Awas Yojana

আবাসে ছাঁটাই ৪ লক্ষাধিক উপভোক্তা, গ্রামসভার বৈঠক নিয়ে সংশয়ে রাজ্যই

রাজ্য

আবাসের অনুমোদিত তালিকা থেকে ছাঁটাই হয়েছে ৪ লক্ষাধিক উপভোক্তার নাম!
১৪ নভেম্বরের মধ্যে ‘রি-চেক’ সম্পন্ন করার কথা। আগামী ২৭ নভেম্বরের মধ্যে ব্লক অফিস, মহকুমা দপ্তর ও জেলা শাসকের দপ্তরে তালিকা প্রকাশ্যে টাঙিয়ে দেওয়ার পর তা নিয়ে আপত্তি থাকলে নথিভুক্ত করার দিন ঠিক করা আছে। আগামী ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতি পঞ্চায়েত এলাকায় গ্রামসভার মধ্যে পঞ্চায়েত ভিত্তিতে আবাস তালিকা চূড়ান্ত করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। কিন্তু বিপুল সংখ্যায় ছাঁটাই হওয়ার পর প্রকাশ্যে তালিকা টাঙানো থেকে গ্রামসভার বৈঠক আদৌ হবে কি না, প্রশাসনের অভ্যন্তরেই তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। 
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সমীক্ষা পর্বে বাদ চলে গিয়েছে আবাস তালিকাভুক্ত ৪ লক্ষ ১৮ হাজারের বেশি উপভোক্তার নাম। সমীক্ষার শুরুতে প্রতি পাঁচ জন উপভোক্তার মধ্যে এক জনের নাম ছাঁটাই হয়ে গিয়েছে। গোটা রাজ্যে এখন আবাস সমীক্ষায় বাদ চলে যাওয়ার হার ২২ শতাংশের বেশি।
তালিকা থেকে বাদ চলে যাওয়ার রাজ্যভিত্তিক গড় ২২ শতাংশ হলেও শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ সহ অন্তত ১০টি জেলাতে গরিব মানুষের ঘর প্রাপ্তি থেকে নাম ছাঁটাই হওয়ার গড় আরও বেশি। পশ্চিম বর্ধমান ও নদীয়া এই দুই জেলাতেই সমীক্ষা পর্বে সর্বাধিক সংখ্যক নাম বাদ পড়ে‍‌ছে। নদীয়া জেলায় প্রায় ৫২ হাজার উপভোক্তার নাম তালিকার বাইরে চলে গিয়েছে। শতাংশের বিচারে এই হার ৩৮ শতাংশের বেশি। তারপরেই আছে পশ্চিম বর্ধমান। ৩৭ শতাংশ উপভোক্তার নাম বাদ গিয়েছে ওই জেলায়। 
আবার ৩০ হাজারের বেশি উপভোক্তার নাম বাদ গিয়েছে মালদহ জেলায়। জেলার আবাস উপভোক্তার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার হার প্রায় ৩৫ শতাংশ। এরপরই আছে হাওড়া জেলা। ২১ হাজারের বেশি উপভোক্তা আবাস তালিকা থেকে ছাঁটাই হয়ে গিয়েছেন। প্রায় ৩২ শতাংশ নাম তালিকার বাইরে। সংখ্যালঘু-প্রধান মুর্শিদাবাদ জেলায় আবাস তালিকা থেকে সমীক্ষায় বাদ পড়েছে ৫০ হাজারের উপর গরিব মানুষের নাম, নাম ছাঁটাইয়ের হার ৩২ শতাংশ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ২৫ হাজার, পুরুলিয়ায় ৩০ হাজার তালিকাভুক্ত আবাস উপভোক্তার নাম নেই। হুগলী জেলাতেও ৩০ হাজার উপভোক্তার নাম বাদ পড়েছে সমীক্ষায়। ১০ জেলায় গড়ে প্রায় প্রতি চার জন উপভোক্তার মধ্যে এক জনের নাম তালিকার বাইরে।
এখনও পর্যন্ত সমীক্ষায় নাম বাদ চলে যাওয়ার খবর উপভোক্তাদের নজরে আসেনি। গ্রামে সমীক্ষা পর্বে তালিকায় নিজের নাম না পেয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মানুষ। এরপর তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ার পর পরিস্থিতি কী হতে পারে ভেবে নতুন করে ছাঁটাই হওয়া তালিকা ‘রিচেক’ করার কাজ শুরু করেছেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের আধিকারিকরা। আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে ছাঁটাই হওয়া তালিকায় নতুন করে নাম সংযোজন করার কাজ। