RAT HOLE MINERS CHEQUE

অবহেলারই সমান, সুড়ঙ্গে জান বাঁচানো শ্রমিকরা ভাঙাবেন না চেক

জাতীয়

হাতে মাত্র ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী। পুষ্কর সিং ধামির দেওয়া চেক জমা করবেন না সুড়ঙ্গ খননকারীরা। যাঁরা জীবন হাতে করে উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ কেটেছিলেন। সতের দিন বন্দি থাকার পর বাইরে বেরতে পেরেছিলেন ৪১ শ্রমিক। প্রবল বিব্রত কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকারের মুখ রেখেছিলেন তাঁরাই। 
হাতে সরু সুড়ঙ্গ কাটতে পারেন, পরিভাষায় ‘র্যা ট হোল মাইনার’, ঘটা করে তাঁদের সম্বর্ধনা দেওয়ার ঘোষণা করেছিল উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকার। গত বৃহস্পতিবার সেই অনুষ্ঠানে ধামি তাঁদের হাতে ধরিয়ে দেন ৫০ হাজার টাকা করে চেক। অসন্তোষ সেদিনই জানিয়েছিলেন সুড়ঙ্গ খননকারীরা। 
সুড়ঙ্গ খুঁড়েছিল যে দলটি তার নেতৃত্বে ছিলেন ভাকিল হাসান। শনিবার তিনি বলেছেন, ‘‘বিপজ্জনক অবস্থা ছিল। সুড়ঙ্গ কেটে বার করে আনার জন্য সব যন্ত্র বিকল হয়ে পড়েছিল। আমরা ধস কেটেছিলাম প্রাণ হাতে করে। মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাব প্রশংসাজনক। কিন্তু আমাদের কাজের জন্য যথেষ্ট নয় একেবারেই।’’
১২ নভেম্বর ভোরে উত্তরকাশীর সিলকিওয়ারা সুড়ঙ্গে নামে ধস। কেন্দ্রীয় সরকারের চারধাম প্রকল্পের অংশ এই সুড়ঙ্গ। হিমালয়ের বুকে এমন সুড়ঙ্গ এবং ভারী পরিকাঠামো তৈরির প্রকল্পে গোড়া থেকে সন্দিহান পরিবেশবিদ এবং প্রযুক্তিবিদদের অনেকেই। সুড়ঙ্গে ঢোকার মুখের কাছে ধসে আটকে যান ৪১ শ্রমিক। কংক্রিটের চাঙড়, মাটিতে আটকে যায় রাস্তা। সারা দেশে প্রশ্নের মুখে ছিল কেন্দ্র এবং রাজ্যে বিজেপি’র দুই সরকার।
যন্ত্র দিয়ে ধসের অনেকটা সরানো হলেও ধসের প্রায় পনের মিটার দৈর্ঘের কাজ বাকি ছিল। বিকল হয়ে পড়ে আধুনিক যন্ত্র। তখন যোগাযোগ করা হয়েছিল ১২ জনের এই দলটির সঙ্গে। যাঁরা হাতে সরু সুড়ঙ্গ কাটতে পটু। আড়াই ফুট চওড়া পাইপের মধ্যে শুয়ে কাটতে হয়েছিল সুড়ঙ্গ। যে কোনও সময় বিপদের আশঙ্কা ছিল।
হাসান এদিন বলেছেন, ‘‘আমাদের অসন্তোষ জানিয়েছি মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবারই। আমরা কোনও পাকা চাকরি করি না। পাকা চাকরি দেওয়া উচিত আমাদের। অথবা পাকা ঘর দেওয়া হোক।’’
অনিশ্চিত এবং অস্থির জীবন এই মুক্তিদাতাদের। কাজের স্থায়িত্ব চান। তাঁদের মধ্যে মুন্না আনসারি প্রথম পৌঁছেছিলেন আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে। তিনি বলেছেন, ‘‘মৃত্যুর মুখে থেকে কাজ করেছি আমরা। আমাদের পরিবার বারণ করেছিল, শুনিনি। কারণে জান বাঁচানোর কাজ ছিল। তারপর মাত্র ৫০ হাজার টাকা। পাকা চাকরি বা অন্তত পাকা বাড়ি অন্তত দেওয়া উচিত ছিল।’’
মুন্না নিজেই থাকেন আট ফুট বাই দশ ফুটের একটি ঘরে, পুরো পরিবারসমেত। এঁরাও শ্রমিক, সবচেয়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। নিয়মিত কাজ বা রোজগার কোনোটাই নেই। ৪১ শ্রমিককে বের করে আনার পর দেশবাসীর নায়ক হয়ে উঠেছিলেন ওঁরাই।

Comments :0

Login to leave a comment