CBI RG KAR

সিবিআই ও সরকারি আইনজীবীর আপত্তিতে নির্যাতিতার মায়ের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলো না

রাজ্য

  আর জি করের পড়ুয়া চিকিৎসকের মাকে বাদ রেখেই ৫১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার আর জি করের ধর্ষণ-খুনের মামলায় সিবিআই’র প্রথম দফার চার্জশিটে মূল অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পায়। এর আগে যেমন প্রকাশ্যে বারেবারে এই ঘটনায় সে যুক্ত নয় বলে দাবি করেছিল, সেই একই সুরেই ধৃত সঞ্জয় রায় শিয়ালদহ আদালতে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রুদ্ধদ্বার শুনানিতে দাবি করে, সে এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়। আদালতের একটি সূত্রে জানা গেছে, ধৃত সিভিক দাবি করে সে ওই পড়ুয়া চিকিৎসককে চিনতো না, তাকে ফাঁসানো হচ্ছে, এমনকি চারতলার সেমিনার রুমে পাওয়া ব্লু টুথ হেডফোনও নাকি তার নয়। যদিও রুদ্ধদ্বার শুনানিতে প্রথম থেকেই মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকি, বিচার প্রক্রিয়ায় সাক্ষ্য গ্রহণ পর্বে সিবিআই নির্যাতিতা পড়ুয়ার বাবা-মাকেও থাকতে দেয়নি বলে অভিযোগ। তবে এদিন এজলাসে উপস্থিত ছিলেন নির্যাতিতা পড়ুয়া চিকিৎসকের বাবা-মা।
তবে সাক্ষ্য গ্রহণের তালিকায় সবার প্রথমে ওই পড়ুয়া চিকিৎসকের বাবার বয়ান নেওয়া হলেও কেন মায়ের বয়ান নেওয়া হলো না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে নির্যাতিতার মা অভিযোগ করেছেন, ‘সিবিআই তো আমার বয়ানই নিল না। বাড়িতে এসে কথা বলেছে, সব বলেছি। সিবিআই যখন আমাদের সঙ্গে কথা বলত, তখন অনেক কিছু জানাতো। আমরাও তাদের প্রচুর তথ্য দিয়েছি। তারপরও সিবিআই কী করে বলে কোনও কিছু নেই? আমার বয়ান নিলো না কেন?’ নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগ, সব কিছু সিবিআই’র আধিকারিকদের জানানো হয়েছিল। তাঁর সঙ্গে দফায় দফায় বাড়িতে এসে সব কথা বলে নোট নিয়ে গিয়েছিল। অথচ বিচার পর্বে তাঁর সাক্ষ্যই গ্রহণ করা হলো না। যা রীতিমত সন্দেহজনক বলেই মনে করা হচ্ছে। 
জানা গেছে, সরকারি আইনজীবীর পাশাপাশি সিবিআই’র তরফেও নির্যাতিতার মায়ের সাক্ষ্য গ্রহণে আপত্তি জানানো হয়েছিল আদালতে। কেন? সিবিআই’র তরফে তার কোন ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি। শুক্রবার শিয়ালদহ আদালতে হাজির করানো হয় চার্জশিটে একমাত্র অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিচারকের সামনে আত্মপক্ষ সমর্থন করে সে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী বছরের ২ জানুয়ারি।
গত ৭ অক্টোবর সিবিআই’র তরফে প্রথম দফার এই চার্জশিট পেশ করা হয়েছিল। একইসঙ্গে আদালতে সেদিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছিল পরবর্তীতে আরও কয়েক দফায় অতিরিক্ত (সাপ্লিমেন্টারি) চার্জশিট করা হবে। অথচ আর জি করে প্রাক্তন ধিক্কৃত অধ্যক্ষ ও টালা থানার তৎকালীন ওসি’কে গ্রেপ্তারের পরে ৯০ দিন পেরিয়ে গেলেও সাপ্লিমেন্টার চার্জশিট পেশ করতে পারেনি সিবিআই, যার ফলে এরকম সংবেদনশীল ঘটনাতেও জামিন পেয়ে যায় সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডল। যা নিয়ে গোটা রাজ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। ফের আন্দোলন,অবস্থানের রাস্তায় চিকিৎসকেরা। ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় একজন নাকি একাধিকজন যুক্ত, কীভাবে তথ্য প্রমাণ লোপাট করা হলো, কেন ধর্ষণ ও খুন করা হলো ওই পড়ুয়া চিকিৎসককে, উদ্দেশ্য কী- এরকম একাধিক প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে শুধু এরাজ্যের মানুষ নয় গোটা দেশজুড়ে আর জি করের বর্বরতায় পথে নেমেছিল সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসক সমাজ। যদিও সিবিআই’র প্রথম দফায় চার্জশিটে এই সমস্ত প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি।
সিএফএসএল’র রিপোর্ট, ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে সঞ্জয় রায়ের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে সিবিআই। প্রথম থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল সেদিন ভোর রাতে চারটের পরে যদি ঘটনা ঘটে থাকে তবে মাত্র ২৯ মিনিটের মধ্যে কীভাবে এক মদ্যপ অবস্থায় থাকা ব্যক্তি ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটিয়ে, দেহ পরিপাটি করে রেখে নিশ্চিন্তে ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে গেলো? সিবিআই সূত্রে জানা গেছে সেদিন পুলিশের দেওয়া ফুটেজ অনুযায়ী সেদি ভোর ৪টে ৩ মিনিট নাগাদ চার তলার সেমিনার রুম সংলগ্ন করিডরে দেখা যায় ধৃত সিভিককে। ৪টা ৩২ মিনিট নাগাদ তাকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। একজনের পক্ষে ২৯ মিনিটে এতকিছু করা সম্ভব? তার স্পষ্ট উত্তর প্রথম দফার চার্জশিটে আছে কী? উত্তর না। 
খোদ সিবিআই নিজেই আদালতে একের পর এক স্ববিরোধিতায় ভুগেছে। গত ৪ নভেম্বর খোদ সিবিআই’র তরফে আদালতে বলা হয়— আমরা প্রথম চার্জশিট সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছি। সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে বায়োলজিক্যাল তথ্য প্রমাণ মিলেছে তাই প্রথম দফার চার্জশিট নাম যুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তদন্ত এখানেই শেষ নয়।তার অর্থও এই নয় যে আর কেউ যুক্ত নয়। আমরা চার্জশিটে এমন দাবি করিনি যে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার একাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। অথচ সেই সিবিআই’র তরফে তদন্তকারী আধিকারিক সীমা আহুজা গত ১৩ তারিখ শিয়ালদহ আদালতে ৯০ দিন পেরিয়ে গেলেও চার্জশিট দিতে না পারার কথা অবলীলায় জানিয়েছেন।
তাহলে নভেম্বরে যে কথা আদালতে জানালো ডিসেম্বরে তার বিপরীত অবস্থানে গেল কেন? কেবলমাত্র পেশাগত দায়বদ্ধতার ত্রুটি বা অপদার্থতা নাকি অন্য কোনও চাপ বা প্রভাব রয়েছে তদন্তের ওপর? জনমানসে বাড়ছে সন্দেহ। সিবিআই’র নীরবতা এবং শাসক তৃণমূলের উচ্ছ্বাস সেই সন্দেহকে আরও গভীর করছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment