Population

জনসংখ্যায় বিশ্বের শীর্ষে ভারত

জাতীয় আন্তর্জাতিক

 চীনকে ছাপিয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ হয়ে গেল ভারত। রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিশ্ব জনসংখ্যার ড্যাশবোর্ড অনুযায়ী ২০২৩-র মাঝামাঝি ভারতের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ১৪২ কোটি ৮৬ লক্ষ। চীনের হবে ১৪২ কোটি ৫৭ লক্ষ। এই হিসেবের মধ্যে অবশ্য চীনের দুই বিশেষ প্রশাসনিক এলাকা হঙকঙ, ম্যাকাওয়ের জনসংখ্যা ধরা নেই। তাইওয়ানও নেই। 
ভারতের জনসংখ্যা এখন বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক পঞ্চমাংশ হয়ে যাচ্ছে। ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার জনসংখ্যার থেকে বেশি। হিসেব করে বোঝা যাচ্ছে, ২০৫০ সালে ভারতের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ১৬৬কোটি ৮০ লক্ষ। চীনের গতি বিপরীত দিকে। তাদের জনসংখ্যা কমে দাঁড়াবে ১৩১ কোটি ৭০ লক্ষ। বস্তুত ২০২২-এ নতুন জন্মের দিকে তাকালেই বোঝা যাচ্ছে পার্থক্য কোথায়। ভারতে গত বছরে ২কোটি ৩০ লক্ষ শিশুর জন্ম হয়েছে। অন্যদিকে, চীনে হয়েছে ৯৫ লক্ষ ৬০ হাজার। গত ছয় দশকে এই প্রথম চীনের জনসংখ্যা সঙ্কোচনের দিকে গেছে। 
রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিশ্ব জনসংখ্যার সম্ভাবনা, ২০২২ রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে ১৯৫০-এ ভারতের জনসংখ্যা ছিল ৮৬ কোটি, চীনের ১১৪ কোটি। সেই বছর থেকেই এই গণনা শুরু হয়েছে। বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এখনই সবচেয়ে কম। ২০২০-তে ১ শতাংশ কমে গেছে। এ বছরের নভেম্বরে বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৮০০ কোটি। ২০৩০-এ হবে ৮৫০ কোটি। 
ভারতের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো কম বয়সিদের সংখ্যা বেশি। ০-১৪ বয়সসীমায় প্রায় ২৫ শতাংশ। ১০-১৯ বয়সসীমায় ১৮ শতাংশ। ১০ থেকে ২৪ বছর বয়স ধরলে ২৬ শতাংশ, ১৫ থেকে ৬৪ পর্যন্ত বয়সের ৬৮ শতাংশ। ৬৫ বছরের ওপরে ৭ শতাংশ। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সসিমায় ভারতের জনসংখ্যা ২৫ কোটি ৫০ লক্ষ। একে অনেকেই ‘জনসংখ্যার ইতিবাচক দিক’ বলে থাকেন। কিন্তু এই হিসেব থেকেই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে, এই তরুণতর জনসংখ্যার ভবিষ্যৎ কী। ভারতে স্বাধীনতা উত্তরকালে বেকারির হার সর্বোচ্চ। সরকারি তথ্যের অভাবে অর্থনীতিবিদদের বড় অংশই নির্ভর করেন সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমির তথ্যের ওপরে। সিএমআইই’র সর্বশেষ হিসাবে মার্চেই বেকারির সর্বভারতীয় হার ছিল ৭.৮ শতাংশ, শহরে ৮.৫ শতাংশ। এর মধ্যে আধা-বেকার, ছদ্ম বেকারের সংখ্যা যথাযথ প্রতিফলিত হয় না। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক হিমাংশুর কথায়, দু’দশক ধরেই কর্মহীনতা ভারতীয় অর্থনীতির অন্যতম বৃহৎ চ্যালেঞ্জ। অগ্রগতির কোনো ইঙ্গিতই নেই। উৎপাদনশীল কাজে তরুণতর অংশকে যুক্ত করার সক্ষমতা ভারতের অর্থনীতির রয়েছে, এমন কোনো সূচক দেখা যাচ্ছে না। উলটে কোভিড মহামারীর সময়ে অনুমিত ৪ কোটি লোকের কাজ খোয়া গেছে। যাঁদের বড় অংশই পরিযায়ী, তাঁরা গ্রামে ফিরে গেছেন। কিন্তু কৃষিতে না আছে কাজ, না কৃষি থেকে আয়ের বৃদ্ধি। এতদসত্ত্বেও ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের বদলে কৃষি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বাড়ছে— যা কোনোভাবেই অর্থনীতির পক্ষে ভালো লক্ষণ নয়। ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ ঘরে তোলার উপযুক্ত কাঠামোই নেই। বরং তা অর্থনীতির সঙ্কট আরো বাড়াতে পারে। 
রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিপোর্টে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের হিসেবও রয়েছে। শহরের হিসেবে নয়াদিল্লি রাজধানী অঞ্চলেই জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি— ৩ কোটি। মুম্বাইয়ে ২ কোটি, কলকাতায় ১.৫ কোটি, বেঙ্গালুরুতে ১.২ কোটি। 
ভারতে জনসংখ্যা বাড়লেও ফার্টিলিটি রেট বা একজন মহিলার সম্ভাব্য সন্তানের হার কমছে। জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা ৫ (২০১৯-২১)-এ দেখা যাচ্ছে এই হার নেমে এসেছে ২.০-তে। রিপ্লেসমেন্ট লেভেল ২.১-এরও কম। জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা ৪ (২০১৫-১৬)-তে তা ছিল ২.২। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ শতাংশের কম।  
বিশ্বব্যাপী রিপোর্টের একটি উল্লেখযোগ্য দিক আন্তর্জাতিক পরিযান। ২০২০-র হিসেবে ২৮ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ যে-দেশে জন্ম তার বদলে অন্য দেশে থাকেন। এই সংখ্যা গত দু’বছরে আরো বেড়েছে। যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এর বড় কারণ। ২০১০ থেকে ২০২১-এর মধ্যে ৩৫ লক্ষ ভারতীয়ও দেশে ছেড়ে গেছেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment