Manipur Violence video story

কেন জ্বলছে মণিপুর? দেখুন ভিডিও প্রতিবেদন

জাতীয়

টানা ৩দিন ধরে আগুন জ্বলছে মণিপুরে। গোষ্ঠী সংঘর্ষের আগুন। সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন ১৯ জনের বেশি সাধারণ মানুষ। আহতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। হিংসা থামাতে মোতায়েন হয়েছে সেনা এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী। চূড়ান্ত পরিস্থিতিতে দেখা মাত্র গুলির নির্দেশও গিয়েছে নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর কাছে। 
কিন্তু হঠাৎ মণিপুরে এইরকম ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হল কেন? তারজন্য মণিপুরের আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিন্যাসের দিকে নজর রাখতেই হয়।
মণিপুরে একদিকে রয়েছেন মেইথেই সম্প্রদায়ের মানুষ। অপরদিকে রয়েছেন কুকি সহ অন্যান্য তপশিলী উপজাতি গোষ্ঠীর মানুষ। মেইথেই সম্প্রদায়ের মানুষ মূলত ইম্ফল উপত্যকায় বাস করেন। আর উপত্যকাকে চারিদিক দিয়ে ঘিরে থাকা পার্বত্য অঞ্চলে বাস কুকি সহ অন্যান্য উপজাতিদের।
ইম্ফল উপত্যকায় অবস্থিত ইম্ফল শহর। মণিপুরের রাজধানী। রাজধানী সংলগ্ন এলাকায় থাকার ফলে মেইথেই দের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবও তুলনায় বেশি। এই সম্প্রদায়ের অনেকেই প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। একইসঙ্গে এই উপত্যকায় জনঘনত্ব বেশি হওয়ায়, বিধানসভা আসনের সংখ্যাও বেশি। ৬০’র মধ্যে ৪০টি। 

 


কিন্তু এই জনঘনত্বের ফলে ইম্ফল উপত্যকায় জমির পরিমাণ বাড়ন্ত। কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলে তপশিলী উপজাতি ছাড়া কেউ জমি কিনতে পারেন না। তারফলে নিজেদের ব্যবসা এবং প্রভাব বৃদ্ধি করতে পাহাড়ে উঠতেই হত মেইথেই দের। প্রয়োজন ছিল আইনি বৈধতারও।
সেই বৈধতা পেতেই মেইথেই সম্প্রদায়ের তরফে মণিপুর হাইকোর্টে উপজাতি সংরক্ষণের দাবিতে আবেদন জানানো হয়। তাঁদের দাবি ছিল, ১৯৪৯ অবধি আদিবাসী হিসেবেই তাঁরা চিহ্নিত ছিলেন। তাই সেই সংরক্ষণ ফের তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক। 


১৯ এপ্রিল মণিপুর হাইকোর্ট মেইথেই সম্প্রদায়কে তপশিলী আদিবাসী সংরক্ষণের আওতায় আনার সুপারিশ জমা দিতে বলে মণিপুরের বিজেপি সরকারকে। 
কুকি সহ অন্যান্য আদিবাসী গোষ্ঠীগুলি মেইথেইদের আদিবাসী সংরক্ষণের বিরোধিতা করে সরকারের উপর চাপ বাড়ায়। তাঁদের দাবি, মেইথেইরা এমনিতেই বিপুল সামাজিক পুঁজির অধিকারী। একইসঙ্গে মণিপুরের ৫৩ শতাংশের বেশি মানুষ এই গোষ্ঠীভুক্ত। আর তাঁরা এমনিতেও ওবিসি সংরক্ষণের সুবিধা পান। তাঁদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বেন পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতিরা। সরকারি চাকরি সহ সমস্ত ক্ষেত্রে অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে তাঁদের। এই জাতীয় কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা সংরক্ষণের মৌলিক ভাবনার বিরুদ্ধে যাবে। 
একইসঙ্গে আদিবাসী অংশের মানুষের দাবি, মেইথেই ব্যবসায়ীরা বিজেপি সরকারকে সামনে রেখে তাঁদের জমি দখল করতে চাইছে। এই আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা প্রমাণ করেছে বিজেপি সরকারের বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত। এরমধ্যে সাম্প্রতিকতম হল চূড়াচন্দ্রপুর-খৌপুম সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ইস্যু। ৪৯০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এই বনাঞ্চলকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় সরকারের তরফে। জঙ্গলে বসবাসকারী উপজাতি অংশের মানুষকে অনুপ্রবেশকারী তকমা দিয়ে উচ্ছেদ করা শুরু হয়। কুকি সংগঠনগুলির অভিযোগ, আদিবাসীদের জমি দখল করতেই এই চক্রান্ত। 
এর পাল্টা ২৭ এপ্রিল চূড়াচন্দ্রপুরে বিক্ষোভ দেখান কুকিরা। সেই বিক্ষোভ হিংসাত্মক আকার নেয়। একটি জিম এবং স্পোর্টস কমপ্লেক্সে অগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। সেইদিন চূড়াচন্দ্রপুর সফরের কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের। পরিস্থিতির চাপে তিনি সফর বাতিল করেন। চূড়াচন্দ্রপুর ইন্টারনেট সংযোগও বাতিল করা হয়।
এই ঘটনার রেশ মেলাতে না মেলাতেই বুধবার মেইথেই সংরক্ষণের প্রতিবাদে বিষ্ণুপুর এবং চূড়াচন্দ্রপুর জেলায় মিছিল করেন আদিবাসী ছাত্র সংগঠনগুলি। পালটা মিছিল করেন মেইথেইরা। দুই মিছিল থেকে সংঘর্ষ বাঁধে। 


এখনও অবধি গোষ্ঠি সংঘর্ষের ঘটনায় গৃহহীনের সংখ্যা ৯ হাজারের বেশি। ইম্ফল শহর সহ উপত্যকার বহু চার্চে অগ্নি সংযোগ ঘটানোর অভিযোগ উঠেছে মেইথেইদের বিরুদ্ধে।
এই অবস্থায় রাজ্যের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন সেরাজ্যের মানুষ। তাঁদের দাবি, সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু মেইথেইদের খ্রীষ্টান আদিবাসীদের সঙ্গে লড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। বিজেপির এন বীরেন সিংয়ের সরকার চাইলেই মীমাংশার মাধ্যমে সমস্যা মেটাতে পারত। কিন্তু নিজেদের রীতি মেনেই বিজেপি গোষ্ঠী সংঘর্ষে মদত জুগিয়েছে। 
ওয়াকিবহাল মহলের আরও দাবি, মেইথেই ব্যবসায়ীদের টাকায় বিজেপি ভোট বৈতরণী পার করেছে। এখন জঙ্গলের জমি তাঁদের হাতে তুলে দিতেই এই চক্রান্ত। 
এই সঙ্কটের ফলে নিজেদের সর্বস্ব খুইয়েছেন অসংখ্যা সাধারণ মানুষ। মণিপুর জুড়ে কার্ফু। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং জানিয়েছেন, দুই গোষ্ঠীর ভুল বোঝাবুঝিতে সমস্যা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।


যদিও তথ্য অন্য কথা বলছে। সেনা সূত্রে খবর, ১১ হাজার মানুষকে বিভিন্ন সেনা ক্যাম্পে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ফ্ল্যাগমার্চও শুরু হয়েছে। 
মণিপুর দেখাচ্ছে, সমস্যা আসলে কাজ নেই কমবয়সীদের। তাই সংরক্ষণ পেতে মরিয়া। জঙ্গল থেকে উচ্ছেদ হচ্ছে। চরম অবিশ্বাসের পরিবেশ রাজ্যজুড়ে, দায়ী বিজেপি। 
আমাদের বাংলায় একই কায়দায় বিভাজনের ছক কষছে বিজেপি এবং তৃণমূল। কখনও হিন্দু বনাম মুসলিম, মতুয়া বনাম অন্যরা, রাজবংশী বনাম অন্যরা, কুর্মি বনাম অন্যরা- ভোটের অঙ্ক কষে সমানে বিভাজন। 
সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীরা বলছেন এই বিভাজনের বিপক্ষেই। বনাম নয় এবং। খেটে খাওয়া সব মানুষকে নিয়ে দুর্নীতি-দুষ্কৃতী জোটকে হারানোর কথা বলছেন। মজুরি, ফসলের দাম, স্কুল, মিড ডে মিল, স্বাস্থ্যের অধিকারের কথা বলছেন। 
একজোট না থাকলে কী হয় দেখাচ্ছে জ্বলতে থাকা মণিপুর।
 

Comments :0

Login to leave a comment