coromandel express accident

মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়াবে

জাতীয়

করমণ্ডল এক্সপ্রসের একটি কামরা শনিবার রাত পর্যন্ত দোমড়ানো অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে। ২৪ ঘণ্টা পরেও সেখান থেকে কোনও যাত্রীকে উদ্ধার করা যায়নি। এই অবস্থায় শুক্রবারের দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা সরকারি ভাবে ২৮৮। তবে, তা ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে। ওই কামরাটিতে উদ্ধারকারীরা ঢুকতে পারলে নিহতের সংখ্যা একলাফে অনেকটাই বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওডিশার মুখ্য সচিব পি কে জেনা সাংবাদিকদের বলেছেন, ওই একটি কামরাই বাকি। তবে সেটি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। কামরাটি মাটিতে ঢুকে গেছে। 
চলতি শতাব্দীতে ভারতে সবচেয়ে মারাত্মক ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা হাজারের কাছাকাছি। এঁদের মধ্যে অনেকেরই আঘাত গুরুতর। স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে পৌঁছাতে পেরেছেন অধিকাংশই। একদিকে বালেশ্বরের হাসপাতাল, অন্যদিকে ভুবনেশ্বর এইমসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অনেককেই। মেদিনীপুর ও খড়্গপুর হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া হয়েছে বহু মানুষকে। 
শুক্রবার রাতে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস, হাওড়ামুখী যশবন্তপুর এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি পরস্পরকে ধাক্কা মারায় এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটেছিল। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে পরপর এই তিন ট্রেন একই লাইনে দুর্ঘটনায় পড়ায় প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে তা সম্ভব হলো? শনিবার সারাদিন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন রেলের আধিকারিকরা। প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে বালেশ্বরের পরে বাহানাগা বাজার স্টেশনের একটু আগে করমণ্ডল লুপ লাইনে ঢুকে পড়েছিল। সেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িকে ধাক্কা মেরে উলটে যায় করমণ্ডলের অধিকাংশ কামরা। এবার তীব্র গতিতে ছুটে আশা যশবন্তনগর এক্সপ্রেস ওই কামরাগুলিতে এসে ধাক্কা মারায় উলটে যায় সেই ট্রেনেরও বেশ কয়েকটি কামরা। রেল সূত্রে বলা হয়েছে, করমণ্ডল ছুটছিল ঘণ্টায় ১২৮ কিলোমিটার গতিতে, যশবন্তপুরের গতি ছিল ঘণ্টায় ১১৬ কিলোমিটার। দুই ট্রেনে অন্তত ২হাজার যাত্রী ছিলেন। তবে, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনও স্পষ্ট হয়নি। 
রেলের নিজস্ব কর্মীরা ছাড়াও উদ্ধারে হাত লাগিয়েছিলেন ৩০০-র বেশি এনডিআরএফ কর্মীরা। ওডিশার দুর্ঘটনা মোকাবিলা টিমের সদস্যরা। কিন্তু সবচেয়ে বেশি যাত্রীকে বাঁচিয়েছেন স্থানীয়রা। শুধু ট্রেন থেকে নিয়ে আসাই নয়, তাঁদের হাসপাতালে পৌঁছে দেবার কাজেও স্থানীয়রা রাতভর কাজ করেছেন। বরং যাত্রীদের অনেকেরই অভিযোগ, রেল ও রাজ্য প্রশাসনের তৎপরতায় ঘাটতি ছিল। শনিবার বিকেলের পরে উদ্ধারের কাজে গতি কমে এসেছে। যত যাত্রী জখম হয়েছেন, তাঁদের হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে যাওয়ার পরিকাঠামো ছিল না। যদিও সরকারি সূত্রের খবর, ২০০ অ্যাম্বুলেন্স, ৫০টি বাসের সঙ্গে ৪৫টি মোবাইল হেলথ ইউনিটকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসা হয়েছিল। শনিবার দিনভর দেখা গেছে, মৃতদের সারি সারি ফেলে রাখা হয়েছে। বালেশ্বরের একটি হলে মৃতদেহ ফেলে রাখা হয়েছে চাদরে মুড়ে। ছোট লরিতে মৃতদেহ স্তূপ করে ফেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ময়না তদন্তের জন্য। শণাক্ত করার কাজ আদৌ করা যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। 
বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের অনেকেই বলেছেন, ধাক্কার সঙ্গে প্রবল শব্দ হয়। যেন বিরাট বিস্ফোরণ ঘটেছে। একবার নয়, দু-তিন বার। কামরা উলটে যায়। যাঁরা কিছুক্ষণ বাদে বেরিয়ে আসতে পারেন তাঁরা দেখেছেন চারধারে রক্তাক্ত দেহ। তারই মধ্যে হাঁটু গেড়ে কেউ কেউ চলে এসেছেন লাইনের ধারে। কারো কাছে পৌঁছেছে উদ্ধারকারীর বাড়ানো হাত। 
এরই মধ্যে এদিন ঘটনাস্থলে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। হাসপাতালে গিয়ে আহতদের দেখেন। ‘দায়ীরা শাস্তি পাবে’ বলে মন্তব্য করেন। এসেছিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তিনি ওডিশারই বাসিন্দা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকও আসেন শনিবার সকালেই। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এসে ঘুরে যান।
 

Comments :0

Login to leave a comment