PROBANDHA \ CHITANAY — TAPAN KUMAR BAIRAGAYA \ MUKTADHARA | 18 DECEMBER 2024

প্রবন্ধ \ বৈষ্ণবতীর্থ জাহান্নগর ও দেনুর \ তপন কুমার বৈরাগ্য \ মুক্তধারা \ ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

PROBANDHA  CHITANAY  TAPAN KUMAR BAIRAGAYA  MUKTADHARA  18 DECEMBER 2024

প্রবন্ধ

বৈষ্ণবতীর্থ  জাহান্নগর ও দেনুর
তপন কুমার বৈরাগ্য

মুক্তধারা

শ্রীবাসের ভ্রাতুষ্পুত্রী ছিলেন নারায়ণী দেবী। নারায়ণী দেবী ছিলেন শ্রী চৈতন্য দেবের আশীর্বাদ ধন্যা।শ্রী চৈতন্যদেব তাঁকে আশীর্বাদ করে বলেছিলেন তাঁর গর্ভে জন্ম নেবেন সেই যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বৈষ্ণব
কবি।শ্রীচৈতন্যর আশীর্বাদ অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হয়েছিল।
তাইতো ১৫০৭ খ্রিস্টাব্দের বৈশাখমাসের কৃষ্ণদ্বাদশী তিথিতে
নবদ্বীপের নয়টি দ্বীপের একটি দ্বীপ মোদাদ্রুমদ্বীপ ,যার
বর্তমান নাম জাহান্নগর, সেখানে বৃন্দাবন দাস জন্মগ্রহণ করেন।
যাকে বৈষ্ণব সন্ত কবি বলা হয়।কবি বিরাশি বছর বেঁচে ছিলেন।
১৫৮৯খ্রিস্টাব্দে তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে।জীবনের বেশিটা সময়
তিনি কাটান দেনুরে।
জাহান্নগর এবং দেনুর দুটি স্থানই বর্তমানে পূর্ববর্ধমান জেলায় অবস্থিত।
১৬বছর বয়েসে তিনি নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
শ্রীচৈতন্যদেব  ১৪৮৬খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।১৫৩৩খ্রিস্টাব্দে
তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে।তাই বলা যায় তিনি শ্রীচৈতন্যদেবকে বেশ
কিছু বছর স্বচক্ষে দেখেছেন। তিনি ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীচৈতন্য
ভাগবত লেখা শেষ করেন।তখন তাঁর বয়েস তেত্রিশ বছর।
এই অমূল্য গ্রন্থটি লেখার পিছনে এক বিরাট ইতিহাস আছে।
রামহরি চক্রবর্তী ছিলেন দেনুরগ্রামের জমিদার।অন্যান্য জমিদারদের মতন তিনি ছিলেন না।তিনি ছিলেন একজন
মহান মানুষ।তিনি মনে মনে নিত্যানন্দকে গুরু হিসাবে মেনে
নিয়েছিলেন।তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল তিনি তাঁর সাধনার দ্বারা
তাঁর গুরুদেবকে একদিন নিয়ে আসবেনই। এক চিত্তে তিনি
ডেকে যেতে লাগলেন।দিন যায় ,বছর যায় ,মাস যায়।তবু
তিনি ভেঙে পড়লেন না।একদিন তাঁর স্বপ্ন সার্থক হলো।
নিত্যানন্দ মহাপ্রভু বৃন্দাবন দাসকে এবং অন্যান্য শিষ্যদের নিয়ে
একদিন এই গ্রামে এলেন।শিষ্যের সেবায় তিনি খুব খুশি
হলেন।যাবার আগে তিনি রামহরি চক্রবর্তীকে বললেন তোমার
সেবায় আমরা খুব সন্তুষ্ট হয়েছি।তুমি আমার কাছে কি চাও?
রামহরি নতজানু হয়ে বলেছিলেন--এই গ্রামটা যেন বৈষ্ণব
তীর্থ হয়ে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয়। নিত্যানন্দ মহাপ্রভু
বৃন্দাবন দাসকে বললেন--তোমাকে এই গ্রামে বসে চৈতন্য
মহাপ্রভুর প্রথম পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ রচনা করতে হবে। কিভাবে
এই বৈষ্ণবগ্রন্থ রচনা করতে হবে, তার পরামর্শ দিতে তিনি
বেশ কিছুদিন এই গ্রামে ছিলেন। বৃন্দাবন দাস অক্লান্ত
পরিশ্রম করে লিখলেন চৈতন্য ভাগবত।প্রথমে এই গ্রন্থটির
নাম ছিলো চৈতন্যমঙ্গল।যেহেতু লোচনদাসের চৈতন্যমঙ্গল
গ্রন্থ আছে ,তাই পরে এই গ্রন্থটির নাম পরিবর্তন করে
রাখা হয় চৈতন্যভাগবত।এই গ্রন্থে বৃন্দাবন দাস শ্রীচৈতন্যকে
ভগবানরূপী কৃষ্ণের অবতাররূপে দেখেছেন।গ্রন্থ লেখা
শেষ হলে নিত্যানন্দ মহাপ্রভু গ্রন্থটির ভূয়সী প্রশংসা করেন,
এবং তাঁকে ব্যাসদেব বলে সম্মানিত করেন।
এই গ্রন্থের তিনটি খন্ড।আদিখন্ড,মধ্যখন্ড এবং অন্তঃখন্ড।
বাকী জীবন বৃন্দাবন দাস দেনুর গ্রামেই কাটিয়েছিলেন।
তাঁর মহিমায় দেনুর গ্রাম হয়ে ওঠে বৈষ্ণব তীর্থক্ষেত্র।
শ্রীপাট দেনুরে আছে শ্রীবৃন্দাবন দাস ঠাকুরের শ্রীপাট।
যেখানে বসে তিনি শ্রীচৈতন্য ভাগবত রচনা করেন।
সেখানে আজও সযত্নে রক্ষিত আছে তাঁর নিজের হাতের
লেখায় শ্রীচৈতন্য ভাগবতের পুঁথি।আছে মন্দির।যে মন্দিরে
আছে তাঁর উপাস্য দেবতা।
মন্দিরের বাইরে আছে শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর পদ্মের পদচিহ্ন।
আরো ভক্তিরসের বেশ কিছু স্মৃতিচিহ্ন।আজ সারা ভারতবর্ষে
দেনুর বৈষ্ণবতীর্থ হিসাবে পরিচিত হয়েছে।দেনুর মন্তেশ্বর ব্লকে
অবস্থিত এবং মন্তেশ্বেরর সন্নিকটেই। 
বৃন্দাবন দাস যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন জাহান্নগর(মামগাছি)
সেই স্থানও বৈষ্ণবতীর্থ হিসাবে সমধিক পরিচিত হয়েছে।
যেখানে লেখা আছে ব্যাসাবতার শ্রীবৃন্দাবন দাসের জন্মস্থান।

Comments :0

Login to leave a comment