। গত এক বছরে খাদ্য দপ্তর প্রায় ১ কোটি ৮৬ লক্ষ রেশন কার্ডকে বাতিল করেছে। যার সিংহভাগই রাজ্যের নিজস্ব খাদ্য সুরক্ষা যোজনার রেশন কার্ড। খাদ্য দপ্তরের একটি সূত্রে জানা গেছে, অতীতে ভূতুড়ে রেশন কার্ডেই রেশন দেওয়া হতো। ফলে কোষাগারের ওপর চাপ ছিলই। তখন সরকারের টনক নড়েনি। কিন্তু এখন কার্ড বাতিল করার পরেও কোষাগারের তীব্র সঙ্কটে বাড়তি আর্থিক দায় সরকার নিতে পারছে না। রাজ্য সরকার এখন আর্থিক চাপ কমাতে আরও ব্যাপক হারে রেশন কার্ড বাতিল করাকেই পরিকল্পনা করেছে।


এরাজ্যে এনএফএসএ’র প্রায় ৬ কোটি রেশন কার্ড আছে। এতদিন এই রেশন কার্ডের গ্রাহকদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৩টাকা কেজি দরে চাল ও ২ টাকা কেজি দরে গম সরবরাহ করতো। রাজ্য সরকার এই দামের ওপর ভরতুকি দিয়ে রাজ্যের জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনার রেশন কার্ডের গ্রাহকদের বিনামূল্যে চাল-গম দিত। কিন্তু গত জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রক আগামী এক বছরের জন্য দেশের সব রাজ্যে বিনামূল্যে এনএফএসএ রেশন কার্ডের গ্রাহকদের চাল ও গম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে এখন ভরতুকির টাকা বহন করতে হচ্ছে না খাদ্য দপ্তরকে। মাসে প্রায় ৯৮ কোটি টাকার মতো খরচ কমেছে রাজ্যের। কিন্তু তার পরেও রাজ্যের নিজস্ব রেশন চালাতে হিমসশিম খাচ্ছে সরকার। 

Comments :0

Login to leave a comment