Ganganagar

চূড়ান্ত অব্যবস্থার মধ্যেই গঙ্গাসাগরে স্নান

রাজ্য

Ganganagar

অনিল কুণ্ডু : গঙ্গাসাগর

 প্রশাসনের ঔদাসীন্যে চূড়ান্ত অব্যবস্থার মধ্যেই শনিবার গঙ্গাসাগরে সাগর স্নান সারলেন লক্ষাধিক মানুষ। দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। বাস, ট্রেকার, অটো অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গঙ্গাসাগরে আসা যাত্রীরা। 
তাঁদের অভিযোগ, লক্ষাধিক মানুষের সমাগম গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গনে অথচ যাত্রী পরিষেবায় প্রশাসনের কোন হেলদোল নেই। এদিকে মহালয়া উপলক্ষে সাগর স্নানে লক্ষ লক্ষ মানুষ ভীড় করায় স্থানীয় বাসিন্দারা হতবাক। তাঁদের কথায়, গঙ্গাসাগর মেলার পর মাঘী পূর্ণিমার স্নানের ভীড় হয়। এখন দেখা যাচ্ছে, মহালয়া উপলক্ষে স্নান করতে আসা যাত্রীদের ভীড় মাঘী পূর্ণিমার ভীড়ের চেয়েও বেশি হচ্ছে। অথচ প্রশাসনিক স্তরে যাত্রীদের পরিষেবায় তেমন কোন উদ্যোগ নেই। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও ভীন রাজ্য থেকেও যাত্রীরা ভীড় জমিয়েছেন গঙ্গাসাগরে। 
মহালয়ায় পিতৃ তর্পন উপলক্ষে গঙ্গাসাগরে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনের মেলা। গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গন জুড়ে দোকান পাট বসেছে। যাত্রীদের ভীড়। আনাগোণা চলছে। অতিরিক্ত যাত্রী ভাড়া নেওয়া নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন, সাগর ব্লক প্রশাসনের নির্দেশ মতোই মহালয়ার মেলা উপলক্ষে এই তিন দিন ধরে বহিরাগত যাত্রীদের জন্য অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য সময় কচুবেড়িয়া থেকে গঙ্গাসাগর বাস ভাড়া ৪০টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। ট্রেকারের ভাড়া ৫০ টাকা। নেওয়া হচ্ছে ৮০ টাকা। বেণুবন নামখানা রুটে লঞ্চ ভাড়াও অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তাঁদের কথায়, কাকদ্বীপ স্টেশন থেকে লট এইট পর্যন্ত টোটোয় নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ, তিনগুণ বেশি টাকা নিচ্ছে।  
এদিন ভোর থেকে শুরু হয় সাগর স্নান। মহালয়া চলাকালীন লোডশেডিংয়ের কারণে অন্ধকারের মধ্যেই যাত্রীরা সাগরে স্নান সারতে নামেন। এমনকি সাগর সৈকতে বিপজ্জনক ঘাট গুলিতেও স্নান করতে দেখা যায় যাত্রীদের। পুলিশ প্রশাসনের কোন নজরদারি না থাকায় প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা। ভূক্তভোগী যাত্রীরা জানান, এতো মানুষের সমাগম অথচ যাত্রীদের পরিষেবায় পানীয় জল থেকে শৌচাগারের বাড়তি কোন ব্যবস্থা করা হয়ি। প্রশাসনের উদ্যোগ কোন নজরদারি নেই। বহু যাত্রীকেই সাগর সৈকতে শৌচাগার করতে দেখা যায়। যথেচ্ছভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে। খোলা আকাশের নীচেই সৈকতের ধারে, মেলা প্রাঙ্গনে রাত কাটাতে হয় যাত্রীদের। 
ভাঙড় থেকে স্ত্রী দীপালি মন্ডলকে সঙ্গে নিয়ে গঙ্গাসাগরে স্নান সারতে এসেছেন গোবিন্দ মন্ডল। সত্তরোর্ধ্ব গোবিন্দ মন্ডল মেলা প্রাঙ্গনে জানান, শুক্রবার দুপুরে তাঁরা সাগরে আসেন। একটি আশ্রমে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর কথায়, কাতারে কাতারে মানুষ এসেছেন গঙ্গাসাগরে। চূড়ান্ত অবস্থা, দুর্ভোগের মধ্যেই স্নান সেরে ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা। বিষ্ণুপুরের জুলপিয়া থেকে ১২ জনের একটি দল মেলা প্রাঙ্গণে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটিয়েছেন। শ্যামল দে অভিযোগ করে বলেন, মেলা প্রাঙ্গণে যাত্রীদের রাত কাটাবার জন্য কোন ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আশ্রমগুলিতেও যাত্রীদের ভীড়। শিশু কোলে এভাবেই খোলা আকাশের নীচে ছিলেন তাঁরা। স্নান সেরে ফিরে যাচ্ছেন। এদিকে শনিবার সকালে রুদ্রনগরে মোটর ভ্যান দুর্ঘটনায় জয়নগরের বাসিন্দা এক যাত্রী গুরুতর জখম হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাঁকে কাকদ্বীপ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। 
ভাটার সময় নদীতে নাব্যতার কারণে দুপুর ১২টার পর থেকে মুড়িগঙ্গা নদীতে ভেসেল চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। প্রায় ৬ ঘন্টা ধরে ভেসেল চলাচল বন্ধ থাকে। কচুবেড়িয়া ও লট এইট জেটি ঘাটে যাত্রীদের ভীড় জমে। বেণুবন নামখানা রুটেও লঞ্চ ঘাটে যাত্রীদের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো। 
গঙ্গাসাগরে মহালয়ার মেলাকে কেন্দ্র করে যাত্রীদের দুর্ভোগ ও প্রশাসনের উদাসীনতার অভিযোগ সম্পর্কে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক এদিন জানান, সাগর ব্লক দপ্তরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। জনস্বাস্থ্য কারিগর দপ্তর যাত্রীদের পরিষেবায় পানীয় জলের পাউচ, আলোর ব্যবস্থা করেছে। পরিবহনের স্বার্থে বাইরে থেকে অতিরিক্ত দশটি বাস সাগরে নিয়ে আসা হয়েছে। কচুবেড়িয়ায় হেল্পডেস্ক করা হয়েছে। তবে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া নিয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে চাননি।

Comments :0

Login to leave a comment