CYCLONE HILARY

ক্যালিফোর্নিয়া বেসামাল ‘হিলারি’-র তাণ্ডবে

আন্তর্জাতিক

CALIFORNIA HURRICANE HILARY USA MEXICO LOS ANGELES BENGALI NEWS

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় তাণ্ডব চালাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘হিলারি’। এরই মাঝে ৫.১ কম্পাঙ্কের ভূমিকম্পেও কেঁপে উঠল দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া। 

প্রসঙ্গত, রবিবার থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় তাণ্ডব চালাচ্ছে ‘হিলারি’। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার আগে মেক্সিকোর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে তাণ্ডব চালিয়েছে হিলারি। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। 

মার্কিন বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, লস এঞ্জেলেস শহরের উত্তর পশ্চিম কোণে, স্যান্টা বারবারায় এই ভূমিকম্পের উৎসস্থল। ঝড়ের সঙ্গে মাটি কেঁপে ওঠায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। যদিও বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। ইতিমধ্যেই গতি হারিয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে হিলারি। 

বিজ্ঞানীদের দাবি, গত ৮০ বছরে এই প্রথম ‘ট্রপিক্যাল সাইক্লোন’-এর সাক্ষী থাকল ক্যালিফোর্নিয়ার মরু অঞ্চল। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন তাঁরা। 

লস এঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন বাস জানিয়েছেন, শহরের ১০০টি দমকল কেন্দ্রের কর্মীরা ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের ফলে কোনও বাড়ির কাঠামোয় চিড় ধরেনি। অন্য কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলেও তিনি টুইট করে জানিয়েছেন। 

ভূবিজ্ঞানী লুসি জোনস জানিয়েছেন, বর্তমান কম্পনের উৎসস্থলের খুব কাছেই রয়েছে আরেকটি ভূমিকম্পের উৎসস্থল। ভেঞ্চুরা কাউন্টির ওজাইতে ১৯৩২ সালে ৫ কম্পাঙ্কের বেশি তীব্রতার ভূমিকম্প হয়েছিল। তিনি স্থানীয় মানুষকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করে জানিয়েছেন, আগামী দিনে বেশ কয়েকবার অনুকম্পের ঝাঁকুনি পড়তে পারে গোটা অঞ্চলে। 

ভূমিকম্পের পাশাপাশি ভারী বৃষ্টিপাত নিয়েও সমস্যায় পড়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রশাসন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সার্ভিস জানিয়েছে, নজিরবিহীন বৃষ্টিপাত হচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়ায়। এরফলে হড়পা বানের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ভূমিধসের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ন্যাশনাল হ্যারিকেন সার্ভিসের আশঙ্কা, সতর্ক না থাকলে প্রাণহানির হতে পারে। 

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজোম দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া জুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। ৭৫০০ সেনা জওয়ান মোতায়েন হয়েছে উদ্ধারকাজে গতি আনতে। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই স্যান বার্নাডিনো কাউন্টির বাসিন্দাদের উদ্ধার করা হচ্ছে। আমেরিকার ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের তরফে বন্যার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভেঞ্চুরা কাউন্টিতে ২ ঘন্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫ সেন্টিমিটার। 

ভূবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ক্যালিফোর্নিয়া মূলত মরু অঞ্চল। এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অত্যন্ত কম। এই এলাকার মাটিতে আর্দ্রতা কম। তারফলে হড়পা বান এলে এই অঞ্চলের মাটি প্রাকৃতিক ভাবে তার মোকাবিলা করতে পারবে না। মাটি জল শুষে নিতে ব্যর্থ হবে। সেক্ষেত্রে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পরিস্থিতি তৈরি হবে।

ভূবিজ্ঞানীরা ক্যালিফোর্নিয়ায় হিলারির আছড়ে পড়ার নেপথ্যে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, ক্যালিফোর্নিয়ায় মৌসুমী ঝড় হওয়া অবাক করা বিষয়। কারণ প্রশান্ত মহাসাগর উপকূলের শুষ্ক বায়ু, ঠান্ডা আবহাওয়া এবং বায়ুর গতিবেগ সাইক্লোনের তৈরির ক্ষেত্রে উপযোগী নয়। কিন্তু বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে দ্রুত বেগে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক কোস্ট বা প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলেও মৌসুমী ঝড়ের দেখা মিলছে। এই এলাকা প্রাকৃতিক ভাবে এই জাতীয় প্রাকৃতিক ঝঞ্ঝার জন্য প্রস্তুত না থাকায় ক্ষতির পরিমাণও বেশি হবে। 

আমেরিকার বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রকৃতির এমন খামখেয়ালী আচরণ দেখে অবাক হয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষ। ক্যালিফোর্নিয়ার বহু মানুষ সারা জীবনে এত বৃষ্টিপাত দেখেননি। 

Comments :0

Login to leave a comment