Amit shah

মোদী আবার জিতলে, ২০২৬ সালে জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হবে!

জাতীয়

কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ শেষ হয়নি, নরেন্দ্র মোদী আরও একবার প্রধানমন্ত্রী হলে ২০২৬ সালে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হয়ে যাবে। বুধবার লোকসভায় এমন বিচিত্র দাবি করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। এদিন লোকসভায় জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধন) বিল এবং জম্মু-কাশ্মীর সংরক্ষণ (সংশোধন) বিল নিয়ে আলোচনার জবাব দিতে গিয়ে অমিত শাহ আরও দাবি করেছেন, ৩৭০ধারা বাতিল হলে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ শেষ হয়ে যাবে এমন কথা কেউ বলেনি। বিরোধী বেঞ্চ থেকে চিৎকার করে তাঁকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, আপনি নিজেই সংসদের এই কক্ষেই এমন দাবি করেছিলেন। তারপরেও অমিত শাহ তা মানতে চাননি, ভিন্নতর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে স্পষ্ট হয়ে গেছে, ৩৭০ ধারা বাতিলের সময়ে মোদী-শাহ সহ তাদের সমস্ত তন্ত্র যে রব তুলেছিল, কাশ্মীর থেকে সন্ত্রাসবাদ শেষ হয়ে গেল, তা এদিন ঢোঁক গিলে নিয়েছেন। 
দুটি বিল পেশ করে অমিত শাহ বলেন, আগে জম্মুতে ৩৭টি আসন ছিল এখন ৪৩টি হয়েছে। কাশ্মীরে ৪৬টি আসন ছিল এখন ৪৭টি। এরপরেই তিনি বলেন, কেন্দ্র যে ডিলিমিটেশন কমিশন তৈরি করেছিল তারা পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জন্য ২৪টি আসন রেখেছে। কারণ পাক-অধিকৃত কাশ্মীর আমাদের। এই কথায় বিজেপি সদস্যরা তুমুল টেবিল চাপড়ানো, চিৎকার শুরু করে দেন। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে জানিয়ে দেওয়া হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে ‘বড় ঘোষণা’ করে দিয়েছেন। এখন থেকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের আসনও স্থির করে দেওয়া হলো। শীঘ্রই তা ভারতের অংশ হয়ে যাবে— এই পর্যন্ত প্রচার করা হয়। সোশাল মিডিয়াতেও বিজেপি’র খ্যাতমান আইটি সেল একই ধরনের প্রচার করছে। প্রকৃত তথ্য হলো, ৩৭০ ধারা বাতিল করার আগেই জম্মু-কাশ্মীরের সংবিধান অনুযায়ী সেখানের আইনসভার ২৪টি আসন পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের জন্য সংরক্ষিত আছে। সেই সংবিধানের ৪৮ নম্বরে পাক অধিকৃত এলাকা সংক্রান্ত বিধান শিরোনামে পরিষ্কার বলা আছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জন্য ২৪টি আসন খালি রাখা হবে। 
একইভাবে অমিত শাহ কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিয়ে প্ররোচনামূলক বক্তৃতা দিয়ে দাবি করেছেন তাদের জন্য আগে যারা দুঃখ ব্যক্ত করেছেন তা সবই কুম্ভীরাশ্রু। নরেন্দ্র মোদীই তাঁদের জন্য প্রকৃত কাজ করছেন এবং সেই কারণে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের থেকে ২ জনকে মনোনীত করা হবে, তাদের মধ্যে একজন মহিলা। এছাড়া পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে যাঁরা চলে এসেছেন, তাদের থেকে একজনকে মনোনীত করা হবে। আগে রাজ্যপালের এই অধিকার ছিল, যদি তিনি মনে করেন বিধানসভায় যথেষ্ট সংখ্যক মহিলা নেই, তাহলে তিনি সর্বাধিক ২ জন মহিলাকে মনোনীত করতে পারবেন। অমিত শাহ জানিয়েছেন, এখন মনোনীত সদস্যের সংখ্যা বেড়ে পাঁচ করা হলো। এর পাশাপাশি দুর্বল এবং অবহেলিত অংশ (সামাজিক জাত) বলে যে অংশকে চিহ্নিত করা হতো, তাদের এখন থেকে অন্যান্য অনগ্রসর অংশ বা ওবিসি হিসাবে চিহ্নিত হবে। তাদের জম্মু-কাশ্মীরের পেশাদার প্রতিষ্ঠানে তাদের ভর্তি এবং নিয়োগের সুযোগ দেবে। বিরোধীরা প্রশ্ন করেন, নাম বদলে কী পরিবর্তন হবে? অমিত শাহর দাবি, এতে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য বোঝা যায়। 
