MUKTADHARA : STORY : MEYA : PALLABI ADAK : 30 SEPTEMBER 2024, MONDAY

মুক্তধারা : গল্প : মেয়ে : পল্লবী আদক : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার

সাহিত্যের পাতা

MUKTADHARA  STORY  MEYA  PALLABI ADAK  30 SEPTEMBER 2024 MONDAY

মুক্তধারা : গল্প 

মেয়ে

পল্লবী আদক

নমিতাদেবীর আবারও এক মেয়ে হয়েছে।এটা নিয়ে পরপর চারটি মেয়ে হলো।নমিতাদেবীর স্বামী  পলাশবাবু শোকে পাথর হয়ে গেছেন।ওনার আশা ছিল এইবার অন্তত একটা ছেলে আসবে যে বংশের উজ্জ্বল প্রদীপ হয়ে থাকবে। সেই আশাতেই তো আবারও সন্তান নিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন তারা।এর আগে পরপর তিনটি মেয়ে!!

মেয়ে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করার কয়েকদিন পর নমিতাদেবীকে ওনার শাশুড়ি বললেন "আমি ভাবতে পারছি না,তোমাদের ভবিষ্যতে কি হবে!খুব চিন্তা হয় তোমাদের নিয়ে, কে দেখবে তোমাদের ভবিষ্যতে!মেয়ে মানেই তো অন্যের ঘরের বাসিন্দা।বিয়ে দিয়ে দিলে সে পর হয়ে গেলো।তোমরা বুড়ো বুড়ি হলে,কি নিয়ে থাকবে বলো দেখি!!"
" সেটা নিয়ে ভেবে আর কি করবো বলুন,ভগবান যা দিয়েছেন,সেটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে আমাদের।তবে,আমার মেয়েদের আমি মানুষের মতো মানুষ তৈরি করবো"। নমিতাদেবী ওনার শাশুড়িকে বললেন।
" খোকার মন টাও খুব খারাপ হয়ে আছে,হাসপাতাল থেকে আসার পর কারুর সাথে সেরকম ভালো করে কথা বলছে না। হয়তো ভেবেছিল... থাক সেসব কথা"।
তবে,ওদের আগের তিন মেয়ে কিন্তু বেশ খুশি হয়েছে নতুন এই বোন পেয়ে।সারাদিন বোনের সঙ্গেই থাকে ওরা।সময় যত এগোচ্ছে ওরা চার বোন ও নিজেদের মত বেড়ে উঠছে।পড়াশোনাতেও চার জনই খুব তুখোড়। 
ওদের বাবাও ওদের সাথে সাথে নতুন কন্যাকেও আসতে আসতে সাদরে গ্রহণ করে নিলো।নিজের সন্তান বলে কথা!সে যতই মেয়ে হোক।সবসময় সব ইচ্ছা হয়তো পূরণ হয় না।

চার বোন ই বাবা অন্তপ্রাণ।পড়াশোনা তেও দারুন।বড় বোন প্রীতি ইংলিশ অনার্স নিয়ে নিয়ে কলেজে পড়ছে,মেজ বোন  প্রেরণা, উচ্চমাধ্যমিকে ফাটাফাটি রেজাল্ট করে সবাইকে চমকে দিয়েছে।বাকি দুই বোন  স্কুলে পরে। ক্লাসে কখনও তারা সেকেন্ড হয় না। 
মেজো মেয়ের উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট শুনে প্রতিবেশী সহ আত্মীয়স্বজন সবাই ধন্য ধন্য করছে। ব্লকের মধ্যে প্রথম হয়েছে প্রেরণা।তাকে সংবর্ধনাও দেওয়া হবে।

স্টেজে উঠে  মেডেল পাওয়ার পর ওকে কিছু বলতে বলা হলো।ও তখন দর্শক আসনে বসে থাকা বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে শুরু করলো বক্তৃতা " বাবা ছাড়া আজ আমার এত ভালো রেজাল্ট হতো না।বাবা আমার মনে সারাক্ষণ সাহস যুগিয়েছে,আমরা নিম্নমধ্যবিত্ত হলেও,বাবা আমাকে বলেছেন আমার পড়াশোনার জন্য যদি লাখ টাকাও খরচ করতে হয়,তাহলে উনি তা করবেন।কারণ উনি আমাকে ভালোবাসেন।আমার মা ও আমায় খুব সাপোর্ট করেছেন। বাবা,মা,আমি তোমাদের দুজনকেই খুব ভালোবাসি।" এতটুকু বলে প্রেরণা চোখ মুছতে থাকলো। সবাই ওর সাথে সাথে ওর বাবা মা কেও অভিনন্দন জানাচ্ছে।আজ পলাশবাবু এই মেয়েকে নিয়ে গর্ববোধ করতে লাগলেন।
সময় আর স্রোত কারুর জন্য অপেক্ষা করে না।সময় তার নিজস্ব গতিতেই বহমান। সময়ের সাথে সাথে পরিবেশ পরিস্থিতিও বদলে যায়।
পলাশবাবুর চার মেয়েই বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত। বড় এবং মেজ,দুজনেই  নামি প্রাইভেট স্কুলের  ইংলিশ টিচার। সেজো ও ছোট বোন, দুজনেই,সরকারি হাসপাতালের  স্টাফ নার্স।চার মেয়েই বিবাহিত। সেইসঙ্গে,খুব দায়িত্ববানও।বাবা মায়ের ওষুধ থেকে শুরু করে চিকিৎসা,সমস্ত কিছুতে তাদের কড়া নজর। একজন ছেলে ঠিক যতটা দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে পারে তার বাবা মার প্রতি, পলাশবাবুর চার মেয়ে তার থেকেও বেশি দায়িত্ব পালন করছে।বড় মেয়ে তো বলেই দিয়েছে " বাবা,তোমাকে আর বাইরে কাজ করতে হবে না।তুমি আর মা আমার কাছে থাকবে,আমার শাশুড়ি তো বলেছে,আমার স্বামী যদি তার বাবা মা কে দেখতে  নিজের বাড়িতে দেখতে পারে,তাহলে আমিও আমার বাবা মাকে নিজের বাড়িতে এনে আমার দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে পারি"।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে পলাশবাবু যখন দেখছেন,আশেপাশের ছেলেরা বিয়ের পর বউ এর কথা শুনে,বাবা মায়ের থেকে আলাদা হয়ে যায়,সেখানে বড় মেয়ের মুখ থেকে এমন কথা শোনাটা ওনার কাছে যেনো , সৌভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়ালো।শুধু বড় মেয়ে কেনো বাকি তিন মেয়েও একই কথা বলেছে।ওরা নাকি নিজেদের কাছেই ওদের মা বাবাকে রাখবে আর এতে ওদের স্বামী,শশুরবাড়ি,সকলের পূর্ণ মত আছে।
আজ পলাশবাবু ঈশ্বরকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছেন,এইরকম সোনার টুকরো চার মেয়ের বাবা হওয়ার জন্য।

Comments :0

Login to leave a comment