Explosion Kerala

কোচিতে বিস্ফোরণে হত ২, ধরা দিল আততায়ী

জাতীয়

এন এস সাজিথ: কোচি
 

কোচির কাছে ধর্মীয় সভা চলাকালীন পরপর জোরালো বিস্ফোরণে অন্তত দু’জন মহিলা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫১ জন। আহতদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা সঙ্কটজনক। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছে পুলিশ প্রশাসন।
রবিবার সকালে কোচির কাছে কালমাসেরিতে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে জিহোভা উইটনেস নামের খ্রীস্টান ধর্মের একটি গোষ্ঠীর অনুষ্ঠান চলাকলীন পরপর আইডি বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে আশপাশের অঞ্চল। বিস্ফোরণের জেরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে কনভেনশন সেন্টারে। পুলিশ, দমকলের বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুনকে নিয়ন্ত্রণে আনে। এর পরই সোস্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করে কালমাসেরিতে বিস্ফোরণের ঘটানার দায় নিজের কাঁধে নিয়ে নেয় কোচিরই বাসিন্দা ডমিনিক মার্টিন নামের এক ব্যক্তি। দুপুরেই কোচিরই একটি থানায় গিয়ে আত্মসমপর্ণ করে। পুলিশের কাছে দেওয়া বয়ানে মার্টিন দাবি করে এদিনের বিস্ফোরণ সে ঘটিয়েছে। ওই ব্যক্তি জানিয়েছে, খ্রীস্টানদের জিহোভা উইটনেস গোষ্ঠীতেই এক সময়ে ছিল সে। ওই সংগঠনের প্রতি বিদ্বেষ থেকেই এই নাশকতামুলক কাণ্ডটি ঘটিয়েছে। কিন্তু তাঁর পোস্ট করার কিছুক্ষণের মধ্যেই্ আশ্চর্যজনকভাবে ফেসবুকে মার্টিনের অ্যাকাউন্টটি পুরোপুরি উধাও হয়ে যায়। তবে, কালমাসেরি’র কনভেনশন সেন্টারের ভিডিও ফুটেজ এবং মার্টিনের মোবাইল পরীক্ষা করেও তার এই বক্তব্যের সত্যতা খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। ডমিনিক মার্টিন পুলিশের কাছে দাবি করেছে, সে অনলাইন মারফৎ এই ধরনের বোমা তৈরির কাজ শিখেছিল। দূর নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মাধ্যমেই এদিন বিস্ফোরণটি ঘটিয়েছে। মার্টিনের মোবাইল থেকে সে কিভাবে বিস্ফোরণটি ঘটিয়েছিল তার ফুটেজও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এদিকে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রাজ্যজুড়ে চরম সতর্কতা জারি করে পুলিশ। রাজ্যের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ২৪ ঘন্টা পুলিশের টহলদারি  নিশ্চিত করতে নির্দেশ পাঠান কেরালা পুলিশের ডিজি । পাশাপাশি রাজ্যের সমস্ত শপিং মল, বাজার, কনভেনশন সেন্টার, সিনেমা হল, থিয়টার হল, বাস স্টেশন, রেলস্টেশন, পর্যটন কেন্দ্র, ধর্মস্থান এবং সহ জনসমাগম থাকে যে সমস্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটোসাঁটো করার নির্দেশও দিয়েছেন পুলিশের ডিজি। 
ইজরায়েলের হামলার প্রতিবাদে একটি কর্মসূচীতে অংশ নেওয়ার কারণে এদিন বিস্ফোরণের সময় দিল্লিতে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বিজয়ন প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন এই ঘটনা খুবই অনভিপ্রেত। এদিনই তিরুবনন্তপুরমে পৌঁছে রাজ্য সচিবালয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। এই ঘটনার তদন্তে কেরালা পুলিশের অতিরক্তি ডিজি অজতি কুমার এবং কোচির ডিসিপি শশীধরনের যৌথ নেতৃত্বে ২০ জন সদস্যের একটি দলও গঠন করে দ্রুত এই নাশকতামুলক ঘটনার কিনারা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি সোমবার সাকলে রাজ্যের সর্বদলীয় সভাও ডাকেন বিজয়ন। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন সিপিআই(এম)-র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমাবেদনা জানানোর পাশাপাশি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে ‘এক্স’-এ পোস্ট করেন। যে ব্যক্তি পুলিশের হেপাজতে রয়েছে তাকে দ্রুত জিজ্ঞাসবাদ এবং তদন্তের অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করে যারা কেরালার অসাধারণ, তুলনাহীন সমাজিক অবস্থাকে বিঘ্নিত করার অপেচেষ্টা চালিয়েছে তাদেরকে গ্রেপ্তারেরও দাবি জানিয়েছেন ইয়েচুরি এদিনের পোস্টে। 
এদিকে, এই বিস্ফোরণের পরপরই এই ঘটনাকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও উত্তেজনা তৈরি করতে নেমে পড়ে বিজেপি-আরএসএস’র নেতা কর্মীরা। সোস্যাল মিডিয়ায় সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা পোস্ট করে মুসলিম বিদ্বেষ তৈরি করার চেষ্টা চালান বিজেপি-আরএসএস’র আইটি সেলের লোকজনরা। এমনকি  কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর এদিন বিস্ফোরণের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িকতার আকার দেওয়ার চেষ্টা করেন সোস্যাল মিডিয়ায় তাঁর করা একটি পোস্টের মাধ্যমে। 
এদিনে রাতে তিরুবনন্তপুরমে রাজ্য সচীবালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কালামাসেরি বিস্ফোরণকাণ্ডকে ঘিরে সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দেওয়া যে অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল তার তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সহ বাকিরা এই অপচেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি বলেন। সাম্প্রদায়িকতার কোনও জায়গা নেই কেরালায়। যাঁরা এই ধরনের অপচেষ্টা চালিয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথা আইনী ব্যবস্থা নেবে কেরালার সরকার।
পাশাপাশি বিজয়ন জানিয়েছেন এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তা ইতিমধ্যে করে ফেলেছে কেরালার সরকার। এই ধরণের ঘটনার পরপর যে সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে সমন্বয় রাখার কাজও করে যাচ্ছেন রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের কর্মী, আধিকারিকরা। অপরাধীরা কোনও ছাড় পাবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছেন বিজয়ন।  
এদিন কালামাসেরিতে বিস্ফোরণের ঘটনায়  হতাহতদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীনা জর্জ বলেন, নিহতদের মধ্যে একজন হলেন কুমারী  ৫৩ বছরের মহিলা। বাড়ি ঈদ্দুকি জেলার থুদুপুঝায়। তিনি কালামাসেরি মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এদিকে আহতদের মধ্যে ৩০ জন রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের মধ্যে ১৮ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁরা হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।  জর্জ আরও জানিয়েছেন, বিস্ফোরণস্থলেই একজন নিহত হন। অন্যজনের মৃত্যু হয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। আহতদের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment