Bhandiguri tea garden

ভাণ্ডিগুরি চা বাগানে বিক্ষোভ, ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান সিআইটিইউ'র

জেলা

বিভিন্ন দাবিতে চা শ্রমিকদের বিক্ষোভ জলপাইগুড়ির ভান্ডিগুড়ি চা বাগানে।

দীপশুভ্র সান্যাল 
শিকারপুর জঙ্গল ঘেরা তিস্তা পারের বাগান ভাণ্ডিগুড়ি। দীর্ঘদিন ধরেই বাগান শ্রমিকরা বিভিন্ন ভাবে মালিকের জুলুমের শিকার। বাগানের শ্রমিকদের দাবি পৌঁছয় টিপিএ'র কাছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জানুয়ারি ২০২৪ এর মধ্যে সমস্যাগুলোর সমাধান হবে। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও মালিক পক্ষ কোনো আলোচনায় বসেনি। জলপাইগুড়ি চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আলমকে মালিক পক্ষ জানান যে ২৩ ডিসেম্বর অর্থাৎ গতকাল তারা শ্রমিকদের সাথে আলোচনায় বসবেন। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হন এবং সকালে বাগানে শ্রমিকদের, বিশেষ করে মহিলা শ্রমিকদের ব্যাপক জমায়েতের মধ্য দিয়ে বিক্ষোভ সভা হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা অমল নায়েক, উপস্থিত মহিলা শ্রমিকরাও এগিয়ে আসেন তাঁদের ক্ষোভ ব্যক্ত করতে এবং বক্তব্য রাখেন সীতা লোহার ও সুমিত্রা নায়েক। তাঁরা জানান যে কাজে যাওয়ার পর দিনের কাজের সীমা নির্ধারণ করা হচ্ছে যা সম্পূর্ণ না হলে মজুরি কেটে নেওয়া হচ্ছে নয়তো শেষ না হওয়া পর্যন্ত মহিলা শ্রমিকদের বাধ্য করা হচ্ছে সম্পন্ন করার। কর্তৃপক্ষ কাজের স্থলে মহিলা শ্রমিকদের সাথে অভব্য আচরণ করছে। শ্রমিক নেতা অমল নায়েক বলেন যে ষাট জনের ওপর শ্রমিককে যোগ্যতার নিরিখে ড্রাইভার, এম্বুলেন্স চালক, সর্দার, চৌকিদার ইত্যাদি পদে পদোন্নতি ঘটিয়ে বছর খানেক ধরে কাজ করানো হলেও তাদের শ্রমিকের মজুরি দেওয়া হচ্ছে, মাসিক বেতন গ্রেডেশন করা হয়নি।
সিআইটিইউ তথা চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শ্রমিকদের বক্তব্য শোনার পর বক্তব্য রাখেন। তিনি কর্তৃপক্ষকে হুশিয়ারি দিয়ে বলেন কর্মস্থলে কোনো মহিলা শ্রমিকের কোনো পুরুষ কর্মচারী যদি অভব্য আচরণ করে তবে আইন অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে হেনস্থার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ভবিষ্যতে এমন হলে তীব্র প্রতিবাদ হবে  তিনি ক্ষোভের সাথে জানান যে সকল মহিলা শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন ছুটি একটি আইনি অধিকার, এই অধিকার ছিনিয়ে আনতে সমস্ত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। জিয়াউল আলম জানান যে টাটা কোম্পানির মতো বাগান গুলোতে পাতা তোলার ও কলম করার মেশিন আমার ফলে অসংখ্য শ্রমিকের কাজ যাচ্ছে, অপর দিকে ভারী মেশিন বহন করে নারী পুরুষ নির্বিশেষে কর্মরত মহিলা শ্রমিকদের একধারে কায়িক কষ্ট বাড়ছে অপর দিকে তাঁর উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলেও মজুরি বাড়ছেনা। 
ভান্ডিগুড়ি চা বাগানের শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে জিয়াউল আলম বলেন, "যে পেটের লড়াইয়ে ভোটের লড়াই মেশাবেন না। পেটের লড়াইতে কোনো ধরনের বিভাজন শ্রমিকদের মধ্যে তৈরি করতে দেওয়া যাবেনা। সরকারি সুযোগ সুবিধা নাগরিক হিসেবে বাগান শ্রমিকদের অধিকার। কিন্তু সরকারি সুযোগ পাওয়ার ফলে সরকারি মদতে মালিক পক্ষ শ্রমিক হিসেবে অর্জিত চা বাগান শ্রমিকদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। রেশন , বাড়ি , জ্বালানির অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। 
তিনি আরও বলেন যে, “মালিকপক্ষ মিথ্যাচার করেছে, মালিক পক্ষ মোবাইলে, এমন কি মহিলা শ্রমিকদের ছবি তুলে কোম্পানিকে পাঠিয়ে কাজের প্রমাণ দিতে চাইছে, এসব অপমানজনক ও কাজের পরিবেশ নষ্ট করছে। তিনি হুশিয়ারি দিয়ে জানান যে দ্রুত যদি সুষ্ঠ আলোচনার মাধ্যমে এই সকল সমস্যার সমাধান না ঘটে তবে ভাণ্ডিগুরি চা বাগানে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”

Comments :0

Login to leave a comment