গল্প
ফুলকপির সিঙাড়া
সৌরীশ মিশ্র
নতুনপাতা
"মা হয়ে গেছে?"
"এই তো বাবা। প্রায় হয়ে এসেছে।"
বছর দশের ডোডো আর ওর মা'র মধ্যে হচ্ছে এই কথোপকথন।
ডোডোর মা রান্নাঘরে। আর, রান্নাঘরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ডোডো। ঐখানটাতেই ঝাড়া ঘন্টাখানেক ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সে। দাঁড়াবে না! ডোডোর ফেভারিট ফুলকপির সিঙাড়া যে ভাজছেন ওর মা।
আসলে হয়েছে কি, ডোডোর বাইরের খাবার একদম সহ্য হয় না। তাই ঐসব খাওয়া একেবারে নিষেধ তার, ডাক্তারের পরামর্শে। আর এদিকে বাইরের ভাজাভুজি অন্য সকলের মতোন ডোডোরও পছন্দ খুব। তাই ওদের ফ্যামিলি ফিজিসিয়ান ডাক্তার চৌধুরী পরামর্শ দিয়েছেন, ঐসব তৈলাক্ত খাবার যতটা সম্ভব বাড়িতেই করে দিতে। তাই, সারাটা বছর মাঝে মধ্যে এটা-ওটা ভাজাভুজি ডোডোর মা করে দেন ছেলেকে। আর, প্রতি বছর শীতকালে নতুন ফুলকপি উঠলেই ঐ দিয়ে ডোডোর জন্য ফুলকপির সিঙাড়া করে দেন ডোডোর মা। আজ এখন যেমন করছেন তিনি।
"মা, হোলো?" ফের জিজ্ঞেস করে ডোডো।
"হ্যাঁরে। হয়ে গেছে। এই নে।" কড়াই-এর গরম তেল থেকে চারখানা ধোঁয়া ওঠা, সোনালি রঙা সিঙাড়া একটা প্লেটে তুলে ছেলের দিকে এগিয়ে দেন ডোডোর মা। ডোডো দ্রুত কয়েক পা এগিয়ে মায়ের হাত থেকে প্লেটটা নেয়। আর নিয়েই একটা সিঙাড়া ধরে। আর ধরতেই "আঃ" করে ওঠে সে।
"ছ্যাঁকা খেলি তো! একটুও তর সয় না তোর জানিস! ঠান্ডা হোক একটু, তারপর খা।"
মা যাই বলুক, ডোডো কিন্তু ধৈর্য্য রাখতে পারে না আর। কয়েকবার ফুঃ দিয়ে একটা সিঙাড়া একটু ঠান্ডা করে ভাঙে সেটা। তারপর মুখে পোড়ে টুকরোখানা। চোখ বুজিয়েই খেতে থাকে সেটা তাড়িয়ে-তাড়িয়ে।
"কি রে, কেমন হয়েছে?" ছেলেকে শুধোন ডোডোর মা।
চোখ খুলে মায়ের দিকে তাকায় ডোডো। তারপর বলে, "দারুণ।"
ছেলে খেয়ে এতো তৃপ্ত দেখে ডোডোর মা'র কি যে ভাল লাগে, তা বলে বোঝানোর নয়।
Comments :0