RANIGANJ INDUSTRY CULTURE

শুকিয়েছে শিল্প কারখানা, যাত্রাশিল্পেরও বাজার খারাপ রানিগঞ্জে

জেলা

রানিগঞ্জে যাত্রাপালার একটি এজেন্সি দপ্তর।

মলয়কান্তি মণ্ডলরানিগঞ্জ

রানিগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের বহু কলকারখানা বন্ধ হয়েছে। জোর ধাক্কা লেগেছে শিল্পাঞ্চলের অর্থনীতিতে। অর্থনীতির আলো কমে যাওয়ায়  বিনোদনের যাত্রা মঞ্চেও জলুস কমেছে। 

রথের দিন সাধারণ ভাবে যাত্রাপালার অগ্রিম বুকিং চালু হয়। এই রথযাত্রার দিনেই রানিগঞ্জের রানিসায়ের মোড়ে কলকাতার চিৎপুর ও মেদিনীপুরের যাত্রাদলের বুকিংয়ের ভিড় জমত। যাত্রার বুকিং অফিস চত্বরে যাত্রার পোস্টারেহোর্ডিংয়ে ছয়লাপ হতো। রানিসায়ের মোড় থেকেই দুই বর্ধমানবাঁকুড়া,  বীরভূমপুরুলিয়া এমনকি ঝাড়খণ্ড এলাকার যাত্রার অগ্রিম বুকিং হয়। রানিসায়ের মোড়ে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে গিয়ে দেখা গেলএই বুকিং অফিসে সেই জমজমাট  ভিড় আর নেই। 

যাত্রাদলের এজেন্টরা জানালেনকরোনার প্রকোপে গত দুই বছর যাত্রার বুকিং হয়নি বললেই চলে। এবারে তার তুলনায় বাজার খানিকটা ভালো। এখনকার হিসেবেএকটি যাত্রাপালার মঞ্চস্থ করার জন্য যাত্রাদল নূন্যতম চল্লিশ হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকা নেয়। তবে আগের তুলনায় অনেক কম ব্যবসা।

রানিগঞ্জের নাটমন্দিরের অরূপ ভাণ্ডারীর দাবি তারা বছরে ১৫০ থেকে ২০০টি যাত্রাপালার অগ্রিম বায়না পান। শারদোৎসবের মরশুমে প্রত্যন্ত গ্রামেগঞ্জে মঞ্চস্থ হয় সেই যাত্রাপালা। বাঁকুড়াবীরভূম ও পুরুলিয়ায় অগ্রিম বায়না পেলেও ধানবাদ থেকে আসানসোলরানিগঞ্জ খনি শিল্পাঞ্চলের বাজার মন্দা। রানিগঞ্জের কয়লাখনি ও বন্ধ কারখানার আবাসনগুলি থেকে শ্রমিকরা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। এছাড়াও যাত্রার আয়োজক ক্লাব সংস্থাগুলির অনীহা। বর্তমান রাজ্য সরকারের থেকে মোটা টাকা অনুদান পেয়ে তারা বিচিত্রানুষ্ঠানঅর্কেস্ট্রার আয়োজন করছে। তাছাড়া আয়োজক ক্লাব সংস্থাগুলির সমাজবিরোধী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে। যে ক্লাব সংস্থাগুলির যাত্রা আয়োজন করার সদিচ্ছা রয়েছে তাদের আর্থিক সঙ্গতি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রানিগঞ্জ শিল্পাঞ্চলে কাজ না পেয়ে স্থানীয় যুবরা পরিযায়ী শ্রমিক হয়েছেন। 

রানিগঞ্জ খনি অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে একসময় ছোটছোট নাটক ও যাত্রার দল ছিল। গ্রামের যে কোনও অনুষ্ঠানে ফাঁকা মাঠে ম্যরাপ খাটিয়ে যাত্রা হতো। চারদিক খোলা মঞ্চে চড়া গলায় সংলাপ মুখে মুখে ফিরতো। গ্রামের শোষিত মানুষের জীবনের ছবিজমিদারের অকথিত অত্যাচার ও সেই অত্যাচারের প্রতিরোধের ঘটনা মঞ্চস্থ হতো। উৎপল দত্তের 'রাইফেল', 'সন্ন্যাসীর তরবারিসেসময় যাত্রাশিল্পে আলোড়ন ফেলেছিল। ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়ের 'রক্তে রোয়া ধান' এর মতো কালজয়ী যাত্রাপালা এখনও গ্রামের প্রবীন মানুষের মনে গেঁথে আছে। যাত্রার জন্য রাতবিরেতে বাড়ি ফেরার জন্য সেসময় মিনিবাসের পরিবহন সচল থাকতো যাত্রার দিনগুলোতে। এখন সেসব অতীত। 

এক প্রবীণ যাত্রাশিল্পীর কথায় সমাজে মেকি আধুনিকতার  প্রসার হলেও লোকশিল্প  হারিয়ে যাবে না। লোকশিল্পের ওপর আক্রমণ আসবে কিন্তু তা প্রতিহত হবেই। একইরকম আশাবাদী বংশ পরম্পরায় তিন পুরুষ ধরে যাত্রাপালার বুকিংয়ের এজেন্সি নাটমন্দিরের বর্তমান কর্ণধার অরূপ ভাণ্ডারীর। দ্বিমত প্রকাশ করেন 'যাত্রা নিকেতনএজেন্সির কর্মকর্তার। বাঁকুড়াবীরভূমপুরুলিয়ায় যাত্রাপালার বুকিং  বাড়ালেও  কিন্তু পশ্চিম বর্ধমান জেলার শিল্পাঞ্চলে কলকারখানার মতো রুগ্ন হয়ে পড়েছে যাত্রাপালা। রানিগঞ্জ খনি অঞ্চলে এই রুগ্নতা কি কাটবে ? উত্তর অজানাই। 

Comments :0

Login to leave a comment