Salim at North Bengal

উত্তরবঙ্গ নিয়ে ষড়যন্ত্রে গোপন বৈঠক মমতার, অভিযোগ করলেন সেলিম

জেলা

 বুধবার রাতে উত্তরবঙ্গের হাসিমারাতে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে গোপন বৈঠক হয়েছে। সেখানে কোনও সরকারি আধিকারিক ছিলেন না। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে তাদের গেম প্ল্যান কী হতে চলেছে। বৃহস্পতিবার কোচবিহারে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এই অভিযোগ করে বলেছেন, বিজেপি আর তৃণমূল বোঝাপড়ার মাধ্যমে মানুষকে ভাগ করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে। এরজন্য ওরা রাজ্যভাগ করতেও পিছপা নয়। তিনি বলেন, বামপন্থীরা যারা মানুষের কাজের জন্য, শিক্ষার জন্য, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য, মানুষের মতো মানুষের বাঁচার জন্য, নিজের অধিকার ও হকের জন্য আমাদের লক্ষ্য মানুষকে এককাট্টা করা। আর এতেই বিপদ দেখেছিল বিজেপি-তৃণমুল। এরা সবাই মিলে বলেছিল, লাল হটাও, দেশ বাঁচাও। লাল হটেছিল। কিন্তু দেশ বা রাজ্য কিছুই বাঁচেনি। তাই দেশকে বাঁচাতে ফের লাল ঝান্ডাকে উঁচুতে তুলে ধরে মানুষ দলে দলে আসছেন আমাদের দলে।
এদিন সিপিআই(এম) কোচবিহার জেলা কমিটির ডাকে শহরের রাসমেলার মাঠে বিরাট জনসমাবেশে বক্তব্য রাখেন মহম্মদ সেলিম। এদিনের সমাবেশে তিনি ছাড়াও বক্তব্য রাখেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দেবলীনা হেমব্রম, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার, পার্টির কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়। সভাপতিত্ব করেন পার্টির প্রবীণ নেতা তমসের আলি। সভায় উপস্থিত ছিলেন পার্টিনেতা অলকেশ দাস ও জেলার সিপিআই(এম) নেতৃত্ব।


সমাবেশে মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণকে উল্লেখ করে এদিন মহম্মদ সেলিম বলেন, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর জামালদহে সিপিআই(এম) প্রার্থী জেতায় ক্রুদ্ধ তৃণমূলীরা রমজান মিয়াকে পিটিয়ে খুন করেছিল। শহীদের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে সেদিন আমরা শপথ নিয়েছিলাম কোচবিহার জেলায় লাল ঝান্ডাকে ফের উঁচুতে তুলে ধরব। আজকের রাসমেলার মাঠে এই বিরাট জনসমাবেশ প্রমাণ করছে জেলার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ফের লাল ঝান্ডা মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। এদিন সভার শুরুতেই তিনি বলেন, লাল ঝান্ডার সমাবেশকে বানচাল করতে মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনকে দিয়ে জেলার সমস্ত বাস তুলে নিয়ে তার হাসিমারার সভার জন্য লোক নিয়ে গিয়েছিলেন। তবুও এই সমাবেশে দলে দলে লাল ঝান্ডা হাতে মানুষ এসেছেন। আমাদের কর্মী, সমর্থকদের জেদের কাছে হার মেনেছে রাজ্যের শাসক দল।
মহম্মদ সেলিম এদিন বলেন, কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার সর্বত্র বাংলার প্রাণ জাগছে। বাংলার মানুষ জাগছে। বিপদ বুঝতে পেরে মুখ্যমন্ত্রী হাসিমারায় এসে এদিন বলেছেন, ৪০ লক্ষ মানুষকে জবকার্ডের মধ্য দিয়ে কাজ দিয়েছি। উনি অসত্য কথা বলছেন। গ্রামে গ্রামে যাদের জবকার্ড হবার কথা, তাদের জবকার্ড হয়নি। কাজ তো দূরস্ত। যাদের জবকার্ড আছে তারা কাজ পায়নি। আবার যারা কাজ করেছে তারা মজুরি পায়নি। মজুরির টাকা প্রধান, উপপ্রধান আর শাসক দলের নেতারা তুলে নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জনসভায় দাঁড়িয়ে মিথ্যাচার করছেন। একবার বলছেন, কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না, সেজন্য মজুরি দিতে পারছি না। আবার জনসভায় দাঁড়িয়ে বলছেন, আমি সব দিয়ে দিয়েছি। আমরা বলছি, মানুষ কাজ করেছে, তাদের হকের মজুরি দিতে হবে। কেন্দ্র টাকা দেয়নি কিংবা তৃণমূল চুরি করেছে এসব শুনতে চাই না। মজুরের হকের পাওনা দিতে হবে।


