Rahul Gandhi

সংসদে ফিরলেন রাহুল, আজ অনাস্থা নিয়ে তিনিই প্রথম বক্তা?

জাতীয়

 নানা টালবাহানা করেও আটকানো গেল না, রাহুল গান্ধীর  সাংসদ পদ ফেরাতেই হলো। প্রায় সাড়ে চার মাস পর সোমবার আবার সংসদে প্রবেশ করলেন তিনি। লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরুর আগের দিনই রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ায় বিরোধীরা দ্বিগুণ উৎসাহে সরকারপক্ষের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বেন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বিরোধীপক্ষের অন্যতম প্রধান বক্তা হিসাবে তিনি অনাস্থা প্রস্তাবে অংশ নেবেন বলেই ধারণা। এমনকি তিনিই বিরোধীদের হয়ে আলোচনা শুরু করতে পারেন, এমন কথাও শোনা যাচ্ছে।
গত শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে আনা ফৌজদারি মানহানি মামলায় স্থগিতাদেশ জারির পর থেকেই কেরালার ওয়েনাড়ের সাংসদের হৃত মর্যাদা ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দূর হয়েছিল। তা সত্ত্বেও সংসদ ‘ছুটির’ অছিলায় রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ ফেরানো নিয়ে টালবাহানা চলেছে দু’দিন ধরে। শেষে এদিন লোকসভার সচিবালয় থেকে তাঁকে সাংসদ পদ ফেরানোর বার্তা দেওয়া হয়। সেই বার্তা পেয়েই সংসদে হাজির হয়ে প্রথমে গান্ধীজীর মূর্তিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে সভাকক্ষে প্রবেশ করেন। তবে এদিন তিনি প্রবেশের পর লোকসভার অধিবেশন বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। সরকার এবং বিরোধীপক্ষের বাদানুবাদে কয়েক মিনিটের মধ্যেই মুলতবি হয়ে যায়।
লোকসভার ভেতরে রাহুল গান্ধীকে তাঁর মা সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে থাকতে দেখা যায়। তবে এদিন তিনি সংসদ চত্ত্বরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে উৎসবের চেহারা নেয়। কংগ্রেস সহ বিরোধী সাংসদরা তাঁকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান। বাইরে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা মিষ্টি বিলি করে স্লোগান দিতে থাকেন। এআইসিসি’র সদর দপ্তরের সামনেও আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠেন কংগ্রেস কর্মীরা। তাঁরা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ ফেরত পাওয়াকে উদ্‌যাপন করেন এদিন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে একে ‘স্বাগত পদক্ষেপ’ বলে জানান যে, এর ফলে দেশবাসী স্বস্তি পেলেন বিশেষ করে ওয়েনাড়ের মানুষ। টুইট করে তিনি বলেছেন, ‘আর যতটুকু সময় বাকি আছে ততদিন বিরোধী নেতাদের নিশানা করে গণতন্ত্র ধ্বংস করার চাইতে বিজেপি এবং মোদী সরকারের উচিত প্রকৃতভাবে প্রশাসন চালানো।’ কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী তাঁর দাদার সংসদে ফিরে আসার বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘সংসদে মানুষের জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনার কন্ঠ ফের ফিরে এলো।’ কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুগোপাল মনে করেন, ‘গণতন্ত্রের জয় হলো। জিতল ইন্ডিয়া।’ কংগ্রেসের তরফে এও বলা হয়েছে, অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় দলের প্রধান বক্তা হবেন রাহুল গান্ধীই।
সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ায় রাহুল গান্ধীকে অভিনন্দন জানান বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। রাহুল গান্ধীর প্রসঙ্গ টেনে সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ সিং যাদব বলেছেন, ‘আশা করবো এরপর আজম খান এবং তাঁর ছেলে আবদুল্লা আজমেরও হারানো পদ ফেরানো হবে।’ রাহুল গান্ধীর ফিরে আসাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স প্রধান ফারুক আবদুল্লা। পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির প্রতিক্রিয়া, ‘রাহুল গান্ধীর সিংহের গর্জন আবার শুনতে চাই সংসদে।’ শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী) মনে করে, ‘রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ ফেরানোর ঘটনা উন্মোচিত করে দিয়েছে বিজেপি’র রাজনৈতিক প্রতিহিংসাকে।’
সাংসদ পদ চলে যাওয়ার পর রাহুল গান্ধী তাঁর টুইটার হ্যান্ডেল-এ কটাক্ষ করে লিখেছিলেন যে, ‘ডিস-কোয়ালিফাইড এমপি’। কিন্তু আবার তিনি এদিন থেকে লিখছেন, ‘মেম্বার অব পার্লামেন্ট।’ এদিন এআইসিসি দপ্তরে হরিয়ানা কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকের পর রাহুল গান্ধী বাইরে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘দেখে অবাক লাগছে আজ আপনারাও বেশ খুশি।’’
তবে রাহুল গান্ধী সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই খুশি নয় বিজেপি। দলের সাংসদ সুশীল মোদী বলেছেন, ‘রাহুল গান্ধী মোটেই দোষ-মুক্ত হননি। সুপ্রিম কোর্টে শুধু স্থগিতাদেশ পেয়েছেন। মামলা এখনও ঝুলে রয়েছে গুজরাট হাইকোর্টে। এর অপেক্ষায় রয়েছি। তিনি মোটেই বেকসুর মুক্তি পাননি এখনও।’
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে কর্নাটকের এক জনসভায় ‘সব মোদী কীভাবে চোর হয়’ বলে মন্তব্য করেছিলেন রাহুল গান্ধী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জড়িয়ে ফৌজদারি মানহানির মামলা দায়ের করেন বিজেপি’র পূর্ণেশ মোদী। সুরাটের ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং গুজরাট হাইকোর্টের রায় কংগ্রেস নেতার বিপক্ষে গেলে গত ১৫ জুলাই তিনি সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্ট। আবেদনে তিনি বলেছিলেন, ‘ওই রায়ে স্থগিতাদেশ জারি করা না হলে বাক্‌ স্বাধীনতায় টুঁটি চেপে ধরা হবে।’ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টেই স্বস্তি মিলল তাঁর। শুধু তাই নয়, সুরাটের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায়ের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গত ২৪ মার্চ রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ করে দেন লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। তাঁকে সরকারি বাসভবন ছাড়ারও নির্দেশ দেওয়া হলে তিনি ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যান। এখন তিনি সরকারি বাসভবন ফিরে পাবেন কীনা সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাহুল গান্ধী আবেদন করলে ফিরে পাবেন সরকারি বাসভবন।
 

Comments :0

Login to leave a comment