সিপিআই (এম) নেতা মহম্মদ ইউসুফ তারিগামি কেন্দ্রের দুটি বিল পাশের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বুধবার রাতে তিনি গণশক্তিকে বলেছেন, কোনও অংশের জন্য এই মনোনয়ন নয়। এই মনোনয়ন আসলে বিজেপি’র লোকেদের মনোনয়ন। পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলের জন্য বিজেপি মনোনীত সদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। তারিগামি বলেন, আগেই বিভিন্ন সময়ে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় কাশ্মীরী পন্ডিতরা ছিলেন। তারিগামি বলেছেন, জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধন) বিল এবং জম্মু-কাশ্মীর সংরক্ষণ (সংশোধন) বিল ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তার রায় এসে যাবে। কেন্দ্রের উচিত ছিল সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করা। ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চলছে। সরকার দেখাতে চাইছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক, কিন্তু কী ঘটছে এখানে। সন্ত্রাসবাদ জম্মুতেও প্রসারিত হয়ে গেছে। সম্প্রতিও সেনা অফিসার, জওয়ানরা নিহত হয়েছেন। পাঁচ বছর ধরে সরকার নির্বাচন করলো না। পরিস্থিতি সব স্বাভাবিক হলে নির্বাচন করছে না কেন? জনসংখ্যার ভিত্তিতে ডিলিমিটেশন করা হলো না। কাশ্মীরে জনসংখ্যা বেশি সেখানে একটি মাত্র আসন বৃদ্ধি করা হয়েছে। যেখানে জম্মুতে ৬টি আসন বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারপরও ভোট করলে জয় পাবে রাজ্যে, তা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। তাই পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলে মনোনীত সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এটা কোনো অংশের ক্ষমতায়ন নয়, বিজেপি’র নিজের ক্ষমতায়ান। লোকসভায় বিতর্কে অংশ নিয়ে আলাপুঝার সিপিআই সাংসদ এ এম আরিফ বলেন, লোকসভা ভোট এসেছে তাই কাশ্মীর ইস্যু তাজা করতেই বিজেপি এই দুটি বিল এনেছে। লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে সদস্য মনোনীত করার অধিকার দিয়ে আসলে বিজেপি’র ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আরএসএস’র বহুঘোষিত অ্যাজেন্ডা পূরণ করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। 
লোকসভায় বিল পেশ করতে গিয়ে অমিত শাহ যথারীতি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর  কাশ্মীর নিয়ে ‘ভুল’ এর সমালোচনা করেন। এই নিয়ে কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরির সঙ্গে তুমুল বাদানুবাদ শুরু হয়। অধীর চৌধুরি অমিত শাহকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, একদিন পুরোদিন কাশ্মীর প্রসঙ্গে জওহরলাল নেহরুর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হোক। অমিত শাহ এদিন নাম না করে কাশ্মীরের প্রবীণ নেতা ফারুক আবদুল্লাকে আক্রমণ করেন। ফারুক আবদুল্লাও মাঝপথে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর প্রতিবাদ করেন। সংবিধানের ধারার ব্যাখ্যা নিয়ে মণীশ তিওয়ারির সঙ্গে তুমুল বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন অমিত শাহ। এদিকে অমিত শাহের দেওয়া তথ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ৩৭০ ধারা বাতিলের জন্য কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিয়ে যে গালভরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মোদী সরকার, তার কিছুই পূরণ করতে পারেনি সরকার।  কাশ্মীরি পণ্ডিতদের জন্য ৬ হাজার ফ্ল্যাট তৈরি করার কথা বলা হয়েছিল, তারমধ্যে ৮৮০টাই এখন পর্যন্ত তৈরি করা গেছে বলে জানান অমিত শাহ। তবে সেগুলি এখনও বণ্টন করা হয়নি। আসলে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকে কাশ্মীর উপত্যকায় কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপরে আক্রমণ বেড়েছে। সরকারি কর্মচারীরাও কাশ্মীরে কাজ করতে চাইছেন না। জম্মুতে বদলির দাবিতে তাঁরা জোর বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। ফলে কাশ্মীরে তৈরি করা ওই ফ্ল্যাটে কেউই যেতে চাইছে না। এইসব তথ্য অবশ্য গোপন করে গেছেন অমিত শাহ।  
 

Comments :0

Login to leave a comment