Editorial

সম্প্রসারণশীল ব্রিকস

আন্তর্জাতিক

BRICS


পশ্চিমী দুনিয়ার উন্নত দেশগুলির উপস্থিতিহীন বহু দেশীয় গোষ্ঠীতে অন্যতম শক্তিশালী দেশ হিসাবে চীন যুক্ত তার একটি ব্রিকস। মূলত উন্নত বিশ্বের বিপরীতে একবিংশ শতাব্দীর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উন্নয়নশীল বিশ্বের অগ্রণী দেশগুলিকে নিয়ে দু’দশক আগে গঠিত হয় ব্রিকস। শুরুতে চীন, রাশিয়া, ভারত ও ব্রাজিলকে নিয়ে এই গোষ্ঠী তৈরি হলেও পরবর্তীকা‍‌লে যুক্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির সমস্যাগুলি বিশ্ব মঞ্চে উত্থাপন এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিই ছিল এই গোষ্ঠীর প্রধান লক্ষ্য। ব্রিকস ছাড়া অপর গোষ্ঠী সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন বা এসসিও। মূলত চীন, রাশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তৈরি কয়েক‍‌টি দেশকে নিয়ে এই গোষ্ঠী গঠিত হলেও পরে তাতে ভারত, পাকিস্তান সহ অন্য কয়েকটি দেশ যোগ দেয়। মূলত আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমী উন্নত দেশগুলির আধিপত্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী ভূমিকার বিরুদ্ধে তৃতীয়‍‌ বিশ্ব তথা উন্নয়নশীল দেশগুলি জোটবদ্ধ হবার চেষ্টা আগেও নানাভাবে করেছে। এরজন্য সেই ১৯৬০-র দশকে মূলত ভারতের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল শক্তিশালী জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন। ১৯৯০-র দশকে নয়া উদারনীতির মাধ্যমে পশ্চিমী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গড়ে উঠেছিল ৭৭টি দেশের গোষ্ঠী জি-৭৭। আরও পরে ব্রিকস গোষ্ঠীর আবির্ভাবের পর্বে তৈরি হয়েছিল ১৫টি দেশের গোষ্ঠী জি-১৫।

 যদিও জি-১৫ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বর্তমানে জি-৭৭ বা জি-১৫-র অস্তিত্ব নেই। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনও কার্যত অস্তিত্বহীন। স্বাভাবিকভাবেই উন্নয়নশীল দেশ তথা গ্লোবাল সাউথের একমাত্র কণ্ঠ হিসাবে উত্তরোত্তর গুরুত্ব বেড়ে চলেছে ব্রিকস-এর। সন্দেহ নেই আগামীদিন এর গুরুত্ব ও প্রভাব যথেষ্ট বাড়বে। পাশাপাশি দুই প্রধান সদস্য দেশ চীন ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানা‍পোড়েন প্রভাবিত করতে পারে ব্রিকস-এর কর্ম তৎপরতাকে। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে সদ্য সমাপ্ত তিন দিনের সম্মেলনে তার স্পষ্ট আঁচ মিলেছে।
বিগত পাঁচ বা তারও বেশি সময় ধরে আমেরিকা ও ইউরোপের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়া তাদের অন্যতম শত্রু পক্ষ। সবদিক থেকে রাশিয়াকে দুর্বল ও নতজানু করাতে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। চীনের অগ্রগতি ঠেকাতেও এশিয়ায় ন্যাটোর নতুন সংস্করণ তৈরি করে‍‌ছে আমেরিকা। এদিকে সীমান্তকে ঘিরে গত তিন বছর ধরে ভারত-চীন দ্বন্দ্ব তীব্র। বস্তুত মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীন-ভারত সম্পর্কে ক্রমশ তলানিতে ঠেকেছে। বিপরীতে ভারত আমেরিকার ঘনিষ্ঠ হবার লক্ষ্যে মার্কিন সামরিক স্ট্র্যাটেজিক বলয়ে ঢুকে পড়তে চলেছে। ফলে ব্রিকস-এর অভ্যন্তরীণ সম্পর্কে অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছে। পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির মোকাবিলা করে গ্লোবাল গ্লোবাল সাউথের স্বার্থে অনেক নতুন নতুন ভাবনা এসেছে। ব্রিকস-এর নিজস্ব মুদ্রা চালু, সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে তার কাজের পরিসর ও প্রভাব বৃদ্ধি তার অন্যতম। নতুন মুদ্রা চালু না হলেও নতুন ছ’টি দেশ সদস্য হয়েছে। ৪০টিরও বেশি দেশ সদস্য হতে চাইছে। আগামীদিনে সদস্য বাড়বে এবং গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠ জোরদার হবে। আগামী বিশ্ব পরিস্থিতিতে উন্নয়নশীল দেশগুলি ব্রিকস প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যোগ্য অবস্থান আদায় করে নিতে চাইবে।

Comments :0

Login to leave a comment