ISRAEL RSS SALIM

যুদ্ধকে ঘিরে বিভাজন ছড়াচ্ছে আরএসএস, বললেন সেলিম

রাজ্য আন্তর্জাতিক

ISRAEL RSS SALIM

ইজরায়েল হামাসের আক্রমণকে ব্যবহার করে গাজার গোটাটাই ধ্বংস করার জন্য আক্রমণ করছে। আর এ দেশে আরএসএস প্যালেস্তাইন বিরোধী, শান্তি বিরোধী, বিভাজন এবং বিদ্বেষ তৈরির প্রচার চালাচ্ছে। হামাসের আক্রমণকে বাহানা করা হচ্ছে। এই প্রচার সম্পর্কে সাবধান থাকতে হবে।

সোমবার বহরমপুরে এ কথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক এবং পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম।

তিনি বলেন, ‘‘ইজরায়েল প্যালেস্তাইন বিবাদ নির্দিষ্ট কোনও ধর্মের বিষয় নয়। তা’হলে ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা কেন প্যালেস্তাইনের মুক্তির পক্ষে মিছিল করেন? বহু ইহুদি ইজরায়েলের নীতির সমালোচনা করছেন কেন? আমেরিকায় ‘জিউস ফর পিস’ আন্দোলন গড়েছেন তাঁরা। হাজার হাজার মানুষ নেমেছে আমেরিকায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে, প্যালেস্তাইনের মানুষের সমর্থনে। অথচ আমরা দেখছি ইজরায়েল রাষ্ট্র যা বলছে তার সবচেয়ে বড় প্রচারক আরএসএস-বিজেপি’র সমর্থকরা। কিছু মানুষ যাঁরা ইতিহাস জানেন না তাঁদের ‘হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি’-তে ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছে।’’ 

সেলিম বলেন, ‘‘সোশাল মিডিয়ায় ঘাঁটলে দেখা যাবে এই প্রচারে যারা অংশ নিচ্ছে তাদের কে তৃণমূলের সমর্থক কে বিজেপি’র সমর্থক আলাদা করে বোঝা যাবে না। এমন বিভিন্ন হ্যান্ডেল আমরা জানি। যারা সিপিআই(এম)-কে গালাগালি দেয়, হিন্দু মুসলমান বিভাজন করে তারাই এই প্রচারেও রয়েছে।’’ 

সেলিম বলেন, ‘‘গতবারের ভোট বালাকোটে বিমানহানার নামে ভারত বনাম পাকিস্তান দেখিয়ে জিগির তোলা হয়েছিল। এবারের ভোট কি ইজরায়েল বনাম প্যালেস্তাইন করে হবে? তিনি বলেন, আসল সমস্যা বেকারি, দারিদ্র, স্বাস্থ্য। ডেঙ্গু বাড়ছে হাসপাতালে বেড নেই। অর্থনীতি চৌপাট, নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দুর্নীতির একটার পর একটা ঘটনা বেরিয়ে আসছে সিএজি রিপোর্টে।’’

এই প্রসঙ্গেই সেলিম বলেন, ‘‘মানুষের অধিকার আদায়েই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে হবে। তৃণমূল এবং বিজেপি দু’দলের বিরুদ্ধেই চলবে লড়াই। এদের কোন এমএলএ কোন এমপি কখন কোন দলে যাচ্ছে কেউ জানে না।’’ 

তিনি জানান যে ১৭ অক্টোবর ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হবে। কমিউনিস্ট ইশ্‌তেহারের ১৭৫ তম বার্ষিকীও পালন করা হবে। 

সেলিম বলেন, ‘‘আমাদের বিদেশনীতি বরাবর বলেছে যে দু’টি দেশ শান্তিতে থাকবে। দু’দেশের জনগণকে শান্তিতে বাস করতে শিখতে হবে। প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এখানে যুদ্ধকে ব্যবহার করা হয় নির্বাচনের প্রয়োজনে। তেমনই হচ্ছে ইজরায়েলে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মানুষ খেপেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে। তখনই উগ্র জাতীয়তাবাদী আবেগকে ব্যবহার করা হচ্ছে সে দেশে নির্বাচনের আগে।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনা কে ঘটালো কেন ঘটালো তদন্তসাপেক্ষ। আজ পর্যন্ত প্রমাণ হয়েছে আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ৯ সেপ্টেম্বরের সেই হানা কে ঘটিয়েছে? ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে বলে হামলা করেছিল আমেরিকা। গণবিধ্বংসী অস্ত্র কিন্তু পাওয়া যায়নি। ’’

তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমী প্রচারমাধ্যম মিডিয়াকে সর্বদা ব্যবহার করে। এইবার প্রথম দেখলাম আমাদের দেশে প্রচারমাধ্যমের বড় অংশ পশ্চিমী মিডিয়াকে অনুসরণ করছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রথমদিনই ভারসাম্য না রেখে বিবৃতি দিলেন। ইজরায়েলের পক্ষে দাঁড়ালেন। এভাবেই আরএসএস পক্ষ নেয় ফ্যাসিবাদ এবং জায়নবাদের। পক্ষ নেয় জাতিগোষ্ঠী মুছে ফেলার অভিযানের। এ দেশে মণিপুরে আরএসএস’র এই মনোভাবই আমরা দেখেছি। যে শক্তিশালী, যে সংখ্যাধিক্য তারই দমন চলবে- এই হলো নীতি।’’ 

প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি ঘিরে প্রতিক্রিয়ার জেরে বিদেশমন্ত্রক পরে জানিয়েছে বরাবরের অবস্থান অনুযায়ী ভারত প্যালেস্তাইনের জনগণের স্বাধীনতার পক্ষে। সেলিম বলেন, ‘‘এবার তো আরএসএস’র ট্রোল ব্রিগেড সমস্যায় পড়ে গিয়েছে।’’ 

সেলিম বলেছেন, ‘‘হিন্দু ধর্ম এবং আরএসএস’র হিন্দুত্ব এক নয়। তেমনই ইহুদি ধর্ম আর দখলদারির জায়নবাদ এক নয়। ধর্মকে ব্যবহার করে জন্য আধিপত্যবাদ কায়েম করা হয়, যুদ্ধের দামামা বাজানো হয়, তখন ধর্মের প্রচার আসলে রাজনৈতিক প্রকল্প হয়ে যায়।’’ তিনি বলেন, ‘‘হিন্দু বা ইহুদি বলে নয় এই বহুসংখ্যাক বাদ ইসলাম বা শিখ বা খ্রীস্টান ধর্মকে ব্যবহার করেও হতে পারে। যেমন খালিস্তান দেখেছি। আল কায়েদা বা আইসিস দেখেছি। তালিবানও তাই, ধর্মকে দখল করে রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণ করে।’’

Comments :0

Login to leave a comment