এদিন মহম্মদ সেলিম বলেন, বিজেপি তৃণমূলকে সরাবে না, কিংবা তৃণমূলও বিজেপি-কে হটাবে না। আসলে বিজেপি বুঝে গিয়েছিল, এরাজ্যে হিন্দু-মুসলমানের নামে ভাগাভাগি করে ক্ষমতায় আসা যাবে না। আর সে কারণেই আরএসএস, কংগ্রেস থেকে মমতা ব্যানার্জিকে বের করে এনে টাকা দিয়ে রসদ দিয়ে আলাদা দল গড়তে সাহায্য করেছিল। আরএসএস বলেছিল মমতা ব্যানার্জি দুর্গা। আজ সেই তৃণমূলের নেতারা বলছে, ‘‘আমরা বিজেপি-র বিরুদ্ধে।’’ এসব কথা রাজ্যের মানুষ বিশ্বাস করে না। চিট ফান্ডে যারা চুরি করেছিল, যারা নারদাকাণ্ডের সাথে জড়িত যাদের আইন মোতাবেক জেলে থাকার কথা তারা এরাজ্যে বিজেপি-র নেতা। সোজা কথা বিজেপি কোনও চোরকে শাস্তি দেবে না। ওরা ইডি, সিবিআই দেখিয়ে চোরগুলোকে নিজের দলে ঢুকিয়ে নিচ্ছে। পুলিশ চোরেদের আড়াল করছে। এসব দেখে রাজ্যের গ্রামে গ্রামে মানুষ চোরেদের শায়েস্তা করতে নিজেরাই পথে নেমেছেন। দুই দলের যেসব চোর এখনও জেলের বাইরে আছে সবগুলোকে মানুষ নিজেরাই শাস্তি দেবে। 
এদিন মহম্মদ সেলিম বলেন, আমরা দেশ বিভাজনের বিষময় ফল দেখেছি। বিভাজনের রাজনীতি আমরা চাই না। রাজ্যকে ফের ভাগ করার চক্রান্ত চলছে। মুখ্যমন্ত্রী হাসিমারায় দাঁড়িয়ে এদিন বলেছেন, উত্তরবঙ্গের মানুষ সব পরিষেবা পায়। উনি ফের মিথ্যে বলছেন। উত্তরবঙ্গের এইমস হাসপাতালকে দিদি আর মোদী মিলে রায়গঞ্জে করতে দেয়নি। দিদি আর মোদী মিলে তিস্তা প্রকল্পের মতো জাতীয় প্রকল্পকে বন্ধ করে দিয়েছে। দু’টো দলই উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন চায় না। মুখ্যমন্ত্রী এখন উত্তরবঙ্গে এসে বলছেন, চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য বিশেষ কাজের ব্যবস্থা হবে। অথচ উনিই তো চা বাগানের জমি বেচে দিচ্ছেন মালিকদের কাছে। শুধু চা বাগানের জমি নয়, উত্তরবঙ্গের হাসপাতালের জমি, বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি, নদী পাহাড় এমনকি কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে তিস্তা নদীর চর অবধি বিজেপি-র কায়দায় বেচে দিচ্ছেন। উত্তরবঙ্গকে বাঁচাতে দুই দলকেই ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে। আর এর জন্য এই মুহুর্তে বামপন্থীরা পাখির চোখ করেছে পঞ্চায়েত ভোটকে। লুটের পঞ্চায়েত তৃণমূলের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে মানুষের পঞ্চায়েত গড়তে হবে। এখন আবাস যোজনা নিয়ে রাজ্যের গ্রামে গ্রামে মানুষের বিক্ষোভ চলছে। এতো তৃণমুলের দুর্নীতি আর দুষ্কৃতীরাজের অর্থনীতির ফসল। 


এদিনের সমাবেশে দেবলীনা হেমব্রম বলেন, আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে সব বুথে প্রার্থী দেবে বামপন্থীরা। ভোট লুট করতে এলে বুথের বাইরে জবাব পাবে। অধিকার রক্ষায় জান কবুল করেই ভোটের ময়দানে থাকবে বামপন্থীরা। এবার জনগণের পঞ্চায়েত গড়েই রাজ্য থেকে বিজেপি ও তৃণমূলকে অপসারণের কাজ শুরু হবে।
সমাবেশে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার বলেন, পঞ্চায়েত ভোট যত এগিয়ে আসছে তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। ওরা এখন চোরাবালিতে ডুবছে। সারা দেশ দেখছে ওদের নেতা-মন্ত্রীরা কেউ জেলে আর কেউ বেলে আছে। আর বাকি নেতারা জেলে যাবার প্রহর গুণছে।
এদিনের সমাবেশের শুরুতে সিপিআই(এম) কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় বলেন, তৃণমূল দলটা এখন চোরেদের দলে পরিণত হয়েছে। জেলার নাগরিকরা পোস্টার সাঁটাচ্ছে, লিফলেট ছড়াচ্ছে দলের প্রাক্তন সভাপতি, বর্তমান সভাপতির নামে। উঠেছে কাটমানির নামে কোটি কোটি টাকা তোলার অভিযোগ। দলের প্রাক্তন মন্ত্রীদের নামেও পোস্টার পড়ছে। তৃণমূল আর বিজেপি-র ধান্দার রাজনীতির বিরুদ্ধে বামপন্থীদের আরও মজবুত করার ডাক দেন তিনি।

Comments :0

Login to leave a comment