FIR JOURNALIST MANIPUR

তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এফআইআর মণিপুরে, চলছে প্রতিবাদ

জাতীয়

FIR JOURNALIST MANIPUR সিপিআই(এম)’র পোস্ট।

‘এডিটরস গিল্ড’-র হয়ে মণিপুরে গিয়েছিলেন খবর সংগ্রহ করতে। জাতিগোষ্ঠীর সংঘর্ষে সরকারের তরফে এক পক্ষকে মদত দেওয়ার তথ্য দিয়েচিলেন প্রতিবেদনে। সেই তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হলো মণিপুরে।  

‘এডিটরস গিল্ড’ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে একটি ছবির ক্যাপশন ভুল ছিল। তাকেই হাতিয়ার করে ‘মিথ্যা, বানানো এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ প্রতিবেদন লেখার অভিযোগ জানানো হয়েছে এফআইআর-এ। এডিটর গিল্ড যদিও অভিযোগ োঠার পরই নিজেদের ভুল স্বীকার করেছে। জানানো হয়েছে যে ছবির নিচে ক্যাপশন শুধরানোর প্রক্রিয়া চলছে। 

তবে ভুলকে হাতিয়ার করে সাংবাদিকদের অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর এমন প্রয়াস নিন্দিত হয়েছে দেশের বিভিন্ন মহলে। সিপিআই(এম) টুইটারে পোস্ট করেছে এফআইআর দায়েরের বিরোধিতা করে। 

এফআইআর যদিও মণিপুরের বিজেপি সরকারের কেউ করেনি। ইম্ফল পশ্চিম জেলার পুলিশের কাছে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন দারার উল্লেখ করে তা দায়ের করেছে ইম্ফলের ‘সমাজকর্মী’ এন শরৎ সিং। তিন সাংবাদিক- সীমা গুহ, সঞ্জয় কাপুর এবং ভারত ভূষণের বিরুদ্ধে দুই গোষ্ঠীর মদ্যে শত্রুতা বাড়ানোর লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন তিনি। 

এই তিন সাংবাদিকের নামে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে সেখানে চুড়াচাঁদপুর জেলায় একটি কাঠের বাড়িতে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকার দৃশ্য রয়েছে। ক্যাপশনে বলা হয় যে এই বাড়িটি একটি কুকি পরিবারের। শরৎ কুমারের দাবি, ওই বাড়িটি বন বিভাগের। ৩ মে ভয়াবহ হিংসা ছড়িয়ে পড়ার পর এখানেও উত্তেজনা ছড়ায়। মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে এই বাড়িটি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইদের সঙ্গে কুকি জনজাতির সংঘর্ষে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা দেড়শো ছাড়িয়েছে। প্রায় চল্লিশ হাজার পরিবার ঘরছাড়া হয়ে শরণার্থী শিবিরে। অত্যাচারের শিকার হয়েছেন মহিলারা। 

বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে মেইতেইদের মদত দেওয়ার অভিযোগ বারেবারেই উঠেছে। বস্তুত মণিপুরে ভোটে জেতার জন্য বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ উস্কে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছছে বিজেপি এবং আরএসএস’র ওপর। 

সংবাদ প্রতিষ্ঠান এনডিটিভি জানাচ্ছে, ৩ মে ওই বাড়িটিতে আগুন লাগার ঘটনায় দায়ের হয়েছিল এফআইআর। তাতে বলা হয় যে একদল লোক দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে বন বিভাগের ওই বাড়িতে আগুন লাগিয়েছে। 

সিপিআই(এম) বলেছে, ছবির ভুল স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এফআইআর রয়েছে। সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের বিরুদ্ধে বারবার এফআইআর দায়ের হচ্ছে। কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। 

বিজেপি’র সরকার এবং অপছন্দের প্রতিবেদন হলেই সাংবাদিকদের হেনস্তা স্থায়ী প্রবণতা হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে দেশে। পশ্চিমবঙ্গেও এমন হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। তবে বিজেপি কেবল কেন্দ্রে নয় বিভিন্ন রাজ্যেও সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করে নিচ্ছে। উত্তর প্রদেশের হাথরসে দলিত কিশোরীকে ধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনায় রিপোর্টিং করতে গিয়ে দীর্ঘ কারাবাসে থেকেছেন কেরালার সাংবাদিক সিদ্দিকি কাপ্পান। একের পর এক গুরুতর অভিযোগ দায়ের হয় তাঁর বিরুদ্ধে। 

এডিটরস গিল্ডের প্রতিবেদনে মেইতেইদের প্রতি সরকারি পক্ষপাতের উল্লেখ ছিল। সোমবার এফআইআর দায়েরের ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন বিজেপি নেতা এবং মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন নিজেও।

ঘটনার কড়া নিন্দা করেছে প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া। এদিন বিবৃতিতে সাংবাদিকদের এই মঞ্চ বলেছে, ‘‘ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে রাজ্যের সরকার। মণিপুরে হিংসা এত প্রবল যে সকলের নজর দেওয়া দরকার। তার বদলে এফআইআর দায়ের হতে থাকলে সত্যকে চাপিয়ে রাখা হবে। বার্তাবাহীকে শাস্তি না দিয়ে সরকারের উচিত রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা।’’    

Comments :0

Login to leave a comment