redemonitization

সাত বছরে উলট-পুরাণ, বাতিল দু’হাজারের নোট

জাতীয়

আবার চমক। তবে তিনি দেশে নেই! তাই রাত আটটায় তাঁকে এবার আর দেখা গেল না ‘জাতির উদ্দেশে ভাষণ’ দিতে। বরং, শুক্রবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)’কে দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হলো ২ হাজার টাকার নোট তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত। মানে, গোলাপি নোট আর থাকছে না। কালো টাকা হটানোর নামে দামামা বাজিয়ে ৫০০, ১০০০’র নোট বাতিল করে ২০০০টাকার গোলাপি নোট ঘটা করে প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কালো টাকা, দুর্নীতি কোনও কিছু থেকেই যদিও এই সাত বছরে মুক্তি পায়নি ভারত। বরং সেদিন ঘটা করে প্রকাশ করা গোলাপি নোটই এদিন বাতিল করা হলো, খানিকটা নিচু স্বরে। ২০১৬-র নোটবাতিল নিয়ে বিরোধীদের বক্তব্যকেই যেন সিলমোহর দেওয়া হলো আজকের আরবিআই বিজ্ঞপ্তিতে।  
রাতারাতি নোট বাতিল করে গোটা ‘জাতিকে’ এবার যদিও আর ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড় করাচ্ছেন না নরেন্দ্র মোদী। আরবিআই’র ঘোষণা মতো, ব্যাঙ্কগুলিকে অবিলম্বে ২ হাজার টাকার নোট ব্যবহার বন্ধের পরামর্শ দেওয়া হলেও আপাতত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই নোট ‘লিগাল টেন্ডারই’ থাকছে। বলা হয়েছে, ২ হাজার টাকার নোট থাকলে, তা ২৩ মে থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাঙ্কে জমা করতে হবে।
আচমকা এই নোট বাতিলে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ‘এটা নোটবন্দি নয়’ সাফাই দিতে মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপি। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা, ভবিষ্যতে ডামাডোলের শঙ্কায় সমালোচনা পিছু ছাড়ছে না মোদী সরকারের। সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, কার্যত এ হলো ২০১৬’র নোটবন্দিকে উলটে দেওয়া। ভারতে কালো টাকা, দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদীদের অর্থের জোগান দেওয়ার মতো সমস্যা মোকাবিলা এবং দেশ ডিজিটাল অর্থনীতিকে তুলে ধরার নামে ২০১৬-এ মোদী সেই বিমুদ্রাকরণ বিপর্যয় নামিয়ে আনা হয়েছিল দেশের ঘাড়ে। এবার সেটাই উলটে দেওয়া হলো। ইয়েচুরি বলেছেন, ‘সব দিক দিয়ে এটা সরকারের একটা হতাশাজনক ব্যর্থতা’। তিনি বলেছেন, ‘এবার প্রমাণ হলে গেল, আমরা সেসময় যা বলেছিলাম তা যথার্থই বলেছিলাম’। 
কংগ্রেসও প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে বলেছে, আরবিআই’র এই ঘোষণা একেবারেই ‘আমাদের স্বঘোষিত বিশ্বগুরুর প্রতিরূপ’। আর ওঁর পদ্ধতিটাই হলো, ‘প্রথমে করে ফেল, তারপর ভাবো’ – ‘ফার্স্ট অ্যাক্ট, সেকেন্ড থিঙ্ক’। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ এক টুইটে একথা বলে বলেছেন, ২০১৬ সালে ৮ নভেম্বর একতরফাভাবে বিপর্যয়কারী এক ‘তুঘলকি ফরমানের’ পরে এত ধুমধাম করে চালু করা ২০০০টাকার নোট এখন প্রত্যাহার করা হচ্ছে! কংগ্রেসের আরেক সাংসদ মানিকম ঠাকুর টুইট করেছেন, ‘দ্বিতীয় নোটবাতিল বিপর্যয় শুরু হলো...এম = ম্যাডনেস (পাগলামি)’।  
আরবিআই’র তরফে জানানো হয়েছে, ২০১৬ সালে নোট বাতিলের সময় ৫০০ এবং ১ হাজার টাকার নোট বাতিল করা হয়েছিল। সেই সময় নোটের ঘাটতি পূরণ করতে বাজারে ২ হাজার টাকার নোট আনা হয়েছিল। পরে ২০১৮-১৯ সালে ২ হাজার টাকার নোট ছাপানো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আরবিআই জানিয়েছে,বাজারে যত সংখ্যক ২ হাজার টাকার নোট রয়েছে, ২০১৭ সালের মার্চ মাসের আগে এর প্রায় ৮৯ শতাংশ ছাড়া হয়েছিল। বাজারে যে পরিমাণ ২ হাজারের নোট লেনদেন হচ্ছিল, তার পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমেছে। ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ যেখানে এর পরিমাণ ছিল ৬.৭৩ লক্ষ কোটি টাকা, ২০২৩ সালের ৩১ মার্চে তা কমে দাঁড়ায় ৩.৬২ লক্ষ কোটি টাকা। আরবিআই’র দাবি, ২ হাজার টাকার নোটের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমেছে। 
নোট তুলে নেওয়া হলেও আরবিআই জনসাধারণের জন্য ২৩ মে থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাঙ্ক থেকে ২হাজারের নোট বদলানোর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে একবারে ২০ হাজারপর্যন্ত নোট বদলানো যাবে। আর ব্যাঙ্কিং করেসপন্ডেন্টের মাধ্যমে কোনও অ্যাকাউন্ট হোল্ডার দিনে ৪ হাজার টাকা বদলাতে পারেন। আরবিআই সূত্রে দাবি, এবার আর তেমন ডামাডোল হবে না। এর পরও যদিও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, তাহলে এত ঘটা করে সাত বছরের নোট বাতিলের কী দরকার ছিল।
 

Comments :0

Login to leave a comment