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘ গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে সমীক্ষার পর দপ্তর থেকে তালিকার ১০ শতাংশ উপভোক্তার মধ্যে পুনরায় সমীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বিডিও’দের। কিন্তু এখন ফের তথ্য যাচাই করার মধ্য দিয়ে কিছুটা ছাড় দিয়ে ছাঁটাই তালিকা থেকে কিছু নাম অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।’’
শেষ পর্যন্ত বাতিল হওয়া বিপুল সংখ্যার মধ্য থেকে ‘রিচেক’ করে কত নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তা নিয়ে পঞ্চায়েত দপ্তরের আধিকারিকরা মুখ খুলতে চাইছেন না। আসলে কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা বন্ধ করে দেওয়ায় রাজ্য সরকারই আবাস যোজনার উপভোক্তাদের টাকা জোগাবে বলে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন। গত লোকসভা ভোটের আগে রাজ্য বাজেটে ১১ লক্ষ ৩৬ হাজারের বেশি উপভোক্তাকে আবাস যোজনার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাজেটে কোনও অর্থ বরাদ্দের ঘোষণা ছিল না। শারদোৎসবের পর আবাস যোজনা নিয়ে নতুন করে সমীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কারা ঘর পাবেন, সেই সমীক্ষার জন্য রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের পক্ষ থেকে তার গাইডলাইন তৈরি করা হয়। তাতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, চূড়ান্ত তালিকা থেকে বহু নাম বাদ পড়তে চলেছে। নাম বাদ পড়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর এখন রাজ্য সরকার চাইছে পুনরায় তথ্য যাচাই করে ছাঁটাই হওয়া একাংশের উপভোক্তাকে অন্তর্ভুক্ত করে নিতে। 
আবাস যোজনা নিয়ে আসলে সরকারের কাছে শুরুতে অর্থের জোগান নিয়ে কোনও নিশ্চয়তা ছিল না। তাই ব্যাপক হারে নাম ছাঁটাই করে উপভোক্তাদের তালিকা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু গ্রামের বিক্ষোভ টের পাওয়ার পর এবং আর জি কর আন্দোলনের পর সরকার আর নতুন করে সমস্যার পথে হাঁটতে চাইছে না। এর মধ্যে কেন্দ্রের কাছ থেকে জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্যের হাতে কিছু অর্থ আসায় এখন আবাস পরিকল্পনাকে কিছুটা শিথিল করার পথে হাঁটতে চাইছে নবান্ন। 
অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের পক্ষ থেকে জেলা শাসকদের কাছে ছাঁটাই হয়ে যাওয়া আবাস উপভোক্তাদের পুনরায় যাচাই করার জন্য একটি নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছিল। সেই নির্দেশিকায় যে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাপক সংখ্যায় উপভোক্তার নাম অন্তর্ভুক্ত কিংবা ছাঁটাই হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে দেখার কথা বলা হয়েছে। এর আগে শুরুর সমীক্ষায় ঘরে ইটের দেওয়াল থাকলেই উপভোক্তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। কারণ, সেইভাবেই গাইডলাইনে বলা হয়েছিল। এখন তা কিছুটা শিথিল করে ইটের দেওয়াল থাকলেও ঘরে পাকা ছাদ না থাকলে সেই উপভোক্তার নামকে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  

Comments :0

Login to leave a comment