Chess

আশাভঙ্গ, কিন্তু মন জিতে নিলেন প্রজ্ঞা

খেলা আন্তর্জাতিক

আশা ছিল, কিন্তু এবারের মতন স্বপ্ন অধরাই থাকল। বিশ্বকাপ না জিততে পারলেও কিন্তু সবার মন জিতে নিলেন ১৮ বছর বয়সি ভারতের গ্র্যান্ডমাস্টার রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে পরপর দু’দিন অমীমাংসিত থাকার পর টাইব্রেকারে বিশ্বের এক নম্বর দাবাড়ু তথা পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেনের কাছে হারলেন ফাইনালে ওঠা সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার। 
প্রথম দু’টি ক্লাসিক্যাল রাউন্ড অমীমাংসিত হওয়ায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেই হার মানলেন প্রজ্ঞানন্দ। টাইব্রেকারে প্রথম রাউন্ডে কালো ঘুঁটি নিয়ে খেলেন কার্লসেন। আর সাদা ঘুঁটি নিয়ে খেলেন প্রজ্ঞানন্দ। ভারতীয় দাবাড়ু অ্যাডভান্টেজে থাকলেও তা কাজে লাগাতে পারেননি। প্রথম র্যাবপিড রাউন্ডে শুরু থেকেই রাজা-কে সামলে রাখতে রক্ষণাত্মক খেলছিলেন দুই প্রতিযোগী। সময়ের নিরিখেও প্রায় সমানে সমানে যাচ্ছিলেন দু’জন। সেই র্যা পিড রাউন্ডেই একটি চাল দিতে সাড়ে ৬ মিনিট সময় নেন ভারতের গ্র্যান্ডমাস্টার। ২৫ মিনিটের খেলায় সেই একটি চালই পিছিয়ে দেয় প্রজ্ঞানন্দকে। তাঁর রাজা অরক্ষিত হয়ে যায়। একটা সময় প্রজ্ঞানন্দর সময় ১০ সেকেন্ডের নিচে নেমে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে আসার কোনও সুযোগ ছিল না ভারতীয় দাবাড়ুর। সেই সুযোগই কাজে লাগান কার্লসেন। তাঁর ভুলের সুযোগ নিয়ে ২.৫-১.৫ পয়েন্টে ম্যাচ বার করে নেন কার্লসেন। হার স্বীকার করে নেন ভারতের দাবাড়ু। 
প্রথম রাউন্ডে হারের পর প্রজ্ঞানন্দের কাছে ডু অর ডাই পরিস্থিতি দাঁড়ায়। দ্বিতীয় টাইব্রেক জিততেই হতো ১৮ বছরের দাবাড়ুকে। র্যারপিডের দ্বিতীয় রাউন্ডে সাদা ঘুঁটি নিয়ে খেলছিলেন কার্লসেন। ফলে শুরুতেই সুবিধা পান তিনি। প্রথম থেকেই সময়ের ব্যবধান বাড়তে থাকে। চাপে পড়ে যান প্রজ্ঞানন্দ। প্রতিটি চাল দিতেই সময় নিচ্ছিলেন তিনি। ২২ চালের শেষে অমীমাংসিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন দুই প্রতিযোগী। ফলে রানার্স হয়েই সন্তুষ্ট হতে হলো প্রজ্ঞানন্দকে। আর এ বারের দাবা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হলেন নরওয়ের কার্লসেন। 
ম্যাচ শেষে প্রজ্ঞানন্দ বলেন, ‘প্রথম গেমটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ওটাতেই ভুল করে বসি। আমি ভাল জায়গায় ছিলাম। বলা যেতে পারে আসল সময়ে ভুল করে ফেলেছি। মরণবাঁচন গেমটা জিততেই হতো। সেটা অবশ্য খুব সহজ ছিল না। কার্লসেন এই রকম পরিস্থিতিতে অভিজ্ঞ একজন খেলোয়াড়। আরেকটু ভাল লড়াই দিতেই পারতাম।’ প্রায় একমাস ধরে খেলে যাচ্ছেন প্রজ্ঞানন্দ ও কার্লসেন। ক্রমশ খেলে যাওয়ার জন্য হয়তো ক্লান্তি গ্রাস করেছিল প্রজ্ঞানন্দকে। তিনি বলছেন, ‘ফাইনালে পৌঁছনোয় অত্যন্ত খুশি। যেভাবে খেলেছি তাতে আমি সন্তুষ্ট। গোটা মাস জুড়ে খেলে চলেছি। ফলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আজ দারুণ শেপে থাকার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কখনও কখনও যেমন চাওয়া হয়, তেমন যায় না।’ শেষে ভারতের গ্র্যান্ডমাস্টারের ছোট্ট সংযোজন, ‘এখানের খাওয়াদাওয়া আর ভাল লাগছে না। এ বার দেশের খাবার খেতে চাই। দক্ষিণ ভারতের খাবার খেতে ইচ্ছা করছে।’
পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কার্লসেনের কাছে হারলেও ভারতের প্রজ্ঞানন্দকে নিয়ে আশাবাদী বিশ্বনাথন আনন্দ। তাঁর পরবর্তী ভারতের দ্বিতীয় দাবাড়ু হিসাবে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে ছিলেন প্রজ্ঞানন্দ। হারলেও তরুণ দাবাড়ুর কৃতিত্বকে খাটো করে দেখছেন না আনন্দ। ফাইনালের পর নিজের টুইটারে আনন্দ লেখেন, ‘প্রজ্ঞানন্দ আগামী দিনে দুর্দান্ত ফলাফল নিয়ে ফিরে আসবে।’ এবারের বিশ্বকাপে খেলা প্রজ্ঞানন্দ সহ ভারতীয় দাবার গোটা তরুণ প্রজন্মের প্রশংসা শোনা গিয়েছে আনন্দের গলায়। ভারতীয় দাবার এই প্রজন্মকে ‘সোনার প্রজন্ম’ বলেছেন দেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার।
শুধু আনন্দ নন, প্রজ্ঞানন্দকে অভিনন্দিত করেছেন শচীন টেন্ডুলকরও। টুইট করে মাস্টারব্লাসটার লিখেছেন, ‘অবিশ্বাস্য টুরনামেন্টের জন্য অভিনন্দন প্রজ্ঞানন্দকে। তুমি তোমার স্বপ্নের পিছনে দৌড় থামিওনা এবং ভারতকে গর্বিত করে চলো।’ প্রজ্ঞানন্দকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছেন আরও এক ক্ররিকেটার বিচন্দ্র অশ্বিনও। তিনি লিখেছেন, ‘প্রজ্ঞা তুমি আমাদের গর্বিত করলে।’
 

Comments :0

Login to leave a comment