Cyclonic storm

অভিমুখ বদলে কচ্ছ থেকে করাচির মধ্যে আছড়ে পড়তে চলেছে ‘বিপর্যয়’

জাতীয়

Cyclonic storm

অভিমুখ বদলে কচ্ছ থেকে করাচির মধ্যেই আছড়ে পড়তে চলেছে আরব সাগরে তৈরি হওয়া অতি মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’। শেষ পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনও জায়াগায় ‘বিপর্যয়’ আছড়ে পড়বে তা এখনও নিশ্চিত নন আবহাওয়াবিদরা। তবে, ঝড়ের তাণ্ডবে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এবং জীবনহানীর ঘটনা এড়াতে কেন্দ্র ও রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে নামানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে বলে রবিবার সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে।
গুজরাটের কচ্ছ, জামনগর, মোরবি, গির সোমনাথ, পোরবন্দর এবং দেবভূমি দ্বারকা জেলায় ‘বিপর্যয়’এর ব্যািপক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই জেলাগুলিতে প্রবল ঝড়ের সঙ্গে টানা ভারী বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হতে পারে। এই কারণে উদ্বিগ্ন রাজ্যের পুলিশ, প্রশাসন। মঙ্গলবার থেকেই এই অঞ্চলে ‘বিপর্যয়’-এর প্রভাবে ঝড় হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। সময় যত গড়াবে ঝড়ের গতিবেগ ততই বাড়তে থাকবে। সঙ্গে চলবে টানা ভারি বৃষ্টি। কোনও জায়গায় হবে অতিভারি বৃষ্টিও। এর জেরে বহু অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।    

 
এদিন রাতে আবহাওয়ার দপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, অতি মারাত্মক আকারের এই ঘূর্ণিঝড় চতুর্থ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আগামী দু’দিন আরও শক্তি বাড়িয়ে শক্তির দিক থেকে ষষ্ঠ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এই বুলেটিনে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে আগামী ১৫ জুন, দুপরে কচ্ছ জেলার মাণ্ডভি থেকে পাকিস্তনের করাচির মধ্যে যে কোনও উপকূলবর্তী অঞ্চলে ‘বিপর্যয়’ অতিক্রম করবে। ওই সময় ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১২৫ থেকে ১৩৫ কিমি থাকবে। সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ কিমি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে এই সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে। এদিনই সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছ অঞ্চলে ‘হলুদ’ সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। তবে, স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পরই ক্রমশ শক্তি হারাতে থাকবে ‘বিপর্যয়’। 
এদিনের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ৫ দিন সমুদ্র উত্তাল থাকায় মৎস্যজীবীদের মাছ ধরতে যাওয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

পূর্বমধ্য আরব সাগরে তৈরি হওয়া ‘বিপর্যয়’ ঘণ্টায় ৭ কিমি বেগে ক্রমশ উত্তর দিকে এগিয়ে চলেছে। গত ৫ দিন সে একই পথে এগিয়ে চলেছে। এদিন রাত পর্যন্ত মুম্বাই থেকে এর দূরত্ব ছিল ৫৪০ কিমি পশ্চিমে। পোরবন্দর থেকে এর দূরত্ব আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৪০০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে। দ্বারকা থেকে এর দূরত্ব ৪৪০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে। দক্ষিণ করাচি থেকে দূরত্ব  ৭০০ কিমি দক্ষিণে। আগামী ৩ দিন আরও উত্তর দিকে এগিয়ে যাবে। ১৪ জুন সকালে এর যাত্রাপথের অভিমুখ কিছুটা পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে আগ্রসর হবে বলে এদিন আবহাওয়া দপ্তরের সর্বেশেষ বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়েছে। 
‘বিপর্যয়’এর প্রভাবে গত ৫ দিন ধরেই আরব সাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় কেরালা থেকে গুজরাটে সতর্কতা জারি করেছিল আবহাওয়া দপ্তর। আবহাওয়া দপ্তরের নিষেধাজ্ঞার জেরে একদিন সমুদ্রে মাঝ ধরতে যেতে পারেননি মৎস্যজীবীরা। তাঁদের মধ্যে যাঁরা সমুদ্রে গিয়েছিলেন ইতিমধ্যে তাঁরা পাড়ে চলে এসেছেন। শুক্রবার থেকে দক্ষিণ কর্নাটক, গোয়া, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাট উপকূলে বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে। এদিনও  বিশাল ঢেউয়ের ধাক্কায় সমুদ্র লাগায়ো অঞ্চল প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বহু জায়গায় পাকা ঘরও ভেঙে পড়েছে।

প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ে বৈঠক হয়েছে বলে এদিন সরকারি সূত্র জানিয়েছে। বৈঠকে রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলির জেলা শাসকরা ছাড়াও পুলিশ প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকরা ছিলেন। সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল এবং নিচু অঞ্চল থেকে সাধারণ নাগরিকদের সরিয়ে নিয়ে এসে নিরাপদ আশ্রয়ে তাঁদের রাখার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই বৈঠক থেকে। নিরাপাদ জায়গায় আশ্রয় শিবির খোলার কাজ শুরু করে দিতেও বলা হয়েছে। পুলিশ, প্রশাসনের পাশাপাশি রাজ্য ও কেন্দ্রের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এসডিআরএফ এবং এনডিআরফ’কে নামানো হচ্ছে বলে এদিন সরকারি সূত্রটি জানিয়েছে। এদিনই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় তিথাল বিচ, ভালসাদ বিচের হোটেলগুলি খালি করে দেওয়া হচ্ছে। পর্যটকদের যাওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন।  

Comments :0

Login to leave